ইসরাইলের আগ্রাসন
গাজার নাসের হাসপাতালে তান্ডব
অক্সিজেন ফুরিয়ে যাওয়ায় ওই হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যায় থাকা চার রোগীর মৃতু্য গাজায় নিহতের সংখ্যা পৌঁছেছে ২৮ হাজার ৭০০ জনে
প্রকাশ | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
ইসরাইলের সামরিক বাহিনী (আইডিএফ) দাবি করেছে তারা গাজার দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে 'কয়েক ডজন' সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীকে আটক করেছে। সে সময় হাসপাতালের কর্মী এবং রোগীদের গোলাগুলির মুখে জোর করে পালিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। ইসরাইল বলছে, তারা খান ইউনিসের নাসের হাসপাতাল লক্ষ্য করে 'সুনির্দিষ্ট ও সীমিত অভিযান' পরিচালনা করেছে। তাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল যে, হামাস সেখানে জিম্মিদের রেখেছে। তবে এই অভিযোগকে মিথ্যা উলেস্নখ করে নাকচ করে দিয়েছে হামাস। এদিকে, অক্সিজেন ফুরিয়ে যাওয়ায় ওই হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যায় থাকা চার রোগীর মৃতু্য হয়েছে। শুক্রবার এ তথ্য জানিয়েছেন গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। তথ্যসূত্র : বিবিসি, এএফপি
ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রধান মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হ্যাগারি বলেন, যাদের আটক করা হয়েছে, তাদের মধ্যে গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলের ভেতরে হামাসের হামলায় অংশ নিয়েছিল, এমন একজন রয়েছে। তিনি হামাসের একজন অ্যাম্বুলেন্স চালক, যিনি একজন জিম্মিকে গাড়ি চালিয়ে গাজায় নিয়ে গিয়েছিলেন এবং সশস্ত্র গোষ্ঠী 'পপুলার ফ্রন্ট ফর দ্য লিবারেশন অব প্যালেস্টাইন গ্রম্নপ' এর একজন সদস্য। তিনি বলেন, ওই এলাকা থেকে আটককৃত বা আত্মসমর্পণকৃত সন্ত্রাসীদের' জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং মুক্ত করা জিম্মিদের সাক্ষ্য থেকে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে যে, এর আগে ইসরাইলি জিম্মিদের ওই হাসপাতাল প্রাঙ্গণে রাখা হয়েছিল।
তবে হাসপাতালটিতে অভিযান চালিয়ে ইসরাইলি বিশেষ বাহিনী সেখানে জিম্মিদের থাকার বিষয়ে কোনো প্রমাণ পাননি এবং তলস্নাশি এখনো অব্যাহত আছে। হাসপাতালের কিছু ছবি 'বিবিসি' যাচাই করেছে। যাচাই করা ছবিতে দেখা যায়, চিকিৎসাকর্মীরা রোগীদের স্ট্রেচারে করে একটি ধোয়া বা ধুলাভর্তি করিডর দিয়ে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। শয্যাশায়ী একজন রোগীকে ছাদ ধসে পড়া একটি করিডর দিয়ে সরিয়ে নিতে দেখা যাচ্ছে। আরও অনেক রোগীকে দেখা যাচ্ছে, যার মধ্যে একজন ব্যক্তিকে কম্বল দিয়ে জড়িয়ে সরিয়ে নিতে দেখা যাচ্ছে।
অন্য আরেকটি ভিডিও ক্লিপে দেখা যাচ্ছে, মানুষজন আসবাবপত্র এবং অন্যান্য জিনিসপত্র একটি দরজার সামনে এনে জড়ো করছে। আর একজন ইংরেজিতে বর্ণনা করছেন, ইসরাইলি বাহিনী প্রবেশ করতে যাচ্ছে। হাসপাতালের ভেতরে থাকা একজন নার্স বলেন, অভিযান চলার সময় হাসপাতালের ভেতরে অনেকগুলো কুকুর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
হাসপাতালের পরিচালক নাহিদ আবু-তেইমা বলেন, হাসপাতাল ভবনের দৃষ্টিসীমার মধ্যে কয়েক ঘণ্টা ধরে সহিংস গোলা নিক্ষেপ এবং মারাত্মক ধরনের বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে। তিনি বলেন, হাসপাতালে যে রোগীরা ছিলেন, তাদের ওয়ার্ডে সারিবদ্ধ করে রাখা হয়েছিল, যাদের মধ্যে অনেকের মারাত্মক ধরনের জখম রয়েছে। তিনি জাতিসংঘ এবং রেডক্রসের কাছে রোগী ও হাসপাতাল কর্মীদের রক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছেন।
গাজায় চালু রয়েছে এমন হাতেগোনা কয়েকটি হাসপাতালের মধ্যে নাসের হাসপাতাল একটি। এটি গত কয়েক দিন ধরে ইসরাইলের নিরাপত্তা বাহিনী এবং হামাসের মধ্যকার যুদ্ধের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। হাসপাতাল এলাকায় আশ্রয় নেওয়া হাজার হাজার বাস্তুচু্যত মানুষকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়ার একদিনের মাথায় বৃহস্পতিবার এই তান্ডব চালায় আইডিএফ।
ইসরাইলের সামরিক বাহিনী নাসের হাসপাতালের কর্মীদের নিশ্চিত করেছে, সেখানকার কর্মী ও রোগীদের সরে যাওয়াটা বাধ্যতামূলক নয় এবং চিকিৎসকরা গাজার রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়া অব্যাহত রাখতে পারবে। তবে গাজায় থাকা হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র ডা. আশরাফ আল-কাদরা এই তথ্য নাকচ করে জানিয়েছেন, ইসরাইলি সেনারা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নিবিড় পরিচর্যায় থাকা রোগীদের চিকিৎসা সরঞ্জাম বঞ্চিত করে রাখতে বাধ্য করেছে।
হাসপাতালে অক্সিজেন ফুরিয়ে
যাওয়ায় চার রোগীর মৃতু্য
এদিকে, অক্সিজেনের অভাবেও হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যায় থাকা চার রোগী মারা গেছেন। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে হাসপাতালটি ঘেরাও করে রেখেছিল ইসরাইলি সেনারা। ফলে সেখানে হাসপাতালের কর্মী, রোগী এবং অন্যরা তাপ, খাবার ও পানিসহ প্রয়োজনীয় সরবরাহের সংকটের মধ্যে ছিল। এরই মধ্যে বৃহস্পতিবার সেখানে অভিযান চালায় ইসরাইলি বাহিনী।
গত বুধবার ইসরাইলি বাহিনী যাদের হাসপাতাল থেকে সরিয়ে ফেলেছে, হাসপাতালের একজন ফার্মাসিস্ট রাওয়ান আল-মুঘরাবি তাদের মধ্যে একজন। তিনি বলেন, হাসপাতালে 'এক ধরনের প্যানিক (আতঙ্ক) ছড়িয়ে পড়ে এবং এর কারণে মানুষজন চিৎকার করে হুড়োহুড়ি করে একজন আরেকজনের ওপর উঠে যাচ্ছিল।' অনেক মানুষ আহত হয়েছে এবং অনেকে আবার হাসপাতালে ফিরে এসেছে।
এদিকে, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখন্ডে ইসরাইলি হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৮৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এতে উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা পৌঁছেছে প্রায় ২৮ হাজার ৭০০ জনে। এ ছাড়া আহতের সংখ্যাও ছাড়িয়েছে ৬৮ হাজার। যুদ্ধবিধ্বস্ত এই ভূখন্ডটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে এ তথ্য দিয়েছে।