ভারতের লোকসভা ভোটের মাঠ সমান ও সমতল রাখার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। তাই দিলিস্নর মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টির (আপ) নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তারের পর সেই কমিশনের সঙ্গে শুক্রবার বৈঠক করেছেন বিরোধী জোট 'ইনডিয়া'র প্রতিনিধিরা। বৈঠকের পর তারা জানান, এই ঘটনায় কমিশনের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন তারা। কারণ, ভোটের আগে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোকে ব্যবহার করে আসলে বিরোধীদের কোণঠাসা করতে চাইছে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার। তথ্যসূত্র : এবিপি নিউজ, এনডিটিভি
দেশটির কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা 'এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট' (ইডি) কেজরিওয়ালকে 'মদ নীতি কেলেঙ্কারি'র অভিযোগে শুক্রবার রাতে গ্রেপ্তার করে। আবগারি দুর্নীতি মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আপ-প্রধান কেজরিওয়ালকে ৯ বার সমন পাঠিয়েছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। কিন্তু তিনি হাজিরা দেননি। এরপরই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তার বাড়িতে গিয়ে কয়েক ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদের পর কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করে ইডি।
এরপর শুক্রবার কেজরিকে গ্রেপ্তার এবং বিরোধীদের হেনস্তা প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনে যায় 'ইনডিয়া' জোটের প্রতিনিধি দল। তৃণমূলের দু'জন প্রতিনিধিও ছিলেন সেই দলে। বৈঠকের পর বেরিয়ে কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, 'এখানে প্রায় সব কটি বিরোধী দলের প্রতিনিধি রয়েছেন। গত রাতে যা হয়েছে (কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তার), তা নিয়ে আমরা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এটি কোনো ব্যক্তি বা দলের বিষয় নয়, সংবিধানের সাধারণ কাঠামোর বিষয়। নির্বাচনের জন্য সমান, সমতল মাঠ প্রয়োজন। কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন দল এজেন্সির অপব্যবহার করে সেই সমতল মাঠটির ক্ষতি করছে। এতে অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন, সর্বোপরি গণতন্ত্রের ওপর প্রভাব পড়ছে।'
সিঙ্ঘভি আরও বলেন, 'ভোটের আগে মাঠ সমতল করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কমিশনকে। তাই এই ব্যাপারে আমরা কমিশনের হস্তক্ষেপ চেয়েছি। স্বাধীন ভারতের ৭৫ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম কোনো জনগণ-নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীকে পদে থাকাকালীন গ্রেপ্তার করা হলো। লোকসভায় সবচেয়ে বড় বিরোধী দলের (কংগ্রেস) অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করে দেওয়া হয়েছে। বিরোধী দলের নেতাদের বিরুদ্ধে কী ভাবে কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলোকে ব্যবহার করা হচ্ছে, আমরা তার প্রমাণও দিয়েছি কমিশনকে।'
উলেস্নখ্য, আবগারি 'দুর্নীতি' মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এর আগে তাকে আট বার সমন পাঠানো হয়েছিল। বৃহস্পতিবার ছিল নবম সমনের দিন। কিন্তু কেন্দ্রীয় সংস্থার কাছে হাজিরা না দিয়ে কেজরিওয়াল গিয়েছিলেন দিলিস্ন হাইকোর্টে। সেখানে রক্ষাকবচের আবেদন জানিয়েছিলেন। তা খারিজ হওয়ার পর রাতেই কেজরির বাড়িতে পৌঁছে যায় ইডি। ঘণ্টা দুয়েক তলস্নাশির পর কেজরিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার দল আম আদমি পার্টি (আপ) জানিয়েছে, কেজরি পদত্যাগ করছেন না। দেশের ইতিহাসে তিনিই প্রথম মুখ্যমন্ত্রী, যিনি পদে থাকাকালীন গ্রেপ্তার হলেন।
কেজরিকে গ্রেপ্তারের পর থেকেই ভারতের বিরোধী দলগুলো একে একে প্রতিবাদ জানাতে শুরু করে। কেজরিওয়ালের গ্রেপ্তার ঘিরে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এক্স-এ লিখেছেন, 'শাহেনশাহ ভয় পেয়ে গেছেন। তিনি একটা মৃত গণতন্ত্র চান। মিডিয়াসহ সব সংস্থাকে কবজা করার পর, দলগুলোকে ভাঙা হচ্ছে, প্রধান বিরোধী দলের অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করা হচ্ছে। তারপরেও অসুর-শক্তি থামেনি। এখন তারা নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রীদের গ্রেপ্তার করছে।' শুক্রবার সকালে 'এক্স' (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে পোস্ট করেন মমতাও। কেজরিকে গ্রেপ্তারের নিন্দা করে তিনি মোদি সরকারের নীতির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। ওই পোস্টেই মমতা দাবি করেন, আদর্শ আচরণবিধি চলাকালীন বিরোধী দলের মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেপ্তার করিয়ে জনমানসে প্রভাব ফেলতে চাইছে বিজেপি।