আমেরিকা নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর সঙ্গে রাশিয়ার সরাসরি সংঘাত বাঁধলে তা পৃথিবীকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রান্তে নিয়ে যাবে বলে পশ্চিমাদের সতর্ক করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিন। তবে অধিকাংশ মানুষ এমন পরিণতি কামনা করে না বলে মন্তব্য করেছেন তিনি। তথ্যসূত্র : রয়টার্স
টানা দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালাচ্ছে রাশিয়া। দীর্ঘসময় পেরিয়ে গেলেও পূর্ব ইউরোপের এই দেশটিতে রুশ অভিযান বন্ধের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না এবং এ পরিস্থিতিতে সামরিক জোট ন্যাটোর সঙ্গে রাশিয়ার সংঘাতের শঙ্কাও অনেকে প্রকাশ করছেন। এ অবস্থায় পশ্চিমাদের হুংকার দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। তিনি সতর্ক করে বলেছেন, রাশিয়া-ন্যাটো সংঘর্ষ হলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে মাত্র এক ধাপ দূরে থাকবে বিশ্ব।
ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান ১৯৬২ সালের কিউবান ক্ষেপণাস্ত্র সংকটের পর থেকে পশ্চিমের সঙ্গে মস্কোর সম্পর্কের গভীরতম সংকটের সূচনা করেছে। এরপর থেকে পুতিন প্রায়ই পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক করে এসেছেন। যদিও তিনি বলেছেন, তিনি কখনোই ইউক্রেনে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের প্রয়োজন অনুভব করেননি। এ ছাড়া পুতিন বেশ কয়েকবার সতর্ক করে বলেছেন, পশ্চিমারা ইউক্রেনে যুদ্ধের জন্য সেনা পাঠালে সেটি পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকি তৈরি করবে।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ গত মাসে বলেছিলেন, তিনি ভবিষ্যতে ইউক্রেনে স্থলসেনা মোতায়েনের বিষয়টি উড়িয়ে দিতে পারছেন না। ম্যাখোঁর এই বক্তব্য থেকে অনেক পশ্চিমা দেশই নিজেদের দূরে সরিয়ে রেখেছে। তবে অন্যরা বিশেষ করে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো ফরাসি প্রেসিডেন্টের কথার প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেছে।
ম্যাখোঁর মন্তব্য এবং রাশিয়া ও ন্যাটোর মধ্যে সংঘর্ষের ঝুঁকি ও সম্ভাবনা সম্পর্কে চাইলে প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, 'আধুনিক বিশ্বে সবকিছুই সম্ভব।'
গত ১৫-১৭ মার্চ রাশিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এতে ছয় বছরের মেয়াদের জন্য পুনরায় পুতিনই নির্বাচিত হয়েছেন। এবারের নির্বাচনে প্রায় ৮৮ শতাংশ ভোট পড়েছে তার পক্ষে।
সোভিয়েত-পরবর্তী রাশিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জয়ের পর পুতিন সাংবাদিকদের বলেন, 'এটা সবার কাছে পরিষ্কার, এটি (রাশিয়া-ন্যাটো সংঘর্ষ) হবে এমন কিছু, যা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে একধাপ দূরে। আমার মনে হয় খুব কমই কেউ এতে আগ্রহী হবে।' পুতিন আরও বলেন, ন্যাটোর সামরিক কর্মীরা এরই মধ্যেই ইউক্রেনে উপস্থিত রয়েছে। যুদ্ধক্ষেত্রে ইংরেজি ও ফরাসি উভয় ভাষাতেই কথা বলা হচ্ছে বলে রাশিয়া দেখতে পেয়েছে। তিনি বলেন, 'এতে ভালো কিছু নেই, প্রথমত তাদের জন্য, কারণ তারা সেখানে প্রচুর সংখ্যায় মারা যাচ্ছে।'
রাশিয়ায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে থেকেই দেশটিতে আক্রমণ বৃদ্ধি করে ইউক্রেন, রাশিয়ার সীমান্ত অঞ্চলগুলোয় গোলাবর্ষণ করে, আর ইউক্রেন সমর্থিতরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে রাশিয়ায় ঢুকে পড়ার চেষ্টা করে। এ পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের খারকিভ অঞ্চল নিয়ন্ত্রণে নেওয়া প্রয়োজন মনে করছেন কিনা, এমন প্রশ্নে পুতিন বলেন, যদি এসব হামলা চলতে থাকে তাহলে নিজেদের অঞ্চলগুলো রক্ষার জন্য ইউক্রেনের আরও অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে রাশিয়া একটি 'বাফার জোন' তৈরি করতে পারে। বিদেশে তৈরি করা অস্ত্রগুলো যেন এ ধরনের বাফার জোন পেরিয়ে রাশিয়ার অঞ্চলগুলোয় পৌঁছতে না পারে সে রকম বড় করেই সেটি তৈরি করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি।