বাষ্প উদ্গীরণ-কম্পন বাড়ছে

ইউরোপে ধ্বংসলীলা চালাতে পারে সুপার ভলকানো

প্রকাশ | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ভূমিকম্প ও আগ্নেয়গিরির মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সামনে মানুষ কতটা অসহায়, ইতিহাসে তেমন দৃষ্টান্তের অভাব নেই। তবে ইতালির নেপলস শহরের কাছে এক 'সুপার ভলকানো' জেগে ওঠার আগেই মানুষকে সতর্ক করতে চান বিজ্ঞানীরা। ফলে স্থানীয় মানুষের মনে দুশ্চিন্তা বেড়েছে। কারণ নেপেলস উপসাগরের মানুষ বড় ঝুঁকি নিয়ে সুপার ভলকানোর ওপর দিন কাটাচ্ছেন। গোটা বিশ্বের বিজ্ঞানীরা সেখানে এসেছেন। তথ্যসূত্র : ডিডবিস্নউ নিউজ নেপলস শহরের আশপাশের মাটির নিচে বাষ্প উদ্গীরণ ও কম্পন বাড়ছে। বিশাল আগ্নেয়গিরির ঝুঁকি লাখ লাখ মানুষের জীবন বিপন্ন করতে পারে। শুধু ভিসুভিয়াস নয়, ফ্লেগ্রিয়ান ক্ষেত্র বলে পরিচিত প্রায় ১৫০ বর্গ কিলোমিটার এলাকাও ঝুঁকির কারণ। ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞ হিসেবে নিকোলা আলেসান্দ্রো নেপেলস শহরের উপকণ্ঠে পোজুয়োলির পরিস্থিতি খতিয়ে দেখছেন। সেখানকার বন্দরে অদ্ভুত কান্ড ঘটছে। দেখে ভাটা মনে হলেও বাস্তবে কিন্তু ঘটনাটা ভিন্ন। খাদের প্রাচীর, টিলা ও গোটা গ্রাম ভূপৃষ্ঠের নিচ থেকে চাপের ঠেলায় পানি থেকে ওপরে উঠে আসছে। নিকোলা বলেন, 'তিন কিলোমিটারের বেশি ভূত্বক এক মিটারের বেশি ওপরে উঠে এলে বোঝা যায়, তার জন্য কত পরিমাণ চাপের প্রয়োজন।' ফ্লেগ্রিয়ান ক্ষেত্রের নিচে সেই চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। সেখানে ভূপৃষ্ঠের নিচে 'সুপার ভলকানো' রয়েছে। বিশাল পরিমাণ লাভা ও গ্যাস ভূত্বক ওপর দিকে ঠেলছে। নিকোলা মনে করেন, 'আমরা এবার ইলাস্টিক থেকে আনইলাস্টিক পর্যায়ে এগিয়ে যাচ্ছি। হাতে একটা লাঠি নিয়ে সেটিকে বাঁকালে প্রথমে সেটি ইলাস্টিক বা নমনীয় পর্যায়ে থাকে। চাপ ছেড়ে দিলে আবার আগের অবস্থায় ফিরে যায়। আবার বাঁকানোর চেষ্টা করলে সেটি মড়মড় করে ভাঙতে শুরু করে। আমি সেই শব্দ শুনতে পাই।' ফ্লেগ্রিয়ান ক্ষেত্রে ঠিক সেভাবেই ভূত্বক ভাঙতে শুরু করেছে। ১৯৭০ সালের মার্চ মাসে সেই ঘটনা দেখা গিয়েছিল। ভূকম্পনের ফলে বাড়িঘরের ক্ষতি হয়েছে। তার আগে মাটি এখনকার মতোই প্রায় এক মিটার ওপরে উঠে গিয়েছিল। সমুদ্রের কিছু অংশে তাপমাত্রা ৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে চলে গিয়েছিল। ১৯৮০-র দশকেও এমন ঘটনা দেখা গিয়েছিল। চাপের ফলে ভূমিকম্প হয়েছিল এবং মাটি আবার নেমে গিয়েছিল। কিন্তু গত ২০ বছর ধরে চাপ আবার বাড়ছে। অর্থাৎ, সিসমোলজিস্ট নিকোলা আলেসান্দ্রোর উদাহরণের মতো লাঠি যেন আবার বাঁকানো হয়েছে। নিকোলা বলেন, 'এর অর্থ, ভূত্বক ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা অত্যন্ত বেশি। তবে এখনই অগ্নু্যৎপাতের আশঙ্কার কারণ নেই, যা বিশাল বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। পরিমাপ অনুযায়ী এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ উচ্চতা ছুঁয়েছে। ১৯৮৪ সালের তুলনায় প্রায় ১০ সেন্টিমিটার উঠে গেছে।' প্রথম সম্ভাবনা অনুযায়ী, ছোট ছোট ভূমিকম্প ঘটতে পারে। গ্যাস বেরিয়ে এলে চাপ কমবে এবং জমি আবার নেমে যাবে। তবে দ্বিতীয় সম্ভাবনা অনুযায়ী বিপর্যয় ঘটতে পারে। চাপের ফলে ভয়ংকর অগ্নু্যৎপাত দেখা যেতে পারে। গোটা নেপলস শহর ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চল ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। সে কারণে সিসমোলজিস্ট নিকোলা আলেসান্দ্রো ও আগ্নেয়গিরি বিশেষজ্ঞ মাউরো দি ভিতো ফ্লেগ্রিয়ান ক্ষেত্রের ওপর কড়া নজর রাখছেন। সুপার ভলকানোর কার্যকলাপ অবিরাম পরিমাপ করে সেই তথ্য এক ধরনের কন্ট্রোল সেন্টারে প্রেরণ করা হচ্ছে। সত্যি বিপদের ঝুঁকি দেখা দিলে জনসাধারণকে সতর্ক করা যাবে। মাউরো বলেন, 'ভূকম্পন পরিমাপ যন্ত্রগুলিতে জোরালো বা ঘনঘন কম্পন ধরা পড়লে আমরা সেটা জানাবো। সঙ্গে সঙ্গে সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ সক্রিয় হয়ে উঠবে এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে অ্যালার্ম বার্তা পাঠানো হবে। আমাদের টেবিলের ওপর একটা লাল রংয়ের টেলিফোন রয়েছে, যা ইতালির সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষের সদর দপ্তরের সঙ্গে অবিরাম যোগাযোগ রেখে চলেছে। বড় ভূমিকম্প দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে খবর চলে যাবে।'