পাকিস্তানের সামরিক শাসক জিয়া-উল-হকের শাসনামলে হত্যায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে মৃতু্যদন্ড প্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলি ভুট্টোর বিচার প্রক্রিয়া আইন মেনে পরিচালিত হয়নি। বুধবার পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি কাজি ফায়েজ ইসা এক রায়ে এ মন্তব্য করেছেন। প্রধান বিচারপতি বলেছেন, 'যাবতীয় তথ্য-প্রমাণ ও সাক্ষ্য যাচাইয়ের পর সর্বোচ্চ আদালত এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে যে, (জুলফিকার আলি ভুট্টোর) বিচার প্রক্রিয়া সুষ্ঠু ও আইনানুগ ছিল না।' বুধবারের শুনানিতে প্রধান বিচারপতি বলেছেন, রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি শিগগির প্রকাশ করা হবে। তথ্যসূত্র : রয়টার্স
সাবেক প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলি ভুট্টো পাকিস্তানের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) প্রতিষ্ঠাতা। পাকিস্তানের ইতিহাসে প্রথম ও একমাত্র সামরিক প্রশাসক ছিলেন ভুট্টো, যিনি কখনো সামরিক বাহিনীতে চাকরি করেননি। পরে ১৯৭৩ সালে দেশটির প্রধানমন্ত্রী হন তিনি।
১৯৭৭ সালের এপ্রিলে সেনাবাহিনীর তিন তারকা জেনারেল জিয়া-উল-হককে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান হিসেবে মনোনীত করেন তিনি। এই পদে নিয়োগ পাওয়ার মাত্র চার মাসের মাথায় অভু্যত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন জিয়া-উল-হক ও ভুট্টোকে গ্রেপ্তার করেন। গ্রেপ্তারের পর তার বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়। বিচারের নামে দুই বছর কারান্তরীণ রাখার পর ১৯৭৯ সালের ৪ এপ্রিল ফাঁসি দেওয়া হয় ভুট্টোকে।
লাহোর হাইকোর্ট ভুট্টোকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছিলেন। পরে সুপ্রিম কোর্টও সেই আদেশ বহাল রাখে। আদালত মৃতু্যদন্ড দেওয়ার পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একাধিকবার এই দন্ড কার্যকর না করতে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়া-উল-হককে অনুরোধ করেছিলেন, কিন্তু জিয়া সেসব অনুরোধে কর্ণপাত করেননি।
ভুট্টোর প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব এখন দিচ্ছেন তার নাতি বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি। বুধবার প্রধান বিচারপতি রায় ঘোষণার পর তার প্রতিক্রিয়ায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম 'এক্সে' এক পোস্টে বিলাওয়াল বলেন, 'আজ সর্বোচ্চ আদালত যেসব কথা বলেছেন, সেসব শোনার জন্য আমাদের পরিবারের সদস্যরা তিন প্রজন্ম ধরে অপেক্ষা করছে।'
জুলফিকার আলি ভুট্টোর মেয়ে বেনজির ভুট্টোর সাবেক সহকারী এবং বর্তমানে লন্ডনপ্রবাসী রাজনীতি বিশ্লেষক ইউসুফ নজর বলেন, 'আমরা বহু বছর ধরে বলে আসছি যে, বিচারের নামে জুলফিকার আলি ভুট্টোকে হত্যার মাধ্যমে সামরিক শাসক জিয়া-উল-হক পাকিস্তানে ন্যায়বিচারের ভয়াবহ গর্ভপাত ঘটিয়েছিলেন। আজ সুপ্রিম কোর্ট এককভাবে তা মেনে নিয়েছেন। সর্বোচ্চ আদালতকে আমি অভিনন্দন জানাচ্ছি।'
রায় ঘোষণার পর এক বার্তায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ সুপ্রিম কোর্টের প্রশংসা করে বলেছেন, 'কেউই ভুলের ঊর্ধ্বে নয়, আদালতও নয়। আজ থেকে প্রায় ৪০ বছর আগে যে ভুল হয়েছিল, সর্বোচ্চ আদালত তা স্বীকার করেছে এবং এমন ভুল যেন আর না হয়, সে পদক্ষেপ নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। আজকের দিনটি পাকিস্তানের ইতিহাসের একটি স্মরণীয় দিন।'