ইসরাইলি আগ্রাসন
মৃতু্যর মিছিল থামছেই না গাজায়
নিহতের সংখ্যা ৩০ হাজার ৫০০ ছাড়িয়ে গেছে হাসপাতালে অপুষ্টি ও পানিশূন্যতার কারণে ১৫ শিশুর মৃতু্য গাজার উত্তরাঞ্চলে কবরস্থানেও চলছে ইসরাইলি বিমান হামলা
প্রকাশ | ০৫ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর আগ্রাসনে মৃতু্যর মিছিল থামছেই না। ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি বাহিনীর বোমা হামলায় শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। ফলে সেখানে এরই মধ্যে নিহতের সংখ্যা ৩০ হাজার ৫০০ ছাড়িয়ে গেছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সেখানে কমপক্ষে ৩০ হাজার ৫৩৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। সেই সঙ্গে আহত হয়েছেন মোট ৭১ হাজার ৯৮০ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি বাহিনীর বোমাবর্ষণে উপত্যকায় ১২৪ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। সোমবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা, রয়টার্স, বিবিসি, এএফপি
এদিকে, ইসরাইলি আগ্রাসনের মুখে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার কামাল আদওয়ান হাসপাতালে ১৫ শিশুর মৃতু্য হয়েছে। তারা সবাই অপুষ্টি ও পানিশূন্যতাজনিত কারণে মারা গেছে। প্রাণহানির শঙ্কায় রয়েছে আরও বেশকিছু শিশু। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল-কুদরা এক বিবৃতিতে বলেছেন, কামাল আদওয়ান হাসপাতালে অপুষ্টি ও পানিশূন্যতার কারণে ১৫ শিশুর মৃতু্য হয়েছে। বৈদু্যতিক জেনারেটর বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং অক্সিজেন সরবরাহ না থাকায় সেখানে যথাযথ চিকিৎসা সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে থাকা আরও ছয় শিশুর জীবন শঙ্কা তৈরি হয়েছে।
গত ১৯ ফেব্রম্নয়ারি শিশু নিরাপত্তা ও অধিকার বিষয়ক সংস্থা (ইউনিসেফ) সতর্ক করে বলেছিল, ইসরাইলি হামলার মুখে গাজা উপত্যকায় শিশু, অন্তঃসত্ত্বা নারী এবং স্তন্যদানকারী মায়েদের স্বাস্থ্যের জন্য অপুষ্টি 'গুরুতর হুমকি' হয়ে উঠেছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, ইসরাইলের হামলা গাজার ৮৫ শতাংশ মানুষকে খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র ঘাটতির মধ্যে ঠেলে দিয়েছে। হামলায় উপত্যকাটির ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। এই পরিস্থিতিতে, ইসরাইলি হামলা-অবরোধের মধ্যে গাজায় শিশুমৃতু্য দ্রম্নত বৃদ্ধির আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ইউনিসেফ। এ ছাড়া গাজার উত্তরাঞ্চলে আরও বেশি সংখ্যক শিশু অযত্নের সম্মুখীন হচ্ছে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।
মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় ইউনিসেফের আঞ্চলিক পরিচালক অ্যাডেল খোদর এক বিবৃতিতে বলেন, 'গাজার অবশিষ্ট যে কয়েকটি হাসপাতাল চালু আছে, তার মধ্যে কোথাও কোথাও সম্ভবত আরও বেশি শিশু তাদের জীবন বাঁচানোর জন্য লড়াই করছে এবং ভূখন্ডটির উত্তরাঞ্চলে সম্ভবত আরও বেশি শিশু সঠিক যত্ন ও পরিষেবা পাচ্ছে না।' তিনি আরও বলেছেন, 'এই মর্মান্তিক এবং ভয়াবহ মৃতু্য মানবসৃষ্ট, পূর্বাভাসযোগ্য এবং সম্পূর্ণরূপে প্রতিরোধযোগ্য।'
গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলে আকস্মিক হামলা চালায় হামাস ও এর সহযোগী সংগঠনগুলো। এরপর থেকেই প্রতিশোধের নামে গাজায় বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। ফিলিস্তিনে আগ্রাসনের কারণে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইসরাইলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলা চলছে। গত জানুয়ারিতে এক অন্তর্র্বর্তীকালীন রায়ে তেল আবিবকে গণহত্যামূলক কর্মকান্ড বন্ধ করতে এবং গাজার বেসামরিক নাগরিকদের মানবিক সহায়তা প্রদানের নিশ্চয়তা দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত।
গাজার উত্তরাঞ্চলে কবরস্থানেও
ইসরাইলি বিমান হামলা
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখন্ডের একটি অস্থায়ী কবরস্থানেও বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। ভূখন্ডটির উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরের বাসিন্দারা এই কবরস্থানটি তৈরি করেছিলেন। হামলার পর ইসরাইলি হামলায় নিহত অনেকের মরদেহ কবর থেকে বেরিয়ে আসে।
উত্তর গাজা উপত্যকার সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক আহমেদ আল-কাহলোত বলেছেন, 'ইসরাইলি সেনাবাহিনী একটি গণকবরে বোমাবর্ষণ করেছে, যেখানে কয়েকশ' শহীদের লাশ দাফন করা হয়েছিল। ইসরাইলি হামলায় নিহত এসব মানুষকে সম্প্রতি সমাহিত করা হয়েছিল।' তিনি আরও বলেন, 'বোমা হামলার ফলে কবরস্থান ধ্বংস হয়ে যায় এবং এতে করে মাটির নিচ থেকে অনেক মৃতদেহ প্রকাশ্যে চলে আসে।' অবশ্য বেসামরিক প্রতিরক্ষা দলগুলো বাইরে চলে আসা মৃতদেহগুলোকে আবার সমাধিস্থ করার জন্য নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করছে বলেও আল-কাহলোত উলেস্নখ করেছেন।
গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর থেকে অবরুদ্ধ এই ভূখন্ডের সব গভর্নরেটের বাসিন্দারা আবাসিক এলাকা, বাড়ির আঙিনা এবং খেলার মাঠসহ বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ী যৌথ ও পৃথক কবর স্থাপনের পথ অবলম্বন করেছে। বেসামরিক লোকদের ওপর ঘন ঘন হামলা করা ছাড়াও রাস্তা বন্ধ রাখা এবং ইসরাইলি সেনাবাহিনীর অবকাঠামো ধ্বংসের কারণে নিয়মিত কবরস্থানে প্রবেশ করা অসম্ভব বলে অস্থায়ী এসব কবরস্থানে লাশ দাফন করে আসছেন ফিলিস্তিনিরা।
এ ছাড়া আগ্রাসনের শুরু থেকেই সামরিক যানবাহন প্রবেশ করতে পারে, এমন এলাকায় কবর খনন এবং সেগুলোতে হামলা করেই চলেছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। এর আগে গত জানুয়ারি মাসের শেষদিকে মার্কিন সংবাদমাধ্যম 'সিএনএন' জানায়, ইসরাইলি সামরিক বাহিনী গাজায় কমপক্ষে ১৬টি কবরস্থান ধ্বংস করে দিয়েছে। মূলত উপগ্রহ চিত্র এবং সোস্যাল মিডিয়া ফুটেজের বরাত দিয়ে সে সময় এ তথ্য সামনে আনে সংবাদমাধ্যমটি। সিএনএন আরও জানায়, গাজায় স্থল অভিযানের সময় ইসরাইলি সেনাবাহিনী বুলডোজার ব্যবহার করে কবরস্থানগুলো ভেঙে দিয়েছে এবং এমনকি এতে কবর থেকে কিছু মৃতদেহও বের হয়ে গেছে।
সিএনএনের প্রতিবেদনে উদ্ধৃত আইন বিশেষজ্ঞরা সে সময় জোর দিয়ে বলেন, ইচ্ছাকৃতভাবে কবরস্থানের মতো স্থানগুলোকে ধ্বংস করা এবং এগুলোকে সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। ইসরাইলের এ ধরনের কর্মকান্ড যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।