রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিন পশ্চিমা দেশগুলোকে বলেছেন, তারা ইউক্রেনে সেনা পাঠালে তা পরমাণু যুদ্ধের উসকানি দেওয়ার ঝুঁকি তৈরি করবে। তিনি সতর্ক করেছেন, পশ্চিমা লক্ষ্যস্থলগুলোতে আঘাত হানার মতো অস্ত্র মস্কোর আছে। এদিকে পুতিনের এই বক্তব্যের সমালোচনা করেছে আমেরিকা। দেশটি বলেছে, পুতিনের বক্তব্য কান্ডজ্ঞানহীন। তথ্যসূত্র : রয়টার্স, এএফপি
১৯৬২ সালে কিউবার ক্ষেপণাস্ত্র সংকটের পর থেকে ইউক্রেনের যুদ্ধ পশ্চিমাদের সঙ্গে মস্কোর সম্পর্ককে সবচেয়ে তলানিতে নিয়ে গেছে। পুতিন এর আগে রাশিয়ার সঙ্গে ন্যাটোর সরাসরি সংঘাতের বিপদ নিয়ে নিয়ে কথা বলেছেন, কিন্তু বৃহস্পতিবার তিনি যে পরমাণু হামলার হুমকি দিয়েছেন, তা এ পর্যন্ত সবচেয়ে পরিষ্কার হুঁশিয়ারি।
আগামী ১৫-১৭ মার্চের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে রাশিয়ার পার্লামেন্টে আইনপ্রণেতা ও অভিজাত শ্রেণির সদস্যদের উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে পুতিন (৭১) তার অভিযোগের পুনরাবৃত্তি করে বলেন, পশ্চিমারা রাশিয়াকে দুর্বল করার দিকে ঝুঁকেছে, রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তাদের হস্তক্ষেপ কতটা বিপজ্জনক হতে পারে, পশ্চিমা নেতারা তা বুঝতে পারেননি।
গত সোমবার ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ বলেছিলেন, ইউক্রেনে রাশিয়াকে পরাজিত করতে পশ্চিমা মিত্রদের কোনো বিকল্প বাদ দেওয়া উচিত হবে না। ইউক্রেনে ন্যাটো সামরিক জোটের ইউরোপীয় সদস্যদের স্থল সেনা পাঠানোর বিষয়ে এ মন্তব্য করেছিলেন তিনি। কিন্তু আমেরিকা, জার্মানি, যুক্তরাজ্য ও অন্যরা দ্রম্নত ম্যাখোঁর এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। কিন্তু ম্যাখোঁর ওই মন্তব্যকে ধরেই পুতিন তার বক্তব্য বিস্তার করেন।
পুতিন বলেন, 'পশ্চিমা দেশগুলোকে অবশ্যই উপলব্ধি করতে হবে যে, তাদের ভূখন্ডে আঘাত হানার মতো অস্ত্র আমাদেরও আছে। এগুলোর সবই বাস্তবিক একটি সংঘাতের হুমকি দিচ্ছে যেটিতে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহৃত হবে আর সভ্যতা ধ্বংস হবে। তারা কি এটি বোঝে না?' এ সময় রাশিয়ার ব্যাপকভাবে আধুনিকায়িত পারমাণবিক অস্ত্র ভান্ডারের কথা উলেস্নখ করেন পুতিন। উলেস্নখ্য, বিশ্বে রাশিয়াই এ ধরনের সবচেয়ে বড় অস্ত্র ভান্ডারের মালিক।
নতুন প্রজন্মের হাইপারসনিক পারমাণবিক অস্ত্রের উলেস্নখ করে তিনি বলেন, 'কৌশলগত পারমাণবিক বাহিনী সম্পূর্ণ প্রস্তুত অবস্থায় আছে।' পুতিন পশ্চিমা রাজনীতিকদের নাৎসি জার্মানির অ্যাডলফ হিটলার ও ফ্রান্সের নেপোলিয়ন বোনাপার্টের কথা স্মরণ করার পরামর্শ দেন তিনি, যারা অতীতে রাশিয়ায় আক্রমণ চালাতে গিয়ে পরাজিত হয়েছিলেন। কিন্তু এখন এর পরিণতি হবে আরও অনেক বেশি শোচনীয়। তারা ভাবে এটি (যুদ্ধ) একটি কার্টুন।
গত তিন দশক ধরে রাশিয়া যে ধরনের নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছে, পশ্চিমারা সে ধরনের কোনো কিছুর মুখোমুখি হয়নি বলে পশ্চিমা রাজনীতিকরা সত্যিকারের যুদ্ধ কী ভুলে গেছেন বলে মন্তব্য করেন পুতিন। ইউক্রেনে যুদ্ধক্ষেত্রগুলোতে রাশিয়ার সেনারা এখন উদ্যোগী ভূমিকায় আছে আর বেশকিছু জায়গায় তারা এগিয়ে গেছে বলে জানান পুতিন। ফিনল্যান্ড ও সুইডেন ন্যাটো সামরিক জোটে যোগ দেওয়ার পর রাশিয়াকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে পশ্চিমা সীমান্তে মোতায়েন করা সেনার শক্তি বাড়াতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। এর পাশাপাশি রাশিয়া ইউক্রেন থেকে আরও এগিয়ে ইউরোপীয় দেশগুলোতে আক্রমণ করবে, পশ্চিমা এমন ধারণা বাতিল করে দেন তিনি।