গাজায় আগ্রাসন

হামাসকে 'আল্টিমেটাম' ইসরাইলের

রোজার আগে জিম্মি মুক্তি না দিলে রাফাহতে আক্রমণ চলবে ইসরাইলের বিরুদ্ধে ফের শুনানি শুরু জাতিসংঘের আদালতে

প্রকাশ | ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকমী সংগঠন হামাসেকে 'আল্টিমেটাম' দিয়েছে ইসরাইল। তারা বলেছে, আগামী ১০ মার্চের মধ্যে হামাস গাজায় আটককৃত সব জিম্মিকে মুক্তি না দিলে গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাহতে স্থল অভিযান শুরু করা হবে। রোববার এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জায়নবাদী ভূখন্ডের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সদস্য বেনি গ্যান্তজ। তথ্যসূত্র : আনাদলু, আল-জাজিরা, রয়টার্স জেরুজালেমে একটি সম্মেলনে গ্যান্তজ বলেন, 'বিশ্ববাসীর ও হামাস নেতাদের অবশ্যই জানা থাকা উচিত, রোজার আগে আমাদের জিম্মিরা ঘরে না ফিরলে লড়াই সবখানে ছড়িয়ে পড়বে। এমনকি রাফাহও বাদ পড়বে না এ থেকে।' বেনি গ্যান্তজ বলেন, 'আমি খুব স্পষ্টভাবে বলছি, হামাসের একটি অপশন রয়েছে। তারা আত্মসমর্পণ করলে, জিম্মিদের মুক্তি দিলে গাজার বেসামরিক নাগরিকরা রমজান মাস উদযাপন করতে পারবে।' গাজায় আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর বিভিন্ন সময় শতাধিক জিম্মিকে ছেড়ে দেওয়া হলেও হামাসের হাতে এখনও প্রায় ১৩০ জিম্মি রয়েছে বলে মনে করে ইসরাইল। উলেস্নখ্য, ইসলামিক ক্যালেন্ডারের (দিনপঞ্জি) সবচেয়ে পবিত্র মাস রমজান আগামী ১০ মার্চ থেকে শুরু হতে পারে। রাফাহ শহরে গাজার বাস্তুচু্যত ফিলিস্তিনি জনসংখ্যার তিন-চতুর্থাংশ আশ্রয় নিয়েছেন। সেখানে পর্যাপ্ত খাবার, পানি ও ওষুধের সংকটের মধ্যেই বিস্তীর্ণ তাঁবুর নিচে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন তারা। এর আগে জাতিসংঘ জানিয়েছে, রাফাহতে ইসরাইলি স্থল আগ্রাসনের ভয়ে ফিলিস্তিনিরা দেইর আল-বালাহ শরণার্থী শিবিরসহ মধ্য গাজার বিভিন্ন স্থানে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরাইলি বাহিনী খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালের কয়েকজন কর্মীকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেছে। ইসরাইলের দাবি, গাজার রাফাহ শহরটিতে ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাসের অবশিষ্ট শক্ত ঘাঁটি রয়েছে। এ কারণে তারা রাফাহতে স্থল হামলা চালানোর পরিকল্পনা করেছে। আমেরিকাসহ বিশ্বের অধিকাংশ দেশ ইসরাইলকে রাফাহ শহরে তাদের পরিকল্পিত আক্রমণ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে। কিন্তু সেসব উপেক্ষা করেই শহরটিতে স্থল অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী। গাজায় একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি কিংবা একটি মানবিক বিরতির আলোচনার সম্ভাবনা ধীরে ধীরে ম্স্নান হয়ে যাচ্ছে। এই ইসু্যতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের দুইবার ভোট হয়েছে। প্রত্যেকবারই এই প্রস্তাবে ভেটো প্রয়োগ করেছে আমেরিকা। মঙ্গলবার আবারও একটি ভোট হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এবারও এই প্রস্তাবে ভেটো দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে দেশটি। ইসরাইলের বিরুদ্ধে ফের শুনানি শুরু জাতিসংঘের আদালতে ফিলিস্তিনি ভূখন্ডে ইসরাইলের দখলদারত্ব বিষয়ক একটি অভিযোগের শুনানি শুরু হয়েছে জাতিসংঘের অন্যতম অঙ্গপ্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক ন্যায়বিচার আদালতে (ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস-আইসিজে)। সোমবার থেকে আগামী এক সপ্তাহ পর্যন্ত চলবে এই শুনানি। ২০২২ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ গাজা, পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেমে ইসরাইলের অবৈধ দখলদারিত্ব বিষয়ক অভিযোগ তদন্তের অনুরোধ জানিয়েছে আইসিজেকে। সেই তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতেই এই সপ্তাহব্যাপী শুনানি শুরু হয়েছে। ১৯৬৭ সালে মধ্যপ্রাচ্যের আল-আকসা অঞ্চলে ইসরাইল ও ফিলিস্তিনের সীমানা নির্ধারণ করে দিয়েছিল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। কিন্তু মৌখিকভাবে তাতে স্বীকৃতি দিলেও বাস্তবে ইসরাইল নিয়মিত সেই সীমানা লঙ্ঘন করছে। তদন্তে আইসিজে দেখতে পেয়েছে, ১৯৬৭ সাল থেকেই বিভিন্নভাবে পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেমের সীমানাভুক্ত এলাকা দখল করছে ইসরাইল, আবাসন নির্মাণের মাধ্যমে সেখানে ইহুদি বসতকারীদেরও নিয়ে আসা হচ্ছে, সেই সঙ্গে নানা বৈষম্যমূলক নীতি গ্রহণের মাধ্যমে এই দুই অঞ্চলের ফিলিস্তিনিদের চাপে রাখার কৌশলও বজায় রেখেছে ইসরাইল। আর গাজা উপত্যকায় ২০০৫ সাল থেকে দখলদারিত্ব কার্যক্রম স্থগিত রাখলেও এই উপত্যকার সীমান্তপথগুলো সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে ইসরাইল।