মিয়ানমারের রাখাইনে জান্তা বাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘর্ষ বাড়ছে। ফলে প্রদেশটির রাজধানী সিত্তে শহর এবং গ্রামাঞ্চল থেকে হাজার হাজার মানুষ পালিয়ে যাচ্ছেন। সেখানকার বাসিন্দাদের আশঙ্কা, সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ) যে কোনো সময় হামলা চালাতে পারে। এক প্রতিবেদনে শুক্রবার এ খবর দিয়েছে রাখাইনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম 'নারিনজারা নিউজ'। এদিকে, মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ রাখাইনের একটি ব্যস্ত বাজারে সামরিক বাহিনীর গোলাবর্ষণে অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছেন। সেই সঙ্গে আহত হয়েছেন ৮০ জনের বেশি মানুষ। শুক্রবার এ ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে জান্তাবিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি (এএ)। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাখাইনের বেশকিছু এলাকা বর্তমানে নিয়ন্ত্রণ করছে এই গোষ্ঠীটি। তথ্যসূত্র : রয়টার্স, এএফপি
পালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, 'আরাকান আর্মি সিত্তে দখল করতে পারে, এমন খবর শোনার পর মানুষ পালিয়ে যাচ্ছে। এখন তারা স্বাধীন অঞ্চলগুলোয় যাচ্ছেন।
ইয়াঙ্গুন-সিত্তে মহাসড়কে অবস্থিত আহ মিয়ান্ট কায়ুন মিন চং সেতুটি মাইন দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছে মিয়ানমারের জান্তা। মূলত আরাকান আর্মির যোদ্ধারা যেন সিত্তেতে প্রবেশ করতে না পারে, সেটি নিশ্চিতে সেতুটি ধ্বংস করে দিয়েছে তারা। এতে সাধারণ মানুষের মনে আতঙ্ক বৃদ্ধি পেয়েছে। ওই বাসিন্দা বলেন, গুরুত্বপূর্ণ ওই সেতুটি উড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে কার্যত এখানকার বাসিন্দাদের আটকে ফেলা হয়েছে। যদি যুদ্ধ শুরু হয়, তাহলে যুদ্ধ থেকে কীভাবে পালাবেন এ নিয়ে মানুষ শঙ্কিত। এ কারণে মানুষ এখন পালিয়ে যাচ্ছেন। তারা নিজেরাই সময়টি ব্যবহার করছেন। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর পরিবারের সদস্যরাও সিত্তে ছেড়েছেন।
বর্তমানে সিত্তের মোট বাসিন্দার এক-তৃতীয়াংশ সেখানে অবস্থান করছেন। যারা রয়ে গেছেন, তাদের মধ্যে কেউ আর্থিকভাবে সচ্ছল নন, কেউ বৃদ্ধ আবার কেউ নিজেদের মালপত্র চুরি নিয়ে চিন্তিত। যারা পালিয়েছেন, তাদের বেশিরভাগ নৌকা ব্যবহার করে অন্যত্র সরে গেছেন। সিত্তেতে নদীর এক পাশ থেকে অপর পাশে যেতে এখন জনপ্রতি ৫০ হাজার কিয়েট খরচ করতে হচ্ছে।
তবে জান্তা বাহিনী সাধারণ মানুষকে পালানোর ক্ষেত্রেও বাধা দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন অপর এক বাসিন্দা। কারণ হিসেবে তিনি উলেস্নখ করেছেন, যদি আরাকান আর্মি হামলা চালায়, তাহলে যেন বেসামরিকদের মানবঢাল হিসেবে ব্যবহার করে সেনারা পালাতে পারে, সেজন্য সাধারণ মানুষকে পালাতে দেওয়া হচ্ছে না। একজন সামাজিককর্মী পালিয়ে যাওয়া মানুষদের পরামর্শ দিয়েছেন, যেন তারা পর্যাপ্ত খাবার ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে প্রস্তুত থাকেন।
সম্প্রতি রাখাইনে জান্তা সরকার বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে লড়াইয়ে পরাজিত হচ্ছে। এরই মধ্যে তাদের কাছ থেকে সাতটি শহর, প্রধান প্রধান ঘাঁটি, ফাঁড়ি এবং নৌযান দখল করেছে বিদ্রোহীরা। শুধু রাখাইন নয়, মিয়ানমারের বেশ কয়েকটি সীমান্তের বড় এলাকা হাতছাড়া হয়েছে জান্তা সরকারের।