ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে যুদ্ধে রাশিয়ার দ্রম্নত অগ্রগতিও ঘটছে। ফেব্রম্নয়ারিতে রাশিয়া কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ শহর আভদিভকার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে বেশ কয়েকটি গ্রাম দখল করে ক্রমাগত পশ্চিম দিকে এগোচ্ছে। চাপের মুখেও ইউক্রেনের বাহিনীগুলো 'অবস্থান ধরে রেখেছে, কিন্তু রাশিয়ার সেনারা এখন যুদ্ধক্ষেত্রের এক হাজার ১০০ কিলোমিটার বিস্তৃত সম্মুখভাগের পাঁচটি এলাকা দিয়ে আক্রমণ চালাচ্ছে। এর মধ্যে ইউক্রেনের প্রতিরোধকারী সেনারা দোনেৎস্ক অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি আক্রমণের মুখে পড়ছে। তথ্যসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স
পোকরোভস্ক, কোস্তিনতিনিভকা ও ক্রামাতোর্স্ক শহরের বাসিন্দারা এখন দ্রম্নত অগ্রসর হওয়া রুশ বাহিনীর মুখোমুখি হচ্ছে, কোথাও কোথাও তাদের অধীনে চলে গেছে। অগ্রসরমান রুশ বাহিনী কোস্তিনতিনিভকা থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে থাকলেও শহরটি আসন্ন হুমকির লক্ষণে ছেড়ে গেছে। শহরের প্রায় প্রতিটি সড়কে বোমা বা ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে জর্জরিত অন্তত একটি বাড়ি আছে। ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় শহরের ট্রেন স্টেশনটি ধ্বংস হয়ে গেছে, পাশের গির্জাও ধসে পড়েছে। উদ্বেগ সাবেক সোভিয়েত আমলের শিল্প শহরটির শীতল বাতাস ভরে তুলেছে। রাশিয়া সময় নিয়ে ইউক্রেনের শহরগুলো ধ্বংস করে সেগুলো দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছে।
কোস্তিনতিনিভকার কাছেই একটি উপত্যকায় বেশ কিছু বড় জলাশয় আছে। এই প্রাকৃতিক বাধাগুলো রুশ বাহিনীর অগ্রগতি রোধ করে ইউক্রেনের সেনাদের অবস্থান সংহত রাখবে বলে আশা কিয়েভের। বেশ কিছু এলাকা থেকে তাড়াহুড়া করে বিশৃঙ্খলভাবে পিছিয়ে আসার পর ইউক্রেনের জেনারেলরা ভাবছেন, 'সাময়িকভাবে' কিছু এলাকা ছেড়ে এলেও দীর্ঘ মেয়াদি যুদ্ধে তারা আবার ওইসব অঞ্চল মুক্ত করতে পারবেন।
পুরো যুদ্ধক্ষেত্র জুড়ে কিছু মানুষ আছে, যাদের ইউক্রেনীয়রা গালি দিয়ে 'ঝুদান' বলেন। এই শব্দটার অর্থ 'অপেক্ষমাণ'। রাশিয়ার বাহিনীর জন্য অপেক্ষা করে থাকা রুশপন্থিদের বোঝাতে এই শব্দটা ব্যবহার করেন ইউক্রেনীয়রা।
পুরো ইউক্রেন যুদ্ধকবলিত অঞ্চল হলেও পূর্বাঞ্চলের অন্য চারটি অঞ্চলসহ দোনেৎস্ক হলো যুদ্ধক্ষেত্র। এই অঞ্চলের গভীর বন, বিস্তৃত রুক্ষ ভূখন্ড দিয়ে যুদ্ধ এগিয়ে আসছে দ্রম্নত। এখানে ৪০ কিলোমিটার দূরে থেকেও কামানের ভারী গর্জন শোনা যায় আর এই শব্দ থামার কোনো লক্ষণ নেই।
সম্প্রতি রাশিয়ার দখল করা শহর আভদিভকার দিক থেকে এবং ২০১৪ সাল থেকে তাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা শহর হরলিভকার দিক থেকে ধোঁয়ার কুন্ডলি এগিয়ে আসছে। রাশিয়া তার আকার, আকাশপথে অধিপত্য ও গোলাবারুদের ব্যাপক মজুত ব্যবহার করে যুদ্ধক্ষেত্রে অগ্রসর হচ্ছে। আর এই সময়টিতেই ইউক্রেনে পশ্চিমা সামরিক সহায়তা কমে গেছে অথবা অভ্যন্তরীণ রাজনীতির মারপঁ্যাচে আটকা পড়ে আছে।
রাশিয়ার বাহিনীগুলো যদি দোনেৎস্ক অঞ্চলে আরও গতি অর্জন করে ক্রমেই পশ্চিম দিকে এগিয়ে যেতে থাকে, তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে শেষ পর্যন্ত কোথায় থামবে তারা- এর উত্তর দেওয়া ইউক্রেনীয়দের পক্ষে ক্রমেই কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
ইউক্রেনে আরও দুই বছর যুদ্ধ
করতে সক্ষম রাশিয়া
ইউক্রেনে আরও দুই বছর যুদ্ধ করার সক্ষমতা রয়েছে রাশিয়ার। বৃহস্পতিবার লিথুয়ানিয়ার গোয়েন্দা সংস্থার একটি গোপন প্রতিবেদনে থেকে এই তথ্য জানা গেছে। প্রতিবেদনটি প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, তেলের উচ্চমূল্য, নিষেধাজ্ঞা ফাঁকি এবং রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগের কারণে ইউক্রেনে অন্তত আরও দুই বছর লড়াই চালিয়ে যেতে পারবে রাশিয়া।
২০২৩ সালে রাশিয়া ইউক্রেনে তার যুদ্ধ-বিধ্বস্ত সেনাবাহিনীকে সংস্কার ও আরও শক্তিশালী করেছে। এবার ফিনল্যান্ডসহ ন্যাটোর সীমান্তে তার সামরিক সক্ষমতা বাড়ানোর পথে রয়েছে দেশটি। ফিনল্যান্ড গত বছর পশ্চিমা এই সামরিক জোটে যোগ দিয়েছে। প্রতিবেদনটিতে রাশিয়ার বিষয়ে বলা হয়েছে, 'আগের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে যুদ্ধের নিজেদের কার্যকারিতা আরও উন্নত করতে পারবে মস্কো।'
এর আগে, গত মঙ্গলবার রাশিয়ার উত্তর ও পশ্চিমে সীমান্তে রুশ সামরিক বাহিনীকে আরও শক্তিশালী করার কথা জানিয়েছিলেন দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী। ওই এলাকায় ন্যাটো বাহিনীর তৎপরতার প্রতিক্রিয়ায় এমন পদক্ষেপ নিয়েছে রুশ কর্তৃপক্ষ।
জাতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে যৌথ এই প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স স্টেট সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট এবং মিলিটারির ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স অ্যান্ড সিকিউরিটি সার্ভিস। তবে বৃহস্পতিবার সকালের ওই প্রতিবেদনটি প্রকাশ করায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল তারা। তারপরও এটি ফাঁস হয়ে যায়। তবে প্রতিবেদনটি কোন সূত্রের কাছ থেকে বা কীভাবে সংগ্রহ করা হয়েছে এ বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি।