সব দেশে একই অবস্থায় নেই তারা। তবে যেখানেই আছেন, আছেন একটাই দাবি নিয়ে- দ্বি-রাষ্ট্র নীতিতে হতে হবে ফিলিস্তিন সংকটের সমাধান। বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নেওয়া সব ফিলিস্তিনি অবশ্য শরণার্থী শিবিরে নেই, তাই সবাইকে শরণার্থী বলাও সমীচীন নয়। ফিলিস্তিনিদের জন্য জাতিসংঘের ত্রাণ সহায়তা সংস্থার (ইউএনআরডাবিস্নউএ) সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী জর্ডান, লেবানন, সিরিয়া, গাজা উপত্যকা, পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেমের ৫৮টি শরণার্থী শিবিরে মোট ৫৯ লাখ ফিলিস্তিনি রয়েছেন।
লেবাননে ফিলিস্তিনিদের জীবন
ইউএনআরডাবিস্নউএ'র তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই মাসে লেবাননে মোট আড়াই লাখ ফিলিস্তিনি ছিলেন। তবে ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক গবেষক কেলি পেটিলো মনে করেন, প্রকৃত সংখ্যাটা পাঁচ লাখের মতো। গত প্রায় ১০০ বছরে একবারও আদমশুমারি না হওয়ায় লেবাননে জনসংখ্যা নিরূপণ করা দুষ্কর।
অথচ রাজনৈতিক কারণে সেখানে আদমশুমারির প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা কঠিন। লেবাননে এর নানাবিধ গুরুত্ব লক্ষ করা যায়। মধ্যপ্রাচ্যের এই ভূখন্ডে প্রধানমন্ত্রী হন কোনো সুন্নি মুসলমান, প্রেসিডেন্ট হন কোনো খ্রিষ্টান আর স্পিকারকে হতে হয় শিয়া মুসলমান।
লেবাননে ফিলিস্তিনিরা কেমন আছেন? ইউএনআরডাবিস্নউএ'র এক পরিসংখ্যান বলছে, সেখানে বসবাসরত শতকরা ৮০ ভাগ ফিলিস্তিনি শরণার্থীই দারিদ্র্যসীমার অনেক নিচে বাস করেন। অবস্থার উন্নতির জন্য যোগ্যতা অনুসারে তারা শত চেষ্টাতেও চাকরি পান না। লেবাননে ফিলিস্তিনি সম্পত্তি কেনার অধিকারও নেই শরণার্থীদের।
জর্ডানে ফিলিস্তিনিদের অবস্থা
মধ্যপ্রাচ্যে শুধু জর্ডানেই ফিলিস্তিনিদের নাগরিক হওয়ার অধিকার আছে। কেলি পেটিলো বলেন, 'জর্ডানের অর্ধেকেরও বেশি মানুষ ফিলিস্তিনি বংশোদ্ভূত। রানি রানিয়ার পূর্ব-পুরুষরাও ফিলিস্তিনি ছিলেন।'
তবে জর্ডানের অন্তত ২৩ লাখ ফিলিস্তিনি এখনো শরণার্থী। এবং সে দেশের সরকারের আর কোনো শরণার্থী নেওয়ার ইচ্ছে নেই। জর্ডানের বাদশাহ আবদুলস্নাহ হামাস আর ইসরাইলের সাম্প্রতিক যুদ্ধ শুরুর পর জানিয়ে দিয়েছেন, তার দেশ আর শরণার্থী গ্রহণ করবে না।
মিসরে ফিলিস্তিনিদের অনিশ্চিত জীবন
কেলি পেটিলোর মতে, 'মিসরের ফিলিস্তিনিরা সবচেয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন। বড় রকমের আইনি জটিলতার মধ্যে আছেন তারা।' মিসরে বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা জানাতে গিয়ে ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক গবেষক বলেন, 'মিসর ইউএনআরডাবিস্নউএ'র সদস্য দেশ নয়। ফিলিস্তিনিদের বিষয়ে যেসব পরিসংখ্যান পাওয়া যায়, সেখানে সংখ্যাটা ৭০ হাজার থেকে এক লাখ ৩৪ হাজারের মধ্যে উলেস্নখ করা হয়।'
মিসরের গাজা উপত্যকা-সংলগ্ন সীমান্ত থাকলেও প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি একাধিকবার বলেছেন, তার দেশ সীমান্তকে কখনো গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের প্রবেশপথ হতে দেবে না।
সিরিয়ায় ফিলিস্তিনিদের সংকট
সিরিয়ায় মোট ১২টি শরণার্থী শিবিরের চার লাখ ৮০ হাজার ফিলিস্তিনিকে ত্রাণ সহায়তা দিয়ে থাকে ইউএনআরডাবিস্নউএ। সিরিয়া যুদ্ধের কারণে তাদের অবস্থা খুবই সঙ্গিন। ইউএনআরডাবিস্নউএ'র ২০২১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সিরিয়ায় বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের ৮২ ভাগই চরম দারিদ্র্যসীমায় বাস করেন। সেখানে আরও বলা হয়, সিরিয়ার এক লাখ ২০ হাজারের মতো ফিলিস্তিনি কোনো প্রতিবেশী দেশে শরণার্থী হয়েছেন।
ইসরাইলেও ফিলিস্তিনি
ফিলিস্তিনের কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান বু্যরোর (পিসিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ১৯৪৮ সালের যুদ্ধের পর এক লাখ ৫৪ হাজার ফিলিস্তিনি ইসরাইলেই থেকে যান। ২০২০ সালে ইসরাইলের কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান বু্যরো জানায়, সেই সংখ্যাটা প্রায় ১০ গুণ বেড়ে ১৫ লাখের মতো হয়েছে। ইসরাইলের জনসংখ্যার ১৭ শতাংশের মতো ফিলিস্তিনি বলেও দাবি করা হয় সেই পরিসংখ্যানে।
ইসরাইলে ফিলিস্তিনিদের পরিচয় অবশ্য সবার কাছে এক রকম নয়। কেউ তাদের বলেন ইসরাইলি আরব, কারও কাছে তারা আবার ইসরাইলের আরবি নাগরিক। মোদ্দা কথা- মধ্যপ্রচ্যের কোথাও ফিলিস্তিরিা ভালো নেই। সবখানেই তাদের তাড়া করে ফিরছে অনিশ্চয়তা। তথ্যসূত্র : ডিডাবিস্নউ নিউজ