ইসরাইলি হামলা নিয়ে ইউনিসেফ
শিশুমৃতু্য সহনীয় মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে
গাজার দেইর আল-বালাহতে বিমান হামলায় নিহত ৪০, নিহতের সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার জাতিসংঘে গাজা ইসু্যতে আমেরিকার তীব্র সমালোচনা এমএসএফের
প্রকাশ | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
ফিলিস্তিনে ইসরাইলি হামলায় শিশুমৃতু্য সহনীয় মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছে ইউনিসেফ। তারপরও অবরুদ্ধ গাজা ও অধিকৃত পশ্চিম তীরে লাগাতার হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে গাজার মধ্যাঞ্চলে আবাসিক ভবনে ইসরাইলি বাহিনীর বিমান হামলায় কমপক্ষে ৪০ জন নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন শতাধিক। উপত্যকাটির মধ্যাঞ্চলীয় শহর দেইর আল-বালাহতে বেশ কয়েকটি আবাসিক বাড়িতে চালানো এ হামলায় হতাহতের এই ঘটনা ঘটে। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। এদিকে, ইসরাইলি হামলায় গাজায় নিহতের সংখ্যা ২৯ হাজার ৫০০ ছাড়িয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ৬৯ হাজার ৪৬৫ জন। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা, রয়টর্স, বিবিসি, এএফপি, সিনহুয়া
বেশ কয়েকটি ফিলিস্তিনি নিরাপত্তা সূত্র জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার ইসরাইলি বিমান গাজার দেইর আল-বালাহ শহরের বেশ কয়েকটি আবাসিক বাড়িতে কয়েক দফায় হামলা চালায়। এর ফলে এসব বাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। অন্যদিকে, গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস বলেছে, গাজা ভূখন্ডের কেন্দ্রীয় অংশে ইসরাইলি বাহিনীর সংঘটিত 'জঘন্য গণহত্যায়' ৪০ জন নিহত এবং শতাধিক লোক আহত হয়েছেন। ইসরাইলি এই হামলায় হতাহতদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। মিডিয়া অফিস বলেছে, 'আমরা আমেরিকান প্রশাসন এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পাশাপাশি ইসরাইলকে চলমান এই অপরাধের জন্য সম্পূর্ণরূপে দায়ী করি এবং ইসরাইলি সেনাবাহিনী বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে যে ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে তা অবিলম্বে বন্ধ করার জন্য আমরা বিশ্বের কাছে আহ্বান জানাই।'
এদিকে, গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাফাহ শহরের একটি বাড়িতে বিমান হামলার ঘটনায় কমপক্ষে ছয়জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও বেশ কয়েকজন। ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা 'ওয়াফা নিউজ এজেন্সি' জানিয়েছে, রাফাহ শহরের পূর্বে অবস্থিত জালাতা এলাকায় ওই হামলা চালানো হয়েছে। আহতদের আবু ইউসুফ আল-নাজ্জার হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। তারেক আবু আজউম রাফাহ থেকে জানিয়েছেন, 'এই বাড়িগুলোতে কোনো ধরনের পূর্ব সতর্কতা ছাড়াই আক্রমণ করা হয়েছে। হামলায় আহত হওয়া কয়েক ডজন লোকের বেশিরভাগই শিশু।' ওয়াফা নিউজ আরও জানিয়েছে, ইসরাইলি বাহিনী মধ্য রাফাহর ইয়াবনা ক্যাম্পের একটি বাড়িতেও বোমা হামলা চালিয়েছে। তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
অন্যদিকে, অধিকৃত পশ্চিম তীরের জেনিন শরণার্থী শিবিরে একটি গাড়িতে ইসরাইলি বিমান হামলায় আহত ১৭ বছর বয়সি এক কিশোরের মৃতু্য হয়েছে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরাইলি সামরিক বাহিনী বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে একটি গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালিয়েছে। এতে একজন নিহত এবং কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছেন।
জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা 'ইউনিসেফ' জানিয়েছে, ফিলিস্তিনি ভূখন্ডে শিশুমৃতু্যর সংখ্যা এরই মধ্যেই সহনীয় মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। ইউরোপের বিভিন্ন দেশ গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে। একই সঙ্গে রাফাহতে ইসরাইলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সতর্ক করা হয়েছে।
ইসরাইলে হামলা হিজবুলস্নাহর
ইসরাইলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়েছে লেবাননের ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হিজবুলস্নাহ। এক বিবৃতিতে সামরিক অভিযানের বিষয়ে হিজবুলস্নাহ জানিয়েছে, তারা ইসরাইলের বেশ কয়েকটি ঘাঁটিতে আক্রমণ করেছে। লেবানন-ইসরাইল সীমান্তের পূর্ব দিকে মেতুলা ও মানারা শহরে ইসরাইলি সেনাদের দুটি ভবনে হামলা চালিয়েছে। হিজবুলস্নাহ আরও জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার তাদের দুই যোদ্ধা নিহত হয়েছে। সীমান্তে ইসরাইলি সেনাদের সঙ্গে গোলাগুলি অব্যাহত রয়েছে।
ইরান-সমর্থিত এই গোষ্ঠীটি জানিয়েছে, গাজায় যুদ্ধ শেষ হলেই ইসরাইলের ওপর তাদের আক্রমণ বন্ধ হবে। তবে ইসরাইলি নেতারা হিজবুলস্নাহকে ইসরাইলের উত্তর সীমান্ত থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছেন। প্রয়োজনে পূর্ণ মাত্রার যুদ্ধের হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে।
জাতিসংঘে গাজা ইসু্যতে আমেরিকার
তীব্র সমালোচনা এমএসএফের
গাজায় অবিলম্বে মানবিক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে বারবার ভেটো দেওয়ায় জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে আমেরিকার তীব্র সমালোচনা করেছে মেদসাঁ সঁ ফ্রোঁতিয়ের বা ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্স (এমএসএফ)। বৃহস্পতিবার এমএসএফের মহাসচিব ক্রিস্তোফার লকইয়ার বলেছেন, 'গাজার মানুষদের দরকার একটি যুদ্ধবিরতি, যখন সম্ভব তখন নয়, এখনই। তাদের একটি টেকসই যুদ্ধবিরতি দরকার, অস্থায়ী শান্ত সময়কাল নয়। এর মধ্যে কোনোটি কম হলে তা হবে চরম অবহেলা।'
ইসরাইলি হামলা বন্ধে আশু যুদ্ধবিরতির জন্য নিরাপত্তা পরিষদের দাবিতে আমেরিকার বারবার ভেটো ব্যবহার করে বাধা দেওয়ায় তিনি আতঙ্কিত বোধ করছেন বলে জানান লকইয়ার। তিনি জানান, গাজা ভূখন্ডে চিকিৎসক দলগুলো নতুন একটি নাম পেয়েছে, সেটি হলো : ডবিস্নউসিএনএসএফ (উন্ডেড চিলড্রেন, নো সারভাইভিং ফ্যামেলি); এটি 'পরিবারহীন আহত শিশু' বোঝাতে ব্যবহার করা হচ্ছে।
১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদকে লকইয়ার বলেন, 'এই যুদ্ধে বেঁচে থাকা শিশুরা তীব্র যন্ত্রণাদায়ক আঘাতের দৃশ্যমান জখমই শুধু বহন করছে না, তারা অদৃশ্য আঘাতও বহন করছে। বারবার বাস্তুচু্যতি, ক্রমাগত আতঙ্ক ও আক্ষরিক অর্থে চোখের সামনে পরিবারের সদস্যদের অঙ্গচ্ছেদ দেখতে হচ্ছে তাদের। এই মানসিক আঘাত এমনই তীব্র যে, পাঁচ বছর বয়সি শিশুও আমাদের বলছে, তারা মরে যেতে চায়।'