গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন
মার্কিন হুঁশিয়ারি উপেক্ষা : রাফাহতে হামলা চালাল ইসরাইল
পৃথক দুই হামলায় নিহত ২০,ইসরাইল যদি কোনো গ্রহণযোগ্য পরিকল্পনা না দেয়, তাহলে রাফাহ অভিযান সমর্থন করবে না
প্রকাশ | ২০ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
আমেরিকার হুঁশিয়ারি উপেক্ষা করে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার শেষ নিরাপদস্থল রাফাহ শহরে আবারও হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। মঙ্গলবার ভোরে রাফাহতে চালানো বিমান হামলায় ১৪ জন নিহত ও অনেকে আহত হন। অন্যদিকে, মধ্য গাজার আল-নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরের একটি অংশে পৃথক বিমান হামলায় আরও ছয়জন প্রাণ হারিয়েছেন। উভয় ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অনেকে। তথ্যসূত্র : এএফপি, আল-জাজিরা
রাফাহ শহর ছাড়াও গাজা সিটি থেকে প্রায় ১৪ কিলোমিটার দক্ষিণে মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহ শহরেও বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। সেখানকার শরণার্থী শিবিরে অবস্থানরত বাসিন্দারা দাবি করেছেন, সোমবার রাতে বজ্রপাতের সঙ্গে তারা বিস্ফোরণের শব্দও শুনতে পেয়েছেন। শাবান আবদেল-রউফ নামক এক বাসিন্দা বলেছেন, 'আমরা এখন বজ্রপাত ও বোমা হামলার শব্দের মধ্যে পার্থক্য করতে পারছি না। আগে আমরা বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করতাম। বৃষ্টি হতে দেরি হলে আলস্নাহর কাছে প্রার্থনা করতাম। অথচ এখন আমরা বৃষ্টি না হওয়ার জন্য প্রার্থনা করি, কারণ বাস্তুচু্যত মানুষ নিদারুণ দুর্দশার মধ্যে রয়েছে।'
রাফাহ শহরে হামলার পরিকল্পনা ও সেনাদের অনুমতি দেওয়ার কথা আগেই জানিয়েছিল নেতানিয়াহু প্রশাসন। তবে ইসরাইলের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপত্তি তোলে আমেরিকা। সোমবার ফোনালাপের সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নেতানিয়াহুকে সাফ জানিয়ে দেন, রাফাহতে বড় ধরনের হামলা চালানো 'গুরুতর ভুল' হবে। পরে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রাফাহ শহরে ইসরাইলের আক্রমণের পরিকল্পনা ও সম্ভাব্য 'বিকল্প পদ্ধতি' নিয়ে আলোচনার জন্য নেতানিয়াহুকে তার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের একটি দলকে আমেরিকায় পাঠানোর অনুরোধ করা হয়েছে। ?কিন্তু এর আগেই শহরটিতে হামলা চালাল নেতানিয়াহুর সেনারা।
এ বিষয়ে সোমবার হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা-বিষয়ক উপদেষ্টা জ্যাক সালিভান বলেন, জো বাইডেন রাফাহতে ইসরাইলের বড় ধরনের সামরিক অভিযান পরিচালনার সম্ভাবনা নিয়ে খুবই গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এমনিতেই চলমান হামলা গাজায় সৃষ্ট মানবিক সংকটকে চরম পর্যায়ে নিয়ে গেছে। এর মধ্যে গাজার শেষ নিরাপদ স্থান রাফাহ শহরে হামলা চালালে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে ও ইসরাইল ক্রমেই আন্তর্জাতিকভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়বে।
এর আগে চলতি বছরের ১৫ ফেব্রম্নয়ারি নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলেন বাইডেন। তখন থেকেই গাজায় চলমান ইসরাইলি আগ্রাসন ও বর্বতার বিরুদ্ধে 'সোচ্চার' হতে দেখা গেছে মার্কিন প্রেসিডেন্টকে। এমনকি, বাইডেন এ পর্যন্ত দাবি করেছেন যে, বর্তমানে গাজার নিরাপদ স্থানগুলোতে হামলা চালিয়ে নেতানিয়াহু ইসরাইলেরই ক্ষতি করছেন।
গত শুক্রবার ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার শেষ নিরাপদস্থল রাফাহতে হামলার অনুমোদন দেন দখলদার ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় এই অনুমোদনের বিরোধিতা করে আমেরিকা। সে সময় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি বিস্নংকেন বলেছিলেন, 'ইসরাইল যদি রাফাহতে কোনো ধরনের সামরিক অভিযান চালাতে চায়, তাহলে সেটির একটি সুস্পষ্ট পরিকল্পনা আমাদের দেখাতে হবে।'
হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সালিভান বলেন, উভয় পক্ষ নিজের দৃষ্টিভঙ্গি অন্য পক্ষের কাছে পরিষ্কার করে দিতে চাইছে। তবে দুই পক্ষের মধ্যে আগের চেয়ে দূরত্ব বেড়েছে বলে স্বীকার করেছে হোয়াইট হাউস। সালিভান বলেন, আগামী দিনগুলোতে আলোচনা হবে এবং সেখানে সামরিক বাহিনী, গোয়েন্দা এবং মানবিক সাহায্য বিশেষজ্ঞরা জড়িত থাকবেন।
সালিভান বলেন, রাফাহ অভিযান নিয়ে প্রশ্ন তোলা আর হামাসকে পরাস্ত করা নিয়ে প্রশ্ন তোলা একই জিনিস; এই ভ্রান্ত ধারণা প্রেসিডেন্ট আগে প্রত্যাখ্যান করেছেন, আজকেও প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেন, 'এটা একেবারেই বাজে কথা। আমাদের অবস্থান হচ্ছে, হামাসকে রাফাহতে বা অন্য কোথাও নিরাপদ আশ্রয় দেওয়া যাবে না, কিন্তু সেখানে বড় মাপের স্থল অভিযান চালানো ভুল হবে। এর ফলে আরও অনেক নিরীহ মানুষ মারা যাবে, মানবিক পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে, গাজায় নৈরাজ্য আরও প্রকট হবে এবং বিশ্ব দরবারে ইসরাইল আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে।'
মার্কিন সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠ ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা চাক শুমার গাজায় যুদ্ধ পরিচালনা নিয়ে নেতানিয়াহুর তীব্র সমালোচনা এবং ইসরাইলে নতুন নির্বাচনের আহ্বান জানানোর পর, ওয়াশিংটনে বিরোধী রিপাবলিকান নেতারা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। রিপাবলিকানরা শুমারের সমালোচনা করেন এই বলে যে, তিনি একটি ঘনিষ্ঠ মিত্রদের নির্বাচনী রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ না করার ব্যাপারে অলিখিত নিয়ম ভঙ্গ করেছেন। এরপরই বাইডেন ও নেতানিয়াহুর মধ্যে কথাবার্তা হয়।
বাইডেন প্রশাসন হুঁশিয়ার করে দিয়েছে, নিরীহ ফিলিস্তিনিদের নিরাপত্তার ব্যাপারে ইসরাইল যদি কোনো গ্রহণযোগ্য পরিকল্পনা না দেয়, তাহলে তারা রাফাহতে কোনো অভিযান সমর্থন করবেন না। হোয়াইট হাউস কর্মকর্তারা বলছেন, ইসরাইল এখনো সে রকম কোনো পরিকল্পনা দেয়নি।
এদিকে, শুধু আমেরিকা নয়, বিশ্বের অধিকাংশ দেশ বলেছে, রাফাহতে হামলা চালালে তার পরিণতি খুব একটা ভালো হবে না। কারণ, ৮০ শতাংশ ধ্বংস হয়ে যাওয়া গাজা উপত্যকার একমাত্র নিরাপদ স্থান এখন রাফাহ শহর। গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরাইল-হামাস সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে অন্তত ১৩ লাখ মানুষ রাফাহতে আশ্রয় নিয়েছেন।