বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য

অনাহারে মারা যাচ্ছে গাজার শিশুরা

ভেস্তে গেল যুদ্ধবিরতির আলোচনা ইসরাইলি প্রতিনিধি যাননি
যাযাদি ডেস্ক
  ০৬ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
অনাহারে মারা যাচ্ছে গাজার শিশুরা

উত্তর থেকে দক্ষিণ। হামাস নিধনে কার্যত গোটা গাজা ভূখন্ড গুঁড়িয়ে দিচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী। ইসরাইলের হামলায় ভেঙে পড়েছে সেখানকার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট। গাজাজুড়ে এখন শুধুই হাহাকার। অনাহারে ভুগতে হচ্ছে শিশুদের। এহেন পরিস্থিতিতে, উদ্বেগ প্রকাশ করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডাবিস্নউএইচও) জানিয়েছে, অনাহারের কারণে গাজায় প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ১৬টি শিশু। আগামী দিনে এই পরিস্থিতি আরও ভয়ংকর হতে চলেছে বলে আশঙ্কা সংস্থাটির। তথ্যসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডাবিস্নউএইচও) প্রধান টেড্রোস আধানম গেব্রেইয়েসাস জানিয়েছেন, গত রোববার (৩ মার্চ) ?উত্তর গাজায় যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তারা। আল-আওদা ও কামাল আদওয়ান হাসপাতাল পরির্দশন করে তারা সেখানে 'ভয়াবহ পরিস্থিতি' দেখেছেন। পরিদর্শনে যা দেখা গেছে সামাজিক মাধ্যমে সেটাই একটি পোস্টে তুলে ধরেছেন টেড্রোস।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান লিখেছেন, খাবারের অভাবে ১০টি শিশুর মৃতু্য হয়েছে আর সেখানে 'গুরুতর পর্যায়ের অপুষ্টি' বিরাজমান, হাসপাতাল ভবনগুলো ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। তিনি আরও উলেস্নখ করেছেন, গাজার উত্তরাংশে আরও নিয়মিত যাওয়ার সুযোগ পাওয়ার চেষ্টা সত্ত্বেও পাঁচ মাসের মধ্যে এই প্রথম ডাবিস্নউএইচও সেখানে যেতে পারল। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, উত্তর গাজার শিশুরা মারাত্মক অপুষ্টির শিকার হচ্ছে, অনাহারে মারা যাচ্ছে, জ্বালানি, খাদ্য ও চিকিৎসা সরবরাহের গুরুতর ঘাটতি, হাসপাতাল ভবন ধ্বংস হয়ে গেছে। সেখানে প্রায় তিন লাখ মানুষ সামান্য খাদ্য ও পানি পাচ্ছে। এর আগে জাতিসংঘ গত সপ্তাহে বলেছিল, গাজায় দুর্ভিক্ষ 'প্রায় অনিবার্য'।

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে এক কর্মকর্তা বলেছিলেন, গাজার দুই বছরের কম বয়সি প্রতি ছয় শিশুর মধ্যে একজন তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে ও দ্রম্নত ওজন হারাচ্ছে। ভূখন্ডটির কার্যত ২৩ লাখ বাসিন্দার সবাই বেঁচে থাকার জন্য 'শোচনীয়ভাবে অপর্যাপ্ত' খাদ্য ত্রাণের ওপর নির্ভর করছে। আর রোববার ইউনিসেফের আঞ্চলিক পরিচালক আদেশ খোদর বলেন, 'আমরা যে শিশু মৃতু্যর আশঙ্কা করেছিলাম তাই ঘটছে, অপুষ্টি গাজা ভূখন্ডে ধ্বংসযজ্ঞ ঘটাচ্ছে।' এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, এই শোচনীয় ও ভয়াবহ মৃতু্যগুলো মানবসৃষ্ট, এগুলো অনুমানযোগ্য ও পুরোপুরি প্রতিরোধযোগ্য ছিল।

গত রোববার গাজার হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, উপত্যকার কামাল আদওয়ান হাসপাতালে অপুষ্টি ও পানি শূন্যতার কারণে অন্তত ১৫ শিশুর মৃতু্য হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ শহরের একটি হাসপাতালে রোববার আরও এক শিশুর মৃতু্য হয়েছে।

জাতিসংঘের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, গাজা উপত্যকাজুড়ে অন্তত পাঁচ লাখ ৭৬ হাজার মানুষ, যা ভূখন্ডটির মোট জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ বিপর্যয়কর মাত্রার খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন হয়েছেন। এ ছাড়া গাজার উত্তরাঞ্চলে দুই বছরের কম বয়সি প্রতি ছয় শিশুর মধ্যে একজন তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে বলেও জানান জাতিসংঘের ওই কর্মকর্তা।

ভেস্তে গেল যুদ্ধবিরতির আলোচনা

ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ও দখলদার ইসরাইলের মধ্যে চলমান যুদ্ধবিরতির আলোচনা ভেস্তে গেছে। গত রোববার মিসরের রাজধানী কায়রোতে এ আলোচনা শুরু হয়। তবে দুইদিন ধরে বৈঠক হলেও কোনো চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।

হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতা বাসিম নাসিম মঙ্গলবার জানিয়েছেন, আলোচনা চলার সময় তারা তাদের প্রস্তাব মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোর কাছে উত্থাপন করেছেন এবং ইসরাইলের উত্তরের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। তিনি বলেছেন, 'নেতানিয়াহু কোনো চুক্তিতে পৌঁছাতে চান না আর ইসরাইলকে চুক্তিতে সম্মত হতে চাপ দেওয়ার বল এখন আমেরিকার কোর্টে।'

এদিকে, কায়রোর এ আলোচনা নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো ধরনের মন্তব্য করতে রাজি হয়নি ইসরাইল। তবে ইসরাইল কায়রোতে তাদের কোনো প্রতিনিধিকে পাঠায়নি। তারা দাবি করেছিল, যেসব জীবিত এবং মৃত বন্দি এখনো গাজায় আছে, তাদের তালিকা দিতে হবে। এরপর তারা আলোচনায় যোগ দেবে। প্রথমে অন্তত ৪০ অসুস্থ, বৃদ্ধ ও নারীর তালিকা দিতে হবে, যাদের যুদ্ধবিরতির প্রথম ধাপে মুক্তি দেওয়া হবে।

হামাস জানিয়েছে, তাদের পক্ষে এখন তালিকা দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ ইসরাইলিদের অব্যাহত বোমা হামলার কারণে অনেক বন্দি নিহত হয়েছেন। ফলে কারা জীবিত আছেন, আর কারা মারা গেছেন, সেই তালিকা প্রস্তুতে আগে যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে। এরপর তারা জিম্মিদের তালিকা দিতে পারবে। ইসরাইলের প্রতি পাল্টা দাবি ছুড়ে হামাস জানিয়েছে, জিম্মিদের মুক্ত করতে আগে যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে পৌঁছাতে হবে। যেটি হবে একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে