বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
আবারও হামলা : ২৯ জন নিহত

ইসরাইলের টার্গেট ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনি

যুদ্ধবিরতির নতুন প্রস্তাব পেশ করেছে হামাস, বৈঠকে ইসরাইলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা শান্তির পথে বড় বাধা নেতানিয়াহু বললেন মার্কিন সিনেট নেতা
যাযাদি ডেস্ক
  ১৬ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
ইসরাইলের টার্গেট ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনি

হামাস নিধনের নামে ইসরাইল এখন টার্গেট করেছে ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের। তারই অংশ হিসেবে অবরুদ্ধ গাজা ভূখন্ডে ত্রাণের অপেক্ষায় থাকা ফিলিস্তিনিদের ভিড়ে আবারও নির্বিচার হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী। এতে নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ২৯ জন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার প্রথম ঘটনায় গাজার মধ্যাংশের আল-নুসেইরাত শিবিরের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে ইসরাইলের বিমান হামলায় আটজন নিহত হন। পরে গাজার উত্তরাংশের একটি গোলচত্বরে ত্রাণবাহী ট্রাকবহরের জন্য অপেক্ষা করে থাকা ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলি বাহিনীর নির্বিচার গুলিবর্ষণে অন্তত ২১ জন নিহত ও ১৫০ জনের বেশি আহত হন। তবে এক বিবৃতিতে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী ত্রাণ কেন্দ্রগুলোতে হামলার কথা অস্বীকার করে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনগুলোকে 'মিথ্যা' বলে দাবি করেছে। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা, এএফপি, রয়টার্স

পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে চলা ইসরাইলি হামলায় গাজা ভূখন্ড প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, নিহত হয়েছেন ৩১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি আর আহত ৭১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। ঘরবাড়ি হারিয়ে গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দার প্রায় সবাই উদ্বাস্তু হয়ে গেছেন।

কঠোর অবরোধ ও অবিরাম হামলার মধ্যে থাকা গাজাবাসী অনাহারে ভুগতে ভুগতে দুর্ভিক্ষের প্রান্তে চলে গেছেন। এরই মধ্যে অপুষ্টি ও পানিশূন্যতায় শিশুসহ অনেকের মৃতু্য হয়েছে। ক্ষুধায় বেপরোয়া হয়ে ওঠা লোকজন ত্রাণের জন্য হাহাকার করছেন। ত্রাণবাহী ট্রাক দেখলেই ঝাঁপিয়ে পড়ছেন, ত্রাণের জন্য হুড়োহুড়ি করছেন। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ২৯ ফেব্রম্নয়ারি গাজা সিটির কাছে ত্রাণ বিতরণের জন্য অপেক্ষারতদের ভিড়ের ওপর ইসরাইলি বাহিনীর গুলিতে শতাধিক ফিলিস্তিনি নিহত হন। তবে এই ঘটনার জন্য ইসরাইল ত্রাণের জন্য বেপরোয়া লোকজনের হুড়োহুড়িকে দায়ী করে বলে, নিহতদের অনেকে পদদলিত হয়ে অথবা ত্রাণবাহী ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে নিহত হয়েছে। অথচ নিহত বেশিরভাগের শরীরেই গুলির আঘাত রয়েছে।

যুদ্ধবিরতির নতুন প্রস্তাব পেশ হামাসের

গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির নতুন একটি প্রস্তাব পেশ করেছে উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাস। প্রস্তাবটির খসড়া অনুলিপি এরই মধ্যে ইসরাইলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা এবং যুদ্ধের তিন মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার, মিসর এবং মার্কিন সরকারের কাছে পাঠানোও হয়েছে। শুক্রবার নতুন এই প্রস্তাব দেয় হামাস।

নতুন প্রস্তাবে হামাস বলেছে, ইসরাইলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা যদি গাজায় ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে এবং ইসরাইলের বিভিন্ন কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মধ্যে থেকে ৭০০ থেকে এক হাজার জনকে মুক্তি দেয়, তাহলে নিজেদের কব্জায় থাকা জিম্মিদের মধ্যে থেকে নারী, শিশু, বয়স্ক ও অসুস্থদের ছেড়ে দেবে। আরও বলা হয়েছে, যদি এই যুদ্ধবিরতি সফল হয়, তাহলে উভয়পক্ষ স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আলোচনা শুরু করবে।

হামাসের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে

বৈঠকে ইসরাইলের মন্ত্রিসভা

এদিকে, হামাসের দেওয়া নতুন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে বৈঠকে বসছে ইসরাইলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা।

হামাস নতুন প্রস্তাব দেওয়ার পর ইসরাইলি জিম্মিদের পরিবারের সদস্যরা আন্দোলন শুরু করেছেন। তারা মন্ত্রিসভাকে চাপ দিচ্ছে প্রস্তাবটিতে রাজি হতে। জিম্মিদের পরিবার বলছে, প্রিয়জনদের ফিরে পাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের সামনে নতুন আরেকটি সুযোগ এসেছে। আর এ সুযোগটি কাজে লাগানোর দাবি জানাচ্ছেন তারা।

ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর দপ্তর বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর আরও জানিয়েছে, বৈঠকটি শুক্রবারই হওয়ার কথা এবং এটি একটু বড় হবে। তবে দিনের কোন্‌ সময় বৈঠকটি হওয়ার কথা তা উলেস্নখ করা হয়নি।

শান্তির পথে বড় বাধা নেতানিয়াহু

বললেন মার্কিন সিনেট নেতা

আমেরিকার পার্লামেন্ট কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা চাক শুমার ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে শান্তির পথে বড় বাধা বলে উলেস্নখ করেছেন। সেই সঙ্গে ইসরাইলের জনগণকে নতুন নেতা বেছে নেওয়ার পরামর্শও দিয়েছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার ওয়াশিংটনে মার্কিন পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিলে এক সংবাদ সম্মেলনে চাক শুমার বলেন, 'মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি স্থাপনে বড় বাধার নাম বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তার নেতৃত্বাধীন সরকারও ইসরাইলের জনগণের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।' তিনি বলেন, 'তবে গণতন্ত্রে সবসময় জনগণের হাতে নিজেদের নেতা বেছে নেওয়ার সুযোগ থাকে। আগামী নির্বাচনে ইসরাইলের জনগণ তাদের দেশের জন্য অন্য কোনো নেতা নেবেন কি নেবেন না- তা একান্তভাবেই তাদের ওপর নির্ভর করছে। তবে যেটি গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো তাদের হাতে সুযোগ রয়েছে।'

আমেরিকার যে কয়েকজন ইহুদি ধর্মাবলম্বী নেতা দেশটির বিভিন্ন কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন, তাদের মধ্যে চাক শুমার অন্যতম। তিনি একই সঙ্গে মার্কিন ইহুদি সম্প্রদায় ও সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ দল ডেমেক্রেটিক পার্টিরও একজন জ্যেষ্ঠ ও প্রভাবশালী নেতা। নিজ বক্তব্যে শুমার আরও বলেন, ইসরাইলের সরকার যদি দ্বিরাষ্ট্র সমাধান প্রত্যাখ্যান করে, সেটি হবে বড় একটি ভুল এবং সেই ভুলের জন্য মাশুল গুনতে হবে সাধারণ ইহুদিদের।

এদিকে, চাক শুমারের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক দল লিকুদ পার্টির এক মুখপাত্র জানিয়েছেন, ইসরাইল কোনো 'বানানা রিপাবলিক' নয় এবং দেশের অভ্যন্তরে নেতানিয়াহুর ব্যাপক সমর্থন রয়েছে। তিনি বলেন, 'নেতানিয়াহু একজন নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী এবং তার মন্ত্রিসভার সব সদস্যও তাই। ইসরাইলের জনগণ হামাসের বিরুদ্ধে পূর্ণ বিজয় চায়। আমরা আশা করব, সিনেট নেতা শুমার ইসরাইলের নির্বাচিত সরকারের প্রতি সম্মান জানাবেন।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে