মন্ত্রিসভায় পরিকল্পনা পেশ
রাফাহর বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের সরাতে চায় ইসরাইল
চূড়ান্ত বিজয় থেকে মাত্র কয়েক সপ্তাহ দূরে ইসরাইল :নেতানিয়াহু গাজায় যুদ্ধবিরতি হলেও হিজবুলস্নাহর ওপর হামলা বাড়াবে ইসরাইল
প্রকাশ | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা থেকে বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে দেওয়ার একটি পরিকল্পনা যুদ্ধকালে মন্ত্রিসভার কাছে পেশ করেছে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। সোমবার এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহু জানান, গাজা ভূখন্ডে লড়াই করার জন্য পুরো জায়গা থেকে বেসামরিক মানুষকে সরিয়ে দেওয়ার একটা পরিকল্পনা পেশ করেছে আইডিএফ। তথ্যসূত্র : এএফপি, রয়টার্স, ডিপিএ, আল-জাজিরা
কিন্তু কীভাবে মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হবে, তারা কোথায় যাবেন, সে সম্পর্কে কিছু বলেননি তিনি। তবে বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, অধিকৃত এলাকায় নিরাপদে মানবিক ত্রাণ পৌঁছানোর একটি পরিকল্পনা যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা অনুমোদন করেছে।
গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাহতে সামরিক অভিযান চালানোর জেরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমালোচনার মুখে পড়েছে ইসরাইল। কারণ ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর সেখানে ১৪ লাখ ফিলিস্তিনি লড়াই থেকে বাঁচতে আশ্রয় নিয়েছেন।
চূড়ান্ত বিজয় থেকে কয়েক সপ্তাহ দূরে ইসরাইল : নেতানিয়াহু
গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধে আর কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ইসরাইলি বাহিনী চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করতে যাচ্ছে বলে দাবি করেছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। রোববার মার্কিন সংবাদমাধ্যম 'সিবিএস'কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নেতানিয়াহু বলেন, 'যদি হামাসের সঙ্গে জিম্মি বিনিময় চুক্তি হয়, তাহলে হয়তো রাফাহতে অভিযান শুরু করতে খানিকটা বিলম্ব ঘটতে পারে, কিন্তু আজ হোক, কিংবা পরে রাফাহতে অভিযান শুরু হবে। এই অভিযান হবেই, কারণ গাজায় আমাদের লক্ষ্য চূড়ান্ত বিজয় এবং রাফাহতে অভিযান ব্যতীত এই লক্ষ্য পূরণ হবে না।' তিনি বলেন, 'আর অভিযান শুরু হলে তা স্থায়ী হবে এক মাসেরও কম সময় বা কয়েক সপ্তাহ। সেই বিবেচনায় আমরা বলতে পারি, গাজায় চূড়ান্ত বিজয় অর্জন থেকে মাত্র কয়েক সপ্তাহ দূরে রয়েছি আমরা। আমরা আগেও বলেছি, এখনও বলছি- হামাসকে সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় করা ছাড়া গাজায় চূড়ান্ত বিজয় সম্ভব নয়, আর তা করতে হলে রাফাহতে অভিযান অপরিহার্য।'
এমন এক সময় নেতানিয়াহু এসব কথা বললেন, যখন রাফাহতে অভিযান স্থগিত করতে ইসরাইলকে প্রতিনিয়ত চাপ দিচ্ছে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। কারণ গত ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরাইলি বাহিনী হামলা শুরুর পর গাজার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সীমান্তবর্তী শহর রাফাহতে এসেছেন প্রায় ১৪ লাখ ফিলিস্তিনি। এই ফিলিস্তিনিদের প্রায় সবারই লক্ষ্য সীমান্ত পেরিয়ে মিসরে আশ্রয় গ্রহণ।
গাজায় যুদ্ধবিরতি হলেও হিজবুলস্নাহর ওপর হামলা বাড়াবে ইসরাইল
গাজা উপত্যকায় হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তি হলেও লেবাননের হিজবুলস্নাহ জঙ্গি গোষ্ঠীর ওপর হামলা বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছেন ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ত। লক্ষ্য অর্জন হওয়া পর্যন্ত হিজবুলস্নাহর ওপর হামলা অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রতি দিয়েছেন জায়নবাদী ভূখন্ডটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী।
গাজায় যুদ্ধের সময় ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলে বারবার হামলা চালিয়ে আসছে হিজবুলস্নাহ। গাজায় হামলা বন্ধ না করা পর্যন্ত, ইসরাইলের ওপর হামলা চালিয়ে যাওয়ার হুমকিও দিয়েছে হিজবুলস্নাহ।
তাদের হুমকির জবাবে, ইয়োভ গ্যালান্ত বলেছেন, কেউ যদি মনে করে, গাজার জন্য অস্থায়ী যুদ্ধবিরতি উত্তর ফ্রন্টেও প্রযোজ্য হবে, তাহলে সে ভুল করবে। হিজবুলস্নাহকে ইসরাইলের সীমান্ত থেকে দূরে রাখাই তাদের একমাত্র লক্ষ্য। সেটা কূটনৈতিক চুক্তির মাধ্যমে বা বল প্রয়োগের মাধ্যমে, যেভাবেই হোক না কেন।
হিজবুলস্নাহ নেতা হাসান নাসরালস্নাহ চলতি মাসের শুরুতে বলেছিলেন, গাজায় যুদ্ধবিরতি হলে দলটি দক্ষিণ লেবাননে যুদ্ধবিরতি মেনে চলবে। তবে তিনি এটাও বলেছিলেন, হামাসের সঙ্গে যে কোনো চুক্তির পর ইসরাইল যদি লেবাননে হামলা চালিয়ে যায়, তবে তারাও আবার হামলা শুরু করবে।
গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলের দক্ষিণ সীমান্তে আক্রমণ করে হামাস। ওইদিন গাজায় পাল্টা আক্রমণ শুরু করে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। তখন থেকেই হিজবুলস্নাহ ইসরাইলে হামলা শুরু করে। হিজবুলস্নাহর রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাবে বিমান হামলা ও কামানের গোলা ছোড়ে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। এসব হামলায় ইসরাইল-লেবানন সীমান্তের উভয় পাশেই হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক বাস্তুচু্যত হয়েছে। হিজবুলস্নাহ ও ইসরাইলের মধ্যে বেশিরভাগ লড়াই সীমান্তের দুই পাশের কয়েক কিলোমিটারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।