রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দুই বছর
দৃঢ় অবস্থানে পুতিন, দ্বিধাবিভক্ত পশ্চিমারা
ফাটল ধরেছে কিয়েভের মনোবলে ইউক্রেনকে সমর্থন জানাতে কিয়েভ সফরে পশ্চিমা নেতারা
প্রকাশ | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের দুই বছর পূর্ণ হয়েছে শনিবার। হামলার শুরুতে রাশিয়ার যে দৃঢ়তা ছিল, সেটি মাঝে ভেঙে পড়েছিল। তবে কয়েক মাস আগে থেকেই নিজেদের অবস্থানে ফিরে এসেছে মস্কো। অপরদিকে, ইউক্রেন বিপরীতে কিয়েভের মনোবলে ফাটল ধরেছে। যুদ্ধ ও পরিকল্পনায় দৃঢ় অবস্থানে রয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিন। অপরদিকে, ইউক্রেনকে সাহায্যের দিক দিয়ে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ছে আমেরিকাসহ পশ্চিমা দেশগুলো। তথ্যসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দুই বছর পেরিয়ে গেলেও সহসাই তা থামবে, এমন কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। না ইউক্রেন না রাশিয়া, না তাদের কোনো মিত্র, কারও পক্ষ থেকেই শান্তি প্রতিষ্ঠার কোনো চিহ্নমাত্র নেই। কিয়েভ এ ব্যাপারে একরোখা যে, তাদের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমানা বজায় থাকতে হবে এবং তারা রুশ সেনাদের হটিয়ে দেবে। অন্যদিকে, মস্কো তাদের অবস্থানে অনড়, ইউক্রেন যথাযথ রাষ্ট্র নয় এবং তাদের লক্ষ্য অর্জন না হওয়া পর্যন্ত রাশিয়ার সামরিক অভিযান চলবে।
শীতকালজুড়ে তীব্র মুখোমুখি লড়াইয়ে, দুই পক্ষেরই বেশ প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। যুদ্ধের ফ্রন্টলাইন প্রায় এক হাজার কিলোমিটার এবং ২০২২ সালের শরতের পর থেকে এই এলাকায় খুব একটা পরিবর্তন আসেনি। দুই বছর আগে রাশিয়ার পুরোমাত্রার সামরিক অভিযান শুরুর কয়েক মাসের মধ্যেই, ইউক্রেনীয়রা রুশ সেনাদের রাজধানী কিয়েভ ও উত্তরাঞ্চল থেকে হটিয়ে দিতে সক্ষম হয়। ওই বছরের শেষদিকে তারা পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলেও দখল করা বড় এলাকা উদ্ধার করে। কিন্তু এই মুহূর্তে রাশিয়ানরা শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে, আর ইউক্রেনীয়রা বলছে যে তাদের গোলা-বারুদ ফুরিয়ে আসছে।
ফেব্রম্নয়ারির মাঝামাঝিতে দীর্ঘদিন লড়াই চলা পূর্বাঞ্চলের আভদিভকা শহর থেকে নিজেদের সেনাদের সরিয়ে নিয়েছে ইউক্রেন। যেটাকে একটা বড় বিজয় হিসেবে দেখে রাশিয়া- কারণ কৌশলগতভাবে আভদিভকা শহরটি আরও ভেতরে অভিযানের পথ খুলে দিতে পারে।
কিয়েভ জানিয়েছে, তারা সেনাদের জীবন রক্ষা করতেই তাদের সেখান থেকে সরিয়ে নিয়েছে এবং তাদের অস্ত্র ও সেনা সংখ্যা যে সেখানে অনেক কম ছিল, সেটাও তারা লুকায়নি। গত মে মাসে বাখমুত দখলের পর এটাই ছিল রাশিয়ার সবচেয়ে বড় বিজয়। কিন্তু আভদিভকা উত্তর-পশ্চিমের দোনেৎস্ক থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে, ইউক্রেনের যে শহরটি ২০১৪ সাল থেকেই রাশিয়া দখল করে আছে।
তবে ২০২২ সালের ফেব্রম্নয়ারিতে যে লক্ষ্য নিয়ে রাশিয়া অভিযান শুরু করে, মিলিটারি বস্নগার ও রাষ্ট্রীয়ভাবে নানা প্রচারণায় বলা হয় মাত্র 'তিন দিনের মধ্যেই' রাজধানী কিয়েভ দখল করা হবে, সেই তুলনায় এটা খুবই সামান্য অগ্রগতি। বর্তমানে ইউক্রেনের ১৮ শতাংশ অঞ্চল রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে, যার মধ্যে ২০১৪ সালের মার্চে দখল করা ক্রিমিয়া, দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলের বিরাট অংশও রয়েছে।
ইউক্রেনের পক্ষে সমর্থন কি কমে আসছে?
গত দুই বছর ধরে ইউক্রেনের মিত্ররা প্রচুর পরিমাণ সামরিক, আর্থিক ও মানবিক সাহায্য দিয়ে আসছে। 'কিয়েল ইনস্টিটিউট ফর দ্য ওয়ার্ল্ড ইকোনমির' হিসাবে, ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত প্রায় ৯২ বিলিয়ন ডলার এসেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে, আর ৭৩ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে আমেরিকা। পশ্চিমাদের সরবরাহ করা ট্যাংক, আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং দূরপালস্নার আর্টিলারি ইউক্রেনকে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে ব্যাপকভাবে সাহায্য করেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সহায়তার পরিমাণ অনেক কমে গেছে এবং ইউক্রেনকে আদতে কতদিন তাদের মিত্ররা সহায়তা চালিয়ে যেতে পারবে, সে নিয়ে আলোচনা চলছে।
আমেরিকার একটা নতুন ৬০ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা ঘরোয়া রাজনীতির মারপঁ্যাচে পড়ে কংগ্রেসে আটকে আছে। আর ইউক্রেনের সমর্থকদের মধ্যে শঙ্কা ভর করেছে যে, যদি নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও জিতে আসেন, তাহলে মার্কিন সহায়তা থমকে যাবে।
ইউক্রেনকে সমর্থন জানাতে কিয়েভ
সফরে পশ্চিমা নেতারা
এদিকে, ইউক্রেনের প্রতি সমর্থন জানাতে পশ্চিমা নেতারা কিয়েভ সফরে গেছেন। পোল্যান্ড থেকে ট্রেনের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি, কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো, বেলজিয়ামের প্রধানমন্ত্রী আলেকজান্ডার ডি ক্রু। এ সময় তাদের সঙ্গে ছিলেন ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লেইন। তাদের এই সফরের মাধ্যমে ইউক্রেনের প্রতি পশ্চিমাদের অঙ্গীকারের প্রতিফলন ঘটেছে। যদিও সম্প্রতি সামরিক সরঞ্জামের ঘাটতিতে বিপাকে পড়েছে ভলোদিমির জেলেনস্কির দেশ।
উরসুলা ভন ডের লেইন এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, 'ইউক্রেনের মানুষের প্রতিরোধ উদযাপন করতে আমি এখন কিয়েভে। আমরা দৃঢ়ভাবে ইউক্রেনের সঙ্গে আছি। ইউক্রেনবাসীকে পুরোপুরি মুক্ত হওয়ার আগে দেশটিকে অর্থনৈতিক, সামরিক ও নৈতিকভাবে সমর্থন দেওয়া হবে।'