খাবারের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ফিলিস্তিনিদের ওপর এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়েছে ইসরাইল। এই ঘটনায় এক ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন। গাজার উত্তরাঞ্চলে ইসরাইলি বাহিনী খাবারের অপেক্ষায় থাকা ক্ষুধার্ত ফিলিস্তিনিদের ওপর গুলি চালিয়েছে বলে বেশ কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী নিশ্চিত করেছেন। এ ঘটনার বেশকিছু ভিডিওতেও ঘটনার সত্যতা প্রকাশ পেয়েছে। তথ্যসূত্র : এএফপি, আল-জাজিরা, রয়টার্স
যাচাই করা এসব ফুটেজে দেখা গেছে, সোমবার (১৯ ফেব্রম্নয়ারি) উত্তর গাজার একটি ধ্বংসপ্রাপ্ত উপকূলীয় রাস্তা ধরে পালানোর চেষ্টা করছেন ফিলিস্তিনিরা। সে সময় তীব্র গোলাগুলি চলছিল। সেখানে ইসরাইলি বাহিনীর তান্ডবের কারণে কোনো ধরনের সহায়তা পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ইসরাইলি বাহিনীর ?গুলিতে একজন নিহত হয়েছেন। তিনি মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে ছিটকে পড়েন। ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা 'ওয়াফা নিউজ এজেন্সি' জানিয়েছে, ওই হামলায় কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়েছেন।
ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বিনা প্ররোচনায় ইসরাইলি বাহিনী সেখানে হামলা চালিয়েছে। এ ঘটনায় আহত এক ব্যক্তি বলেন, 'আমি গোলাগুলির শব্দ শুনতে পাই। এরপর কী ঘটেছে আমি জানি না।' অপর এক ব্যক্তি জানান, তিনি সেখানে ময়দা নেওয়ার জন্য গিয়েছিলেন। তিনি বলেন, 'আমরা আমাদের সন্তানদের খাবার দিতে চাই, যেভাবে অন্যরা দিচ্ছে। আমরা সামান্য কিছু ময়দা পাওয়ার আশায় সেখানে গিয়েছিলাম। কিন্তু তারা আমাদের ওপর গুলি চালিয়েছে। তারা ট্যাঙ্ক নিয়ে আমাদের ওপর হামলার জন্য অগ্রসর হচ্ছে।'
বেশকিছু ফুটেজে দেখা গেছে, বস্তা থেকে মাটিতে পড়ে থাকা ময়দা তুলে নিচ্ছে ফিলিস্তিনি শিশুরা। সম্প্রতি গাজায় দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতি হতে পারে বলে সতর্ক করেছে জাতিসংঘ। সেখানে ইসরাইলি বাহিনীর তান্ডবের কারণে তীব্র মানবিক সংকট তৈরি হয়েছে। এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির পরও ইসরাইলি বাহিনী গাজায় কোনো ধরনের মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছে না। সোমবার জাতিসংঘের কয়েকটি সংস্থা সতর্ক করেছে, খাদ্য ও পানির অভাব এবং এর পাশাপাশি রোগের বিস্তারের কারণে গাজায় শিশু মৃতু্যর হার উদ্বেগজনকভাবে বাড়তে পারে।
এদিকে গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সেখানে কমপক্ষে ২৯ হাজার ৯২ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু। এ ছাড়া আহত হয়েছেন আরও ৬৯ হাজার ২৮ জন।
গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলের ইরেজ সীমান্তে প্রবেশ করে আকস্মিক হামলা চালায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এরপর থেকেই গাজায় অভিযানের নামে নিরীহ ফিলিস্তিনিদের ওপর আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী।
গাজায় 'সাময়িক যুদ্ধবিরতি' চেয়ে
জাতিসংঘে মার্কিন খসড়া প্রস্তাব
গাজায় অবিলম্বে মানবিক যুদ্ধবিরতি দাবি করে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে আলজেরিয়া যে প্রস্তাব দিয়েছে, আমেরিকা তার বিপরীতে একটি খসড়া প্রস্তাব তৈরি করেছে। মার্কিন প্রস্তাবে 'যত দ্রম্নত সম্ভব একটি সাময়িক যুদ্ধবিরতির' প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া এতে গাজার দক্ষিণাঞ্চলের শহর রাফায় ইসরাইলি স্থল অভিযানের বিরোধিতা করা হয়েছে।
খসড়া প্রস্তাবে বলা হয়েছে, যত দ্রম্নত সম্ভব সাময়িক যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে। তবে এর আগে হামাসের কাছে থাকা সব জিম্মিকে মুক্তি দিতে হবে। পাশাপাশি গাজায় মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে যেসব বাধা রয়েছে, সেগুলোও দূর করতে হবে।
নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তর থেকে কূটনৈতিক সম্পাদক জেমস বেইস বলেন, ওয়াশিংটনের খসড়া প্রস্তাবে ভাষার উলেস্নখযোগ্য পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন, 'প্রথমবারের মতো আমেরিকা যুদ্ধবিরতি শব্দটি প্রস্তাব করেছে। এটি তাৎপর্যপূর্ণ কারণ ইসরাইল কোনো প্রস্তাবে যুদ্ধবিরতি শব্দটি চায়নি এবং এখন খোদ আমেরিকাই এটি প্রস্তাব করেছে।'
তার মতে, আমেরিকার অবস্থানে স্পষ্টতই পরিবর্তন ঘটেছে। দেশটি ইসরাইলের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তবে আমেরিকা এই খসড়া প্রস্তাব কখন ভোটের জন্য নিরাপত্তা পরিষদে পেশ করা হবে, তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি।
এর আগে ইসরাইলের বিপক্ষে আনা জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের খসড়া প্রস্তাবে দুইবার ভেটো দিয়েছিল আমেরিকা। আর দুইবার ভোটদানে বিরত ছিল।
আমেরিকার খসড়া প্রস্তাবে রাফাহতে স্থল অভিযান না চালাতে ইসরাইলকে সতর্ক করা হয়েছে। ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এই পরিস্থিতিতে ইসরাইল যাতে বড় ধরনের স্থল অভিযান না চালাতে পারে, সে ব্যাপারে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের গুরুত্ব দেওয়া দরকার।
এদিকে, আলজেরিয়া অনুরোধ করেছে, নিরাপত্তা পরিষদ যেন মঙ্গলবার তাদের খসড়া প্রস্তাবের ওপর ভোট দেয়, যেখানে অবিলম্বে মানবিক যুদ্ধবিরতি দাবি করা হয়েছে। তবে আমেরিকা এরই মধ্যে আলজেরিয়ার প্রস্তাবটিতে ভেটো দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে।