স্বীকার মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রীর
গাজায় ২৫ হাজারের বেশি নারী-শিশুকে হত্যা
ইসরাইলের লাগাতার হামলা চলতে থাকায় প্রাণহানির সংখ্যা বাড়বে ত্রাণ নিতে আসা ফিলিস্তিনিদের হত্যা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ : তুরস্ক
প্রকাশ | ০২ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ২৫ হাজারের বেশি নারী-শিশুকে হত্যা করেছে ইসরাইল। বৃহস্পতিবার মার্কিন 'হাউস আর্মড সার্ভিসেস' কমিটির শুনানির সময় মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী লয়েড অস্টিন এ কথা বলেছেন। ইসরাইলি বর্বর হামলায় ভূখন্ডটিতে নিহতের মোট সংখ্যা এরই মধ্যে ৩০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এ ছাড়া ইসরাইলি আগ্রাসনে ২০ লাখের বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। গাজায় ইসরাইলের লাগাতার বর্বর হামলা এখনো চলছে এবং এতে ফিলিস্তিনিদের প্রাণহানির সংখ্যা আরও বাড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে। তথ্যসূত্র : এএফপি, রয়টার্স, আল-জাজিরা
মার্কিন হাউস আর্মড সার্ভিসেস কমিটির শুনানির সময় গাজায় ইসরাইলি হামলায় ফিলিস্তিনি নারী ও শিশুদের হত্যার পরিসংখ্যান জানতে চাওয়া হয় লয়েড অস্টিনের কাছে। জবাবে মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলেন, 'এটি ২৫ হাজারের বেশি'। যেদিন লয়েড অস্টিন এ কথা বলেন, সেদিনই (বৃহস্পতিবার) গাজা উপত্যকায় খাবারের জন্য অপেক্ষায় থাকা ফিলিস্তিনি শিশুদের ওপর গুলি চালায় ইসরাইল। এতে শতাধিক ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনি নিহত হন।
অস্টিনের বক্তব্যের পর পেন্টাগনের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি সাবরিনা সিং বলেন, প্রতিরক্ষ মন্ত্রী 'হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া পরিসংখ্যানের বরাত দিয়ে বলেছেন, গাজায় ইসরাইলি হামলায় ২৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।' তিনি আরও বলেন, 'আমরা নিরপেক্ষভাবে গাজায় হতাহতের এ পরিসংখ্যান যাচাই করতে পারিনি।'
উলেস্নখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরাইল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরাইলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
এদিকে, নতুন করে আরও প্রায় ১১০ জন আহত হয়েছেন। ফলে এখন পর্যন্ত গাজায় আহত হয়েছেন ৭০ হাজার ৩২৫ জন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কামাল আদওয়ান ও আল-শিফা হাসপাতালে পানি শূন্যতা এবং অপুষ্টিতে ছয় শিশুর মৃতু্য হয়েছে। অন্য শিশুদের অবস্থাও গুরুতর। ওই দুই হাসপাতালে আরও তিন শিশুর মৃতু্যর খবর পাওয়া গেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা জানিয়েছে, মানবিক সংস্থাগুলো গাজায় প্রবেশ করতে পারছে না। তাছাড়া তারাও হামলার শিকার হচ্ছেন।
গাজায় ফিলিস্তিনিদের মৃতু্য নিয়ে জাতিসংঘে একাধিক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পেশ হয়েছে। ইসরাইলের নিন্দায় সরব হয়েছে আন্তর্জাতিক মহল। এখন ইসরাইলি সেনার অভিযানের ফলে গাজায় তীব্র হয়েছে খাদ্য সংকট। ভেঙে পড়েছে স্বাস্থ্য পরিষেবা। চারদিকে শুধুই হাহাকার। এই পরিস্থিতিতে যুদ্ধবিরতি চাইছে আমেরিকাও। কয়েকদিন আগে জাতিসংঘে ওয়াশিংটনের পক্ষ থেকেও প্রথমবার সাময়িক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, তিনি আশা করছেন যে, আগামী সোমবারের মধ্যে নতুন যুদ্ধবিরতি হতে পারে। তিনি আরও বলেন, 'আমার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা আমাকে বলেছেন যে, আমরা যুদ্ধবিরতির কাছাকাছি আছি।' তবে সংঘাত বন্ধে যুদ্ধবিরতির জোর চেষ্টা চললেও চলতি মাসেই জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে আলজেরিয়ার উত্থাপিত 'গাজা যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে' ভেটো দেয় আমেরিকা।
ত্রাণ নিতে আসা ফিলিস্তিনিদের হত্যা
মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ : তুরস্ক
যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকার একটি ত্রাণ বিতরণ পয়েন্টে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ফিলিস্তিনিদের ওপর বৃহস্পতিবার বর্বরোচিত হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী। এতে কমপক্ষে ১১২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও সাত শতাধিক ফিলিস্তিনি। আর এই হামলার ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তুরস্ক। একই সঙ্গে এই হত্যাকান্ডকে 'মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ' বলেও অভিহিত করেছে দেশটি।
তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, 'ইসরাইল তার মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের সঙ্গে আরেকটি অপরাধ যোগ করেছে।' মন্ত্রণালয় আরও বলেছে, 'ইসরাইল গাজাবাসীকে দুর্ভিক্ষের দিকে ঠেলে দিয়েছে এবং এবার তারা মানবিক সহায়তা নিতে লাইনে দাঁড়ানো নিরপরাধ বেসামরিক লোকদের ওপর হামলা চালিয়েছে। তাদের এই কর্মকান্ড এটিই প্রমাণ করে, ইসরাইল সচেতন ও সম্মিলিতভাবে ফিলিস্তিনি জনগণকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে কাজ করছে।'
স্থানীয় এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, গাজা শহরের পশ্চিম নাবুলসি গোলচত্বরে ত্রাণের ট্রাকের দিকে খাবারের জন্য মরিয়া হাজার হাজার মানুষ ছুটে আসেন। সেই সময় এই সহিংসতার ঘটনা ঘটে। তিনি বলেন, 'ত্রাণ-বোঝাই ট্রাকগুলো কিছু সেনা ট্যাংকের খুব কাছাকাছি চলে আসে। ওই সময় হাজার হাজার মানুষ ট্রাকের দিকে ছুটে আসেন। তারা ট্রাকগুলোতে হামলে পড়েন। লোকজন ট্যাংকের খুব কাছে চলে আসায় ইসরাইলি সেনারা ভিড় লক্ষ্য করে গুলি চালায়।'