পবিত্র রমজান মাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুসলমানরা যখন পরিবারের স্বজনদের সঙ্গে রোজা পালন করছেন, সে সময় ইসরাইলি বাহিনীর বোমা-গোলার আঘাতে প্রাণ হারাচ্ছেন গাজা উপত্যকায় বসবাসরত ফিলিস্তিনিরা। বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রমজানের প্রথম ১০ দিন অর্থাৎ ১১ মার্চ ভোর থেকে ২১ মার্চ সন্ধ্যা পর্যন্ত উপত্যকায় ইসরাইলি বাহিনীর অভিযানে নিহত হয়েছেন ৮৭৬ জন ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছেন আরও এক হাজার ৪২৮ জন। আর আহত হয়েছেন আরও কয়েক হাজার। এদিকে, আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি বিস্নংকেন যখন তেল আবিব সফর করছেন, ঠিক তার আগে (শুক্রবার সকাল) গাজার গাজা সিটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। এতে কমপক্ষে ১০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা, এএফপি, রয়টার্স
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, হাসপাতাল থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে নিহতের ১০ দিনের নিহতে এই তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। তাই নিহত ও আহতের প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে। হতাহতদের মধ্যে কতজন বেসামরিক এবং কতজন হামাস যোদ্ধা- তা এখনো স্পষ্ট নয়। রমজানের প্রথম ১০ দিনে দৈনিক হিসাবে গাজায় সবচেয়ে বেশি নিহত ও আহতের ঘটনা ঘটেছে গত গত ১৪ মার্চ। ওইদিন ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় গাজায় মোট নিহত হয়েছেন ১৪৯ জন এবং আহত হন ৩০০ জন।
এদিকে, ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) দাবি, রমজানের দ্বিতীয় সপ্তাহে গাজার আল শিফা হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে ৯০ জন 'সন্ত্রাসীকে' হত্যা করেছে ইসরাইলি সেনারা। তবে রমজানের প্রথম ১০ দিনে হতাহত ফিলিস্তিনিদের যে পরিসংখ্যান উপত্যকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় পেশ করেছে তাতে আল-শিফা অভিযানে নিহতদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
বৃহস্পতিবার পৃথক এক বিবৃতিতে আইডিএফ জানিয়েছে, রমজানের গত ১০ দিনে গাজায় অভিযান চালানোর সময় নিহত হয়েছে তিন ইসরাইলি সেনা এবং আহত হয়েছে আরও ২২ জন। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গত ৭ অক্টোবর গাজায় হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত নিহত হয়েছে ২৫১ জন ইসরাইলি সেনা এবং আহত হয়েছে এক হাজার ৪৯৬ জন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণায়ের তথ্য অনুযায়ী, ইসরাইলি বাহিনীর অভিযানের শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত উপত্যকায় নিহত হয়েছেন মোট ৩১ হাজার ৯৮৮ জন ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছেন আরও ৭৪ হাজার ১৮৮ জন।
রাফাহতে ইসরাইলের হামলা চালানো
ভুল হবে : বিস্নংকেন
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ শহরে ব্যাপক স্থল হামলা চালিয়ে ভুল করবে ইসরাইল। মধ্যপ্রাচ্য সফরের সময় বৃহস্পতিবার মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সামেহ শউকরির সঙ্গে কায়রোয় এক সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি বিস্নংকেন এ কথা বলেন। এ সময় তিনি বলেন, হামাসকে পরাজিত করার জন্য সেখানে হামলা চালানো 'অপ্রয়োজনীয়'। বিস্নংকেনের এমন বক্তব্য আমেরিকার এবং ইসরাইলের মধ্যকার সম্পর্কের তিক্ততাকেই যেন নির্দেশ করছে।
অক্টোবরে গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে বুধবার সৌদি আরবে অবতরণের মধ্য দিয়ে ষষ্ঠ দফায় মধ্যপ্রাচ্য সফর শুরু করেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি বিস্নংকেন। রিয়াদে তিনি সৌদি আরবের 'ডি-ফ্যাক্টো' নেতা যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে বৈঠক করেন। এরপর বৃহস্পতিবার কায়রোয় বৈঠক করেন মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির সঙ্গে। সেখানে শীর্ষ আরব কূটনীতিকদের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি এবং গাজার সংঘাত-পরবর্তী ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনার করেছেন। আলোচনায় হামাসের হাতে পণবন্দি ইসরাইলিদের মুক্তির বিনিময়ে 'অবিলম্বে একটি টেকসই যুদ্ধবিরতি'র প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরেন তিনি।
উলেস্নখ্য, ইসরাইলি পণবন্দিদের মুক্তি ও গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়ে বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের একটি খসড়া প্রস্তাব দিয়েছে আমেরিকা। এ বিষয়ে বিস্নংকেন বলেন, 'আমরা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রস্তাব পেশ করেছি। এই প্রস্তাবের মাধ্যমে ইসরাইলি পণবন্দিদের মুক্তি ও অবিলম্বে গাজায় যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানানো হয়েছে। এই প্রস্তাব নিয়ে শুক্রবার জাতিসংঘে আলোচনা শুরু হলে প্রস্তাবের ওপর ভেটো দেয় রাশিয়া।
আমেরিকার আনা প্রস্তাবে প্রায় ছয় সপ্তাহ স্থায়ী 'টেকসই যুদ্ধবিরতির' আহ্বান জানানো হয়েছে। এটি বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষা করবে এবং মানবিক সহায়তা প্রদানের অনুমতি দেবে বলে জানানো হয়েছে। প্রস্তাবের পক্ষে ভোট পড়েছে ১১টি। আর বিপক্ষে ভোট দিয়েছে রাশিয়া, চীন ও আলজেরিয়া এবং ভোট দানে বিরত ছিল গায়ানা। জাতিসংঘে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া বলেছেন, প্রস্তাবটিতে অত্যন্ত রাজনীতিকরণ এবং রাফাহতে ইসরাইলের সামরিক অভিযান চালানোর জন্য একটি কার্যকর সবুজ সংকেত রয়েছে। তিনি বলেছেন, মার্কিন খসড়া প্রস্তাবে 'ইসরাইলের জন্য রাফাহতে সামরিক অভিযান চালানোর জন্য একটি কার্যকর সবুজ সংকেত রয়েছে।'