ত্রাণের বন্যা বাইয়ে দেওয়ার 'গালভরা বুলি' ঝাড়ার দিনে আবারও গাজায় ত্রাণবাহী ট্রাকের অপেক্ষায় থাকা বাসিন্দাদের ভিড়ে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী গুলি ছুড়েছে। তাদের ছোড়া গুলিতে অন্তত ছয় ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এদের মধ্যে একজন জাতিসংঘ কর্মীও রয়েেেছন। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও কয়েক ডজন মানুষ। বৃহস্পতিবার গাজা উপত্যকার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে। গাজার স্থানীয় বাসিন্দা ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলেছেন, বুধবার সন্ধ্যায় উত্তর গাজায় কুয়েত চত্বরে ফিলিস্তিনিরা ত্রাণসামগ্রী সংগ্রহের জন্য জড়ো হয়েছিলেন। এ সময় ফিলিস্তিনিদের ভিড় লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করায় হতাহতের এই ঘটনা ঘটে। এ বিষয়ে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেয়নি। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা, রয়টার্স, এএফপি, বিবিসি
গাজা উপত্যকায় পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে হামাসের সঙ্গে লড়াই করছে ইসরাইল। এই যুদ্ধে ৩১ হাজারের বেশি মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর নির্বিচার হামলায় ২৪ লাখ বাসিন্দার গাজা উপত্যকায় ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় তৈরি হয়েছে। অর্ধাহার-অনাহারে লাখ লাখ মানুষ দিনাতিপাত করছেন। গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর অব্যাহত হামলা থেকে বাঁচতে উপত্যকার দক্ষিণের রাফাহ শহরে বর্তমানে প্রায় ১৫ লাখ মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। আর এই শহরটিতে ইসরাইল স্থল অভিযান চালাতে পারে বলে জানিয়েছে। তবে রাফাহ শহরে ইসরাইলি বাহিনীর অভিযানের বিরোধিতা করেছে আমেরিকা।
গত ২৯ ফেব্রম্নয়ারি ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ জানায়, গাজা শহরের কাছের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে অপেক্ষায় থাকা শতাধিক ফিলিস্তিনিকে গুলি চালিয়ে হত্যা করে ইসরাইলি বাহিনী। প্রাণহানির ওই ঘটনায় ত্রাণবাহী ট্রাককে ঘিরে থাকা ফিলিস্তিনিদের ভিড়কে দায়ী করে ইসরাইল বলেছিল, ভুক্তভোগীরা পদদলিত অথবা গাড়িচাপায় নিহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, উপত্যকাজুড়ে ইসরাইলি সামরিক হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৯ ফিলিস্তিনি নিহত ও ১১০ জন আহত হয়েছেন। ষষ্ঠ মাসে পৌঁছানো এই আগ্রাসনে গাজার এক-তৃতীয়াংশ, অর্থাৎ অন্তত ৫ লাখ ৭৬ হাজার মানুষ দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে রয়েছেন।
গাজায় 'ত্রাণের বন্যা' বইয়ে দেবে ইসরাইল!
এদিকে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ইসরাইল জানিয়েছে, তারা বিভিন্ন প্রবেশপথ দিয়ে দুর্ভিক্ষের মুখে থাকা অবরুদ্ধ গাজায় মানবিক 'ত্রাণের বন্যা' বইয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে।
তিন দিক থেকে ইসরাইলের ঘেরের মধ্যে থাকা গাজায় কোনো সরবরাহ প্রবেশ করতে দিচ্ছে না ইসরাইলি বাহিনী। একপাশে মিসরের সঙ্গে গাজার সীমান্ত থাকলেও সেই রাফাহ ক্রসিংও নিয়ন্ত্রণ করছে ইসরাইলি বাহিনী। এই অবস্থায় গাজার বাসিন্দারা দুর্ভিক্ষের প্রান্তে আছে বলে সতর্ক করেছে আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলো। তারা বলছে, দ্রম্নত খাদ্য সহায়তা বাড়ানো না গেলে গাজার বহু মানুষ অনাহারে মারা যাবে। এরই মধ্যে অপুষ্টি ও পানিশূন্যতায় শিশুসহ বেশ কিছু মানুষের মৃতু্য হয়েছে। ভূখন্ডটিতে পর্যাপ্ত ত্রাণ প্রবেশ করতে না দেওয়ার জন্য ত্রাণ সংস্থাগুলো ইসরাইলকে দোষারোপ করেছে।
এরপর চাপের মুখে গাজায় 'ত্রাণের বন্যা' বইয়ে দেওয়ার কথা বলল ইসরাইল। কিন্তু ইসরাইল বলছে, গাজায় কী পরিমাণ ত্রাণ যাবে, তার কোনো সীমা নির্ধারণ করেনি তারা। ত্রাণ সংস্থাগুলোই সরবরাহ পাঠাতে দেরি করছে বলে উল্টো অভিযোগ করেছে তারা। কিন্তু এমন দাবি করলেও আরও বেশি কিছু করার জন্য ঘনিষ্ঠ মিত্র আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অন্যদের বাড়তে থাকা চাপের মুখে পড়েছে তারা।
এ পরিস্থিতিতে বুধবার দেশটির সামরিক বাহিনীর শীর্ষ মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল দানিয়েল হ্যাগারি একদল বিদেশি সাংবাদিককে বলেন, 'আমরা ওই এলাকাটি ভাসিয়ে দিতে চেষ্টা করছি, মানবিক ত্রাণ দিয়ে ভাসিয়ে দেব।'
এ দিন সকালে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী জানায়, বিশ্ব খাদ্য সংস্থার ছয়টি ত্রাণবাহী ট্রাক নিরাপত্তা বেষ্টনীর ৯৬তম গেট দিয়ে গাজা ভূখন্ডের উত্তরাংশে প্রবেশ করেছে। গাজার এই অংশটিতেই ক্ষুধার সংকট সবচেয়ে তীব্র। হ্যাগারি জানান, এ ধরনের আরও ত্রাণবহর যাবে এবং অন্য পয়েন্টগুলো দিয়ে আরও সরবরাহ প্রবেশ করবে, পাশাপাশি বিমান থেকে ত্রাণের প্যাকেজ ফেলা ও সাগরপথে জাহাজ ভর্তি ত্রাণ আসাও চলতে থাকবে।
তবে গাজায় ত্রাণ প্রবেশ করা সংকট সমাধানের একটি অংশ মাত্র বলে জানান তিনি। কীভাবে এসব ত্রাণ সবার মধ্যে সুষ্ঠু ও কার্যকরভাবে বিতরণ করা যাবে, তা সংকট সমাধানের আরেকটি অংশ বলে স্বীকার করেন তিনি।
গাজা ভূখন্ডে ত্রাণ সরবরাহের আরও প্রবেশপথ খুলে দেওয়ার জন্য আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ অন্য বিশ্ব শক্তিগুলো ইসরাইলের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। এরই মধ্যে আমেরিকাসহ অন্য কয়েকটি দেশ বিমানযোগে গাজায় ত্রাণ ফেলা শুরু করেছে। সমুদ্রপথে গাজায় ত্রাণ পাঠানোর জন্য আমেরিকা গাজা উপকূলে একটি অস্থায়ী ডক নির্মাণও শুরু করেছে।