বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
আবারও রাফাহ থেকে ফিলিস্তিনিদের তাড়ানোর কথা বলল ইসরাইল

আল-শিফা হাসপাতালে রাতভর অভিযান ইসরাইলের

যাযাদি ডেস্ক
  ১৯ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিরা একমুঠো খাবার পাওয়ার আশায় ভিড় করেছেন জাতিসংঘের একটি গুদামের সামনে। ছবিটি সোমবার গাজা সিটি থেকে তোলা -রয়টার্স অনলাইন

ফিলিস্তিনের গাজার আল-শিফা হাসপাতালে রোববার রাতভর অভিযান চালিয়েছে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। হাসপাতাল প্রাঙ্গণে ট্যাংক প্রবেশ এবং ভারী অস্ত্রের গোলাগুলির আওয়াজ পাওয়া গেছে। আইডিএফ-এর একজন মুখপাত্র সাংবাদিকদের জানান, আইডিএফ হাসপাতালের 'নির্দিষ্ট কিছু অংশে নির্ভুল অভিযান পরিচালনা করছে'। 'হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতারা আল-শিফা হাসপাতালের ভেতর পুনরায় একত্রিত হয়ে সেখানে বসে হামলার পরিকল্পনা ও পরিচালনা করছে' বলে অভিযোগ আইডিএফ-এর। তথ্যসূত্র : বিবিসি আইডিএফ-এর অভিযানের সময় গাজার হাসপাতালটির ভেতর যে আতঙ্কের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল, তা বর্ণনা করেছেন কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী। এক ব্যক্তি তার ভাইকে ফোনে সেখানকার পরিস্থিতি বর্ণনা করেন। ওই ফোনকলটি রেকর্ড করা হয় এবং সেটি হোয়াটসঅ্যাপের একটি গ্রম্নপে পোস্ট করা হয়। বিবিসি ফোনকলটি শুনেছে। ওই ব্যক্তি বলেন, 'আমাদের চারপাশে ট্যাংক ঘুরছে। আমরা তাঁবুর ভেতর লুকিয়ে আছি। আমরা কম্পাউন্ডের চারপাশে ট্যাংক থেকে গোলা বর্ষণের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি।' সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু ভিডিও ফুটেজ ঘুরে বেড়াচ্ছে। যেগুলোতে ভারী অস্ত্রের গোলাগুলির আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। সাংবাদিকদের কাছে পাঠানো আরেকটি ভয়েজ মেসেজে হাসপাতালের ভেতর থেকে মুহাম্মদ আল-সাইদ নামে একজনকে বলতে শোনা যায়, 'ইসরাইলি সেনারা এখানে হাসপাতাল প্রাঙ্গণের ভেতরে। যেখানে মৃত আর আহতরা পড়ে আছে এবং সেনারা কয়েকজন তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে। এখানে নারকীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।' আল-শিফায় নতুন করে এই অভিযান পরিকল্পনার বিষয়ে আইডিএফ আগে থেকে কোনো আভাস দেয়নি। সোমবার প্রথম প্রহরের দিকে পোস্ট করা একটি অভিও বার্তায় আইডিএফ-এর প্রধান মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হ্যাগারি বলেন, ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী 'বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে হাসপাতালে অভিযান চালাচ্ছে। ওই গোয়েন্দা তথ্যে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। অভিযান চলাকালে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের নিজস্ব কার্যক্রম চালাতে পারবে বলেও জানান তিনি। বলেন, রোগী বা চিকিৎসাকর্মীদের সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে না। তবে তিনি এটাও বলেছেন, হাসপাতাল প্রাঙ্গণে আশ্রয় নেওয়া ব্যক্তিরা যদি সেখান থেকে চলে যেতে চান, তবে তারা 'ইভাকুয়েশন রুট' দিয়ে চলে যেতে পাবেন। তিনি 'হামাস সদস্যদের দ্রম্নত অত্মসমর্পণ' করার আহ্বান জানিয়েছেন। এদিকে, এভাবে হঠাৎ করে হাসপাতালে অভিযান চালানোর বিষয়টিকে 'আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন' বলে বর্ণনা করেছে গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলের হামলা শুরু হওয়ার আগে গাজার সবচেয়ে বড় ও আধুনিক হাসপাতাল ছিল আল-শিফা। যুদ্ধের পাঁচ মাসে একাধিকবার ইসরাইল এই হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা করেছে। সেখানে এখন কোনোমতে জরুরি কিছু চিকিৎসা কার্যক্রম চলছে। আবারও রাফাহ থেকে ফিলিস্তিনিদের তাড়ানোর কথা বলল ইসরাইল এদিকে, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজার রাফায় স্থল হামলা চালানোর সিদ্ধান্তের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, রাফাহ সীমান্ত দিয়ে এবার সাধারণ মানুষকে গাজার বাইরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হবে। গাজা-মিসরের সীমান্ত পয়েন্ট রাফাহতে লাখ লাখ বাস্তুচু্যত ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়েছেন। অনেকদিন ধরে সেখানে অভিযান চালানোর পরিকল্পনা করছে ইসরাইল। সেখানে থাকা প্রায় ১০ লাখ মানুষকে তাড়িয়ে দিতে চায় তারা। তবে মিসর আগেই জানিয়েছে, গাজার সাধারণ মানুষ ও উদ্বাস্তুদের তারা কোনোভাবেই গ্রহণ করবে না। গাজায় ইসরাইল হামলা চালানোর পর প্রথম রাফাহ সীমান্ত খোলা হয়েছিল। ওই সীমান্ত দিয়েই গাজায় ত্রাণ এবং মানবিক সাহায্য পাঠানো হচ্ছিল। কিন্তু রাফাহ সীমান্ত দিয়ে আশ্রয় নেওয়া মানুষকে গাজা ছাড়তে দেয়নি মিসর। গাজার দক্ষিণে অবস্থিত রাফাহ। গাজা উপত্যকায় ইসরাইল হামলা শুরু করার পর প্রথমে আক্রমণ চালানো হয়েছিল উত্তরে। সে সময় বেসামরিক মানুষকে দক্ষিণে যাওয়ার কথা বলা হয়েছিল। গত সপ্তাহে নেতানিয়াহু গাজার দক্ষিণে অভিযান চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন। আর রোববার নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, বেসামরিক মানুষের উপস্থিতিতে সেখানে অভিযান চালানো হবে না। রাফাহ থেকে সাধারণ মানুষকে অন্যত্র যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে। তারা যাওয়ার পরেই অভিযান শুরু হবে। কিন্তু রাফাহতে ইসরাইলের এই অভিযানের বিরুদ্ধে সতর্কতা জানিয়েছে জাতিসংঘ, জার্মানি ও নেদারল্যান্ডস। আমেরিকাও ইসরাইলকে সতর্ক করেছে।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে