ভোট হবে সাত দফায়
লোকসভা ভোটের দিনক্ষণ ঘোষণা ভারতের নির্বাচন কমিশনের
ভোটগ্রহণ শুরু ১৯ এপ্রিল, ফল ঘোষণা ৪ জুন : শনিবার থেকেই আচরণবিধি কার্যকর
প্রকাশ | ১৭ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
ভারতের জাতীয় তথা ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হয়েছে। এবারের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে সাত ধাপে। আগামী ১৯ এপ্রিল থেকে শুরু হবে নির্বাচন। আর ভোট গণনা শুরু হবে ৪ জুন। শনিবার দুপুরে নির্বাচনের তারিখ ও আচরণবিধি ঘোষণা করেন ভারতের প্রধান (মুখ্য) নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার। গত লোকসভা ভোটের থেকে ছয় দিন পর ঘোষণা হলো এবারের তারিখ। তথ্যসূত্র : এবিপি নিউজ, এনডিটিভি
নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা পর থেকেই কার্যকর হয়ে গেল আচরণবিধি। অর্থাৎ, গোটা দেশের আইনশৃঙ্খলার ভার চলে গেল নির্বাচন কমিশনের হাতে। ইডি-সিবিআইয়ের মতো কেন্দ্রীয় এজেন্সির নিয়ন্ত্রণও ভোটপ্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত চলে যাবে কমিশনের হাতে। কেন্দ্রের বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকার আর কোনো জনকল্যাণমুখী প্রকল্প ঘোষণা করতে পারবে না।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাজীব কুমার জানান, সাত দফায় ভারতের ৫৪৩ আসনে লোকসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিন ২৫ এপ্রিল। তা যাচাই-বাছাই হবে ২৬ এপ্রিল। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন ২৯ এপ্রিল। ১৯ এপ্রিল প্রথম দফার ভোট।
রাজীব জানান, প্রথম দফায় ২১ রাজ্যে ভোট হবে। দ্বিতীয় দফার ভোট হবে ২৬ এপ্রিল। তৃতীয় দফার ভোট হবে ৭ মে। চতুর্থ দফার ভোট হবে ১৩ মে। পঞ্চম দফার ভোট হবে ২০ মে। ষষ্ঠ দফার ভোট হবে ২৫ মে। সপ্তম দফার ভোট হবে ১ জুন। আর ৪ জুন হবে ভোটগণনা।
সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সবরকম বন্দোবস্ত করছে নির্বাচন কমিশন। রাজীব কুমার জানিয়েছেন, ভোটে যতদূর সম্ভব, কেন্দ্রীয় বাহিনী ব্যবহার করা হবে। মোট ২১০০ পর্যবেক্ষক নিয়োগ করা হচ্ছে। তারাই বাহিনী নিয়োগ করবেন। কোনো রাজ্যেই কোনো চুক্তিভিত্তিক কর্মীকে ভোটের কাজে ব্যবহার করা যাবে না। সোশ্যাল মিডিয়া, টেলিভিশনে নজর রাখা হবে। সংবাদমাধ্যমকেও কড়া নির্দেশ দিয়েছে জাতীয় নির্বাচন কমিশন। নির্বাচন নিয়ে ভুল তথ্য প্রচার করা যাবে না। 'ফেক নিউজ' তৈরি করা যাবে না। কোনো বিজ্ঞাপন হলে, তা জানিয়ে দিতে হবে। অনিয়মের অভিযোগ পেলে অ্যাপের মাধ্যমে ১০০ মিনিটের মধ্যে সমাধান করা হবে। রাজ্যের হাতে সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট ডিলিট করার ক্ষমতা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে কোনোভাবে শিশুদের ব্যবহার করা যাবে না। প্রত্যেক তারকা প্রচারণায় নামলে তাকেও নির্বাচন কমিশনের গাইডলাইনের নোটিশ দিতে হবে। ইসু্যভিত্তিক প্রচার হোক, কিন্তু ঘৃণামূলক মন্তব্য, ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে আক্রমণ করা চলবে না। ৫৩৭ দলকে এবারের নির্বাচন থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। তারা প্রার্থী দাঁড় করিয়ে দিত। অন্য দলের গাড়ি ব্যবহার করত। এমন দলকে এবার নির্বাচন থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। আর্থিক লেনদেনের ডিজিটাল রেকর্ড থাকবে কমিশনের কাছে। বিনামূল্যে কোনো উপহার দেওয়া চলবে না। টাকা, মদ, শাড়ি, প্রেসার কুকারের মতো জিনিস দিয়ে ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করলেই কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হবে। জিএসটির মাধ্যমে নজর রাখা হবে, যে কোনো পণ্যের হঠাৎ চাহিদা বাড়ছে কিনা। বিমানবন্দরে কড়া নজরদারি চালানো হবে। যে রাজ্যে হেলিকপ্টার অবতরণ করে, সেখানেও চেকিং হবে। রেল ও সড়কপথেও কড়া নজরদারি চালানো হবে। নির্বাচনে সহিংসতার কোনো জায়গা নেই। লোকসভা নির্বাচনে যেন রক্তগঙ্গা না বয়, তা নিয়ে কড়া সতর্কবার্তা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের। অভিযোগ পেলেই কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলা শাসকদের। প্রার্থীর অপরাধের ইতিহাস বা ক্রিমিনাল ব্যাকগ্রাউন্ড থাকলে, তাকে তিনবার সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে। রাজনৈতিক দলকেও জানাতে হবে, কেন অপরাধের ইতিহাস থাকা কাউকে প্রার্থী করা হলো, অন্য কেউ কেন প্রার্থী হলেন না।
এবারের লোকসভা নির্বাচনে দেশের ৯৭ কোটি ভোটার ভোট দেবেন। এবার নারী ভোটার বৃদ্ধি পেয়েছে ৯৭ শতাংশ। ১২টি রাজ্যে পুরুষ ভোটারের তুলনায় নারী ভোটারের সংখ্যা বেশি। এই মুহূর্তে দেশে প্রায় ৯৬ কোটি ৮০ লাখ ভোটার রয়েছেন। নতুন ভোটার প্রায় এক কোটি ৮০ লাখ। যুব ভোটারের (২০-২৯ বছর বয়সি) সংখ্যা ১৯.৭৪ কোটি। এবার ৮৫ বছরের বেশি বয়সি ভোটারের সংখ্যা ৮২ লাখ। মোট পুরুষ ভোটার ৪৯ কোটি ৭০ লাখ। চলতি বছর নারী ভোটার ৪৭ কোটি ১০ লাখ। তৃতীয় লিঙ্গ বা ট্রান্সজেন্ডার ভোটারের সংখ্যা প্রায় ৪৮ হাজার। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ১০ লাখ। চলতি বছর নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হবে ৫৫ লাখ। প্রধান নির্বাচন কমিশনার জানান, বিহার, গুজরাট, মহারাষ্ট্র, পশ্চিমবঙ্গ, কর্ণাটক, তামিলনাড়ুতে উপনির্বাচন হবে। লোকসভার সঙ্গেই সেই উপনির্বাচন হবে। সিকিম, ওড়িশা, অরুণাচল প্রদেশ, অন্ধ্রপ্রদেশ- চার রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন হবে লোকসভার সঙ্গে।