মঙ্গলবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৪, ৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
কারা কোন পদ পেলেন

পাকিস্তানে ক্ষমতার ভাগাভাগি

৮ ফেব্রম্নয়ারির নির্বাচনে কোনো দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় সরকার গঠনে দোদুল্যমানতার অবসান হলো এর মধ্য দিয়ে
যাযাদি ডেস্ক
  ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
একটি বিশেষ মুহূর্তে বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি ও শাহবাজ শরিফ

পাকিস্তানের নির্বাচনের প্রায় দুই সপ্তাহ পরে অবশেষে সরকার গঠনের বিষয়ে মতৈক্যে পৌঁছেছে দুই রাজনৈতিক দল মুসলিম লীগ-নওয়াজ ও পিপলস্‌ পার্টি। প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি পদ দুটির মনোনয়ন তারা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে নিয়েছে।

এর ফলে, আসিফ আলি জারদারিকে রাষ্ট্রপতি এবং শেহবাজ শরিফকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পেতে যাচ্ছে দেশটি। ইসলামাবাদের জারদারি হাউসে মঙ্গলবার রাতে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে পিপিপি চেয়ারম্যান বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি এই সমঝোতার ঘোষণা দেন।

৮ই ফেব্রম্নয়ারির নির্বাচনে কোনো দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় সরকার গঠনে দোদুল্যমানতার অবসান হলো এর মধ্য দিয়ে।

সংবাদ সম্মেলনে বিলাওয়াল বলেন, 'রাজনীতি বিষয়ক কমিটির সদস্যদের কয়েকদিনের কঠোর পরিশ্রমের ফলশ্রম্নতিতে আমরা একটা সমঝোতায় পৌঁছতে সমর্থ হয়েছি। জাতীয় পরিষদে যৌথভাবে পর্যাপ্ত আসন থাকায় পিপিপি এবং পিএমএল-এন সরকার গঠনের সামর্থ্য রাখে।'

পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ-পিটিআই ও সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিলের জোট নিয়েও কথা বলেন বিলাওয়াল। বলেন, জোট গঠন করেও তারা সরকারে যাওয়ার সক্ষমতা তৈরি করতে পারেনি।

শেহবাজ শরিফ তার বক্তব্যে মিত্রদের ধন্যবাদ জানান। প্রয়োজনীয় সমর্থন থাকায় আসিফ আলি জারদারির পরবর্তী রাষ্ট্রপতি হতে বাধা নেই বলেও উলেস্নখ করেন তিনি।

এর আগে ইমরান খানের অপসারণের পর এক মেয়াদে ১৬ মাস ক্ষমতায় ছিলো দল দুটি।

অবশ্য, বুধবার সকালেই, সেই সরকারি জোট পাকিস্তান ডেমোক্রটিক মুভমেন্টের অভিজ্ঞতা সুখকর নয় বলে স্থানীয় গণমাধ্যম জিও নিউজের কাছে মন্তব্য করেন পিপিপি মুখপাত্র ফয়সাল করিম কান্দি।

দেশটির সংবিধানে বলা হয়েছে, ভোটের দিন থেকে ২১ দিনের মধ্যে নতুন পার্লামেন্টের প্রথম অধিবেশন ডাকতে হবে। সে হিসেবে, আগামী ২৯ ফেব্রম্নয়ারির মধ্যে সরকার গঠনের সকল প্রক্রিয়া শেষ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

সমঝোতার নেপথ্যে: মঙ্গলবার সকালেই সরকার গঠনে অনিশ্চয়তার জন্য মুসলিম লিগকে দায়ী করেছিলেন বিলাওয়াল। পাকিস্তান পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, পাকিস্তান মুসলিম লিগের (পিএমএল-এন) উদাসীনতার কারণেই সরকার গঠনের প্রক্রিয়ায় অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।

তবে সরকার গঠনের জন্য পিপিপি তাড়াহুড়ো করবে না বলে উলেস্নখ করে তিনি বলেন, "কেউ (পিএমএল-এন) যদি অবস্থান পরিবর্তন করে, তাহলে অগ্রগতি হতে পারে।"

ফলে, এই সমঝোতার নেপথ্যে কী অবস্থান পরিবর্তনের ঘটনা ঘটেছে সেটি একটি প্রশ্ন। জোট গঠনের প্রক্রিয়ায় এই দুই দল অনেকটা এগিয়ে গেলেও টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়েছিল। নওয়াজ শরিফ যেই ফর্মুলায় সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন, বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি সেটিতে রাজি হননি।

রোববার বিলওয়াল ভুট্টো বলেন, 'আমাকে বলা হয়েছিল প্রথম তিন বছর তাদেরকে দিতে এবং পরের দুই বছর আমাকে প্রধানমন্ত্রী হতে। কিন্তু আমি তা মানা করেছি।'

পিপিপি'র মুখপাত্র ফয়সাল করিম কান্দি জিও নিউজকে বলেন, মন্ত্রিত্বের ব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কাকে কোন মন্ত্রণালয় দেওয়া হবে তার জন্য শেহবাজ শরিফের বিবেচনার ওপরই নির্ভর করতে চান তারা।

তবে, জিও নিউজ ক্ষমতা ও প্রশাসনিক কাঠামোর বণ্টন কীভাবে করা হয়েছে তা নিয়ে একটি প্রতিবেদনও প্রকাশ করেছে।

কোনো সূত্রের নাম উলেস্নখ ব্যতিরেকেই উদ্ধৃত করে সেখানে বলা হচ্ছে, পিপিপি শেহবাজ শরিফের মন্ত্রিসভায় কোনো প্রতিনিধি রাখবে না। তার বদলে প্রেসিডেন্সিসহ শীর্ষ সাংবিধানিক পদগুলো দখলে রাখবে তারা। পাঞ্জাবের মন্ত্রিসভায়ও তারা থাকবেন না।

পিপিপি'র ভাগে যা থাকছে: প্রেসিডেন্ট, সিনেট চেয়ারম্যান, পাঞ্জাবের গভর্নর, খাইবার পাখতুনখোয়ার গভর্নর, বালুচিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী, জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকার।

এর বিনিময়ে দলটির সমর্থন নিয়ে কেন্দ্র এবং পাঞ্জাবে সরকার গঠন করবে পিএমএল-এন। আবার, বালুচিস্তানের মুখ্যমন্ত্রী পদ নিশ্চিত করতে গেলে পিএমএল-এনের ভোট লাগবে পিপিপি প্রার্থীর।

প্রতিবেদন অনুযায়ী পিএমএল-এন পাচ্ছে: প্রধানমন্ত্রী, পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী, জাতীয় পরিষদের স্পিকার, সিন্ধুর গভর্নর, বালুচিস্তানের গভর্নর।

বিলাওয়ালের বাবা আসিফ আলি জারদারিকে প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়নের বিষয়টি এই প্রতিবেদনে উলেস্নখ করা সমীকরণের সঙ্গে মিলে যায়। জারদারি পিপিপি'র কো-চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

এর আগে ২০০৮ থেকে ২০১৩ সালেও দেশটির রাষ্ট্রপতি ছিলেন জারদারি। তার স্ত্রী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো ২০০৭ সালে আততায়ীর গুলিতে নিহত হওয়ার পর তিনি এই পদে নির্বাচিত হন।

পিটিআই'র ৮২ সদস্য সুন্নি ইত্তেহাদে : দু'দিন আগে সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিলের সাথে জোট গঠনের ঘোষণা দেয় ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ। সমঝোতা অনুযায়ী, পিটিআই সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে সুন্নি ইত্তেহাদ কাউন্সিলে যোগ দিতে শুরু করেছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে