ইসরাইল-হামাস যুদ্ধ
দুর্ভিক্ষ থেকে এক ধাপ দূরে গাজার মানুষ :জাতিসংঘ
ফিলিস্তিনি এই উপত্যকার ২৩ লাখ মানুষ দুঃখজনকভাবে অপর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তার ওপর নির্ভর করে বেঁচে আছেন
প্রকাশ | ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ত্রাণসহায়তা প্রবেশে পরিকল্পিতভাবে বাধা দিয়ে আসছে ইসরাইল। এই কারণে সেখানে ভয়াবহ মানবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। পরিস্থিতি এতই ভয়াবহ, গাজার মোট জনসংখ্যার অন্তত এক-চতুর্থাংশ অর্থাৎ প্রায় ছয় লাখ মানুষ দুর্ভিক্ষ থেকে এক ধাপ দূরে রয়েছেন। বুধবার জাতিসংঘের কর্মকর্তাদের বরাতে এসব তথ্য জানিয়েছে আলজাজিরা।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সংস্থার (ওসিএইচএ) উপপ্রধান রমেশ রাজাসিংহাম বলেছেন, ফেব্রম্নয়ারি মাসের শেষের দিকে এসে গাজায় অন্তত ৫ লাখ ৭৬ হাজার মানুষ দুর্ভিক্ষ থেকে এক ধাপ দূরে অবস্থান করছেন।
মঙ্গলবার গাজায় খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে বৈঠক করে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। সেখানে রমেশ আরও বলেন, উত্তর গাজায় দুই বছরের কম বয়সি ছয়জনের মধ্যে একজন শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে। কার্যত ফিলিস্তিনি এই উপত্যকার ২৩ লাখ মানুষ দুঃখজনকভাবে অপর্যাপ্ত খাদ্য সহায়তার ওপর নির্ভর করে বেঁচে আছেন।
তিনি বলেন, 'যদি কিছু করা না হয় তাহলে আমরা আশঙ্কা করি গাজায় ব্যাপক দুর্ভিক্ষ প্রায় অনিবার্য। সংঘাতে আরও অনেক মানুষ হতাহত হবে।'
অন্যদিকে জেনেভায় ওসিএইচএর আরেক মুখপাত্র জেনস লায়েরকে সাংবাদিকদের বলেছেন, ইসরাইলের কর্মকান্ডের কারণে গাজায় ত্রাণসহায়তা সরবরাহ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
তিনি বলেন, ত্রাণবাহী গাড়িবহর হামলার শিকার হচ্ছে। ইসরাইলি সেনারা পরিকল্পিতভাবে যাদের ত্রাণসহায়তা প্রয়োজন তাদের কাছে সেগুলো পাঠাতে বাধা দিচ্ছে। মানবিক কর্মীদের হয়রানি, ভয়-ভীতি ও আটক করছে ইসরাইলি বাহিনী।
অন্যদিকে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদপত্রে বলছে, গাজায় চলমান যুদ্ধে দেখা দিয়েছে চরম খাদ্য সংকট। শিশুরা সেখানে পশু-পাখির খাদ্য দিয়ে তৈরি তিতকুটে খাবার খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। কিন্তু সেই খাদ্যেও এখন টান পড়ছে। দুধের শিশুর মুখে খেজুর গুঁজে দিয়ে সন্তানকে শান্ত রাখার চেষ্টা করছেন মা।
গাজায় উদ্বাস্তু হয়ে শরণার্থী শিবিরে ঠাঁই পাওয়া শিশু ও নারীদের বর্ণনায় উঠে এসেছে সেখানকার এই ভয়াবহ চিত্র। বিশেষ করে গাজার উত্তরাঞ্চলে খাদ্য সংকট খুবই প্রকট। কারণ যুদ্ধ এবং নিরাপত্তাহীন পরিস্থিতির কারণে সেখানে ঠিকমত পৌঁছাচ্ছে না ত্রাণ সরবরাহ।
যুদ্ধের মুখে গাজা ভূখন্ডের বৃহত্তম নগরী গাজা সিটি থেকে পালিয়ে দক্ষিণের একটি আশ্রয়শিবিরে ঠাঁই নেওয়া তিন শিশু জানিয়েছে ফেলে আসা দিনগুলোতে খাবারের কষ্টে থাকার কথা।
৮ বছর বয়সি সেরাজ শেহাদা, ৯ বছরের ইসমাইল এবং ১১ বছর বয়সি সাদ সম্পর্কে তিন ভাই। তারা জানায়, গাজা সিটিতে খাওয়ার কিছুই ছিল না। তাই গাজার কেন্দ্রস্থলে দেইর আল-বালায় ফুপুর সঙ্গে আশ্রয়শিবিরে ঠাঁই নেওয়ার জন্য গোপনে সেখানে পালিয়ে যায় তারা।
দেইর আল-বালার আশ্রয়শিবিরে বসে গোগ্রাসে হালুয়া খেতে খেতে কথা বলছিল এই শিশুরা। সেরাজ শেহাদার কথায়, 'আমরা যখন গাজা সিটিতে ছিলাম, তখন কিছুই খেতাম না। দুইদিন পরপর খাওয়া জুটত। আমরা পাখি, গাধার খাবার খেতাম। বলতে গেলে যে কোনো কিছুই খেতাম।'
যুদ্ধে এই ভাইয়েরা মা, আরেক ভাই এবং আরও কয়েকজন স্বজন হারানোর কথা জানিয়েছে। বড় ভাই শেহাদা বলেছে, বাবা আর দাদিকে নিয়ে তারা শহর ছেড়েছিল। তাদের কাছে পশুখাদ্য থেকে তৈরি পাউরুটি ছাড়া খাওয়ার আর প্রায় কিছুই ছিল না।
'ওই পাউরুটি ছিল ততকুটে। আমরা সেটি খেতে চাইনি। কিন্তু খেতে বাধ্য হয়েছি। দুই দিন পরপর এক টুকরো পাউরুটি,' জানায় শেহাদা। নোনা পানি পান করে অসুস্থ হয়ে পড়া এবং গোসল বা কাপড় ধোয়ার কোনো উপায় না থাকার কথাও জানিয়েছে সে বলেছে, 'আমরা বাবাকে না বলেই গোপনে দেইর-আর বালায় চলে এসেছি।'