জায়নবাদী আগ্রাসন
গাজায় ক্ষুধাকে অস্ত্র করেছে ইসরাইল
ফিলিস্তিনিদের অনাহারে রাখার ইসরাইলি কর্মকান্ড গণহত্যা বিমান থেকে ত্রাণ সহায়তা ফেলা ব্যয়বহুল, কিন্তু কার্যকর নয়
প্রকাশ | ০৯ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বৃহত্তর 'অনাহার অভিযানের' অংশ হিসেবে ইসরাইল গাজার খাদ্য ব্যবস্থা ধ্বংস করছে বলে অভিযোগ করেছেন জাতিসংঘের এক বিশেষজ্ঞ। এ নিয়ে তেমন কিছু না করার জন্য জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থাকে তীব্র ভর্ৎসনা করেছেন তিনি। বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে দেওয়া এক বক্তৃতায় বিশ্ব সংস্থাটির খাদ্য অধিকার বিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদক, লেবাননি বংশোদ্ভূত কানাডীয় আইনের অধ্যাপক মাইকেল ফখরি বলেন, 'গাজায় অনাহারের চিত্রগুলো অসহনীয়, অথচ আপনারা কিছুই করছেন না।' এমনকি ফিলিস্তিনিদের অনাহারে রাখার ইসরাইলি কর্মকান্ডকে 'গণহত্যা' হিসেবেও আখ্যায়িত করেছেন তিনি। তথ্যসূত্র : বিবসি, রয়টার্স, আল-জাজিরা, এএফপি
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখন্ডে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জার পাশাপাশি হামলা হচ্ছে হাসপাতালেও। এতে গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা এরই মধ্যে ভেঙে পড়েছে। এর সঙ্গে অবরুদ্ধ এই ভূখন্ডটিতে দেখা দিয়েছে তীব্র মানবিক সংকট। হাজার হাজার মানুষ কোনো ধরনের আশ্রয় ছাড়াই বসবাস করছে এবং প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম ত্রাণবাহী ট্রাক এ অঞ্চলে প্রবেশ করছে।
'ইউএন হিউম্যান রাইটস কাউন্সিল'র ৫৫তম অধিবেশনে যোগ দিতে জেনেভায় অবস্থান করার সময় মাইকেল ফখরি গাজায় খাদ্য সংকট ও দুর্ভিক্ষ এবং ফিলিস্তিনি জনগণের ওপর ইসরাইলের হামলা সম্পর্কে সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন।
গত বছরের অক্টোবরে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে গাজার ফিলিস্তিনিরা অভূতপূর্ব অনাহারের সম্মুখীন হয়েছে উলেস্নখ করে ফখরি বলেছেন, 'যখন যুদ্ধ শুরু হয়, তখন আমরা দেখেছি, মানুষ অভূতপূর্ব উপায়ে ক্ষুধার্ত থাকছে। এত তাড়াতাড়ি ক্ষুধার্ত হতে আমরা কোনো সম্প্রদায়কে দেখিনি। এখন আমরা যা দেখছি তা হলো দুর্ভিক্ষ। শিশুরা অপুষ্টি এবং পানিশূন্যতায় মারা যাচ্ছে।' তিনি আরও বলেন, 'আধুনিক ইতিহাসে কোনো সংঘাতে শিশুদের এত দ্রম্নত অপুষ্টির শিকার হতে আমরা দেখিনি।'
অপুষ্টির শিকার শিশুদের বিকাশে সমস্যা হবে জানিয়ে ফখরি বলেন, 'আমরা উদ্বিগ্ন ছিলাম, তারা হয়তো স্টান্টিংয়ে (খুবই অল্প পরিমাণে পুষ্টি, বারবার সংক্রমণ এবং অপর্যাপ্ত মনোসামাজিক উদ্দীপনা) আক্রান্ত হতে পারে। যার অর্থ- তারা স্থায়ী ও দীর্ঘমেয়াদিভাবে শারীরিক এবং মানসিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়বে।' তিনি বলেন, 'আমরা শিশুদের অপুষ্টি এবং ডিহাইড্রেশনে (পানিশূন্যতা) মারা যেতে দেখছি, এটি ভয়াবহ অবস্থা।' এ মুহূর্তে মৃতু্যর গতি উলেস্নখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে এবং অব্যাহত রয়েছে জানিয়ে ফখরি বলেন, 'আমি এর চেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি কল্পনা করতে পারি না।'
বিমান থেকে ত্রাণ সহায়তা ফেলা
ব্যয়বহুল, কিন্তু কার্যকর নয়
গাজায় মানবিক সংকট মোকাবিলায় বিভিন্ন দেশ বিমান থেকে প্যারাসুটের মাধ্যমে খাদ্যসহ বিভিন্ন সহায়তা সরঞ্জাম নিচে ফেলছে। এ সম্পর্কে ফখরি বলেছেন, 'সহায়তা সরঞ্জাম এভাবে নিচে ফেলা খুব ব্যয়বহুল। কিন্তু এর বিপরীতে এগুলো খুব একটা কার্যকর নয়। প্রকৃতপক্ষে কখনো কখনো এভাবে সহায়তা দেওয়া প্রচুর বিশৃঙ্খলা ও সমস্যার কারণ হতে পারে। কারণ খাবার বিতরণের কোনো পদ্ধতিগত উপায় ছাড়াই নিচে ফেলা এসব খাবার সর্বত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকে।' তিনি আরও বলেন, 'এ ধরনের ব্যয়বহুল পন্থায় সময় এবং অর্থ ব্যয় করার পরিবর্তে আমি মনে করি আমেরিকা ও অন্য দেশগুলোর অবিলম্বে ইসরাইলের ওপর চাপ প্রয়োগ করে যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করার দিকে মনোনিবেশ করা উচিত, যাতে মানবিক সাহায্য নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হয় এবং একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতিও নিশ্চিত হয়।'
গাজায় অনাহার বাড়তে থাকায় মিসর ও ইরাকসহ বেশকিছু দেশ ইসরাইলের তীব্র সমালোচনা করেছে। অপরদিকে, জাতিসংঘের ইসরাইলি মিশনের আইন উপদেষ্টা ইয়েলা সেট্রিন ফখরির অভিযোগগুলোকে 'নির্জলা মিথ্যা' বলে অভিহিত করেছেন।
উলেস্নখ্য, চারদিক থেকে অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনি ভূখন্ডটিতে পাঁচ মাস ধরে চলা ইসরাইলি আগ্রাসনে ৩০ হাজারের বেশি মানুষ নিহত ও প্রায় ৭০ হাজার ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। অবিরাম বোমা ও গোলা হামলায় ভূখন্ডটি প্রায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ইসরাইলি হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। এ ছাড়া ইসরাইলি আগ্রাসনের কারণে ২০ লাখের বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। ইসরাইল এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।