নির্বাচনের পর সরকার গঠন নিয়ে এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে অনিশ্চয়তা চলার পর এই ইসু্যতে পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ (পিএমএলএন) এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) মধ্যে যখন সমঝোতা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছে, সেই সময়ে এসে নতুন করে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছেন পিএমএল-এনের জ্যেষ্ঠ নেতারা। তথ্যসূত্র : জিও নিউজ, ডন
দলটির জ্যেষ্ঠ নেতাদের একাংশের ভাষ্য, পাকিস্তান এখন সার্বিকভাবে খুবই টালমাটাল অবস্থায় রয়েছে এবং এখন সরকার গঠনের মানে হলো 'স্বেচ্ছায় মাথায় কাঁটার মুকুট' পরা। পিএমএল-এনের অন্যতম জ্যেষ্ঠ নেতা খাজা সাদ রফিক দলের এই অংশের নেতৃত্বে রয়েছেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম 'এক্সে' এক পোস্টে শুক্রবার খাজা সাদ রফিক বলেন, 'পিটিআই যেহেতু সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছে, তাই তাদেরই উচিত পিপিপির সঙ্গে জোট করে সরকার গঠন করা। দেশের বর্তমান যে পরিস্থিতি, তাতে এই মুহূর্তে সরকার গঠনে নেতৃত্ব দেওয়ার মানে হলো নিজের মুকুটকে কাঁটা দিয়ে সজ্জিত করা এবং আমরা মনে করি, পিএমএল-এনের এমন কোনো ইচ্ছা নেই।'
পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় পার্লামেন্ট ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির (জাতীয় পরিষদ) মোট আসন ২৬৬টি। এসব আসনের একটি ছাড়া বাকি ২৬৫টি আসনে নির্বাচন হয়েছে গত ৮ ফেব্রম্নয়ারি। এটি ছিল পাকিস্তানের ১৬তম পার্লামেন্ট নির্বাচন। সাংবিধানিক বিধি অনুযায়ী, পাকিস্তানে কোনো দল বা জোট যদি সরকার গঠন করতে চায়, তাহলে সেই দল বা জোটকে অবশ্যই ১৩৩টি আসনে জয়ী হতে হবে। তবে ৮ তারিখের নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর দেখা যায়, পিটিআই, পাকিস্তান মুসলিম লিগ-এন (পিএমএলএন) এবং পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি)- দেশটির প্রধান তিনটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আসন পেয়েছে পিটিআই। মোট ৯২টি আসনে জয়ী হয়েছেন পিটিআই প্রার্থীরা।
দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা পিএমএল-এন জয়ী হয়েছে মোট ৭৯টি আসনে এবং ৫৪টি আসন পেয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে পিপিপি। অর্থাৎ, সরকার গঠনের জন্য নূ্যনতম যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রয়োজন, তা পায়নি কোনো দলই। ফলে অভূতপূর্ব এক অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে পাকিস্তানের রাজনীতিতে। এই সংকট কাটানোর সবচেয়ে উপযুক্ত সমাধান ছিল যে কোনো দুটি রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে জোট সরকার গঠন করা, কিন্তু কোন দুই দল জোট গঠন করবে- তা নিয়ে গত ৯ দিন ধরে পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ব্যাপক নাটকীয়তা পরিলক্ষিত হয়েছে। এমনকি উদ্ভূত পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা দখল করে নেবে, এমন গুঞ্জনও শুরু হয়েছিল।
গত শুক্রবার লাহোরে পিএমএল-এনের উচ্চপর্যায়ের একটি বৈঠক হয়েছে। সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন শাহবাজ শরিফ, মরিয়ম নওয়াজ, ইসহাক দার, মরিয়ম আওরঙ্গজেব, খাজা সাদ রফিক, আজম নাজির তারার, আয়াজ সিদ্দিকীসহ আরও কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা। সেই বৈঠকে খাজা সাদ রফিকসহ কয়েকজন নেতা অভিমত দেন, পিএমএল-এনের উচিত কেন্দ্রীয় সরকার গঠনের পরিবর্তে পাঞ্জাব প্রাদেশিক আইনসভায় সরকার গঠনের প্রতি মনোযোগী হওয়া। কারণ পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকার গঠনে নেতৃত্ব দিলে দলের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়বে।
শাহবাজ শরিফ, মরিয়ম নওয়াজ বা মরিয়ম আওরঙ্গজেব বৈঠকে তাৎক্ষণিকভাবে এর জোরালো বিরোধিতা করেননি। বরং পাকিস্তানের সাবেক অর্থমন্ত্রী ইসাক দার জানিয়েছেন, পাঞ্জাবে প্রাদেশিক সরকার গঠনের জন্য পিএমএলএন বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে।
নির্বাচনে কারচুপির দায় স্বীকার
করে কমিশনারের পদত্যাগ
এদিকে, নির্বাচনে কারচুপির দায় স্বীকার করে পদত্যাগ করেছেন রাওয়ালপিন্ডির কমিশনার লিয়াকত আলি চট্টা। রাওয়ালপিন্ডি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সাংবাদিকদের বলেন, তার ওপর আত্মহত্যা করার চাপ ছিল। তবুও তিনি জনসাধারণের সামনে বিষয়গুলো উপস্থাপন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। লিয়াকত আলি বলেন, 'সব আমলাতন্ত্রের কাছে আমার অনুরোধ এই সব রাজনীতিবিদদের জন্য কোনো ভুল করবেন না।'
এর আগে কারচুপি করে তাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে বলে দাবি করেন সিন্ধু প্রদেশের এক জামায়াত নেতা। তিনি নির্বাচনে আসল জয়ী পিটিআই প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করেন।