ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় একটি যুদ্ধবিরতি শুরু করতে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর ওপর চাপ অব্যাহত রেখেছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও জর্ডানের বাদশাহ আবদুলস্নাহ। গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাহতে ইসরাইলের স্থল হামলা শুরু করার হুমকির মুখে ইসরাইল-হামাস যুদ্ধবিরতি সমঝোতা নিয়ে মঙ্গলবার ফের কাজ শুরু করেছেন মধ্যস্থতাকারীরা। তথ্যসূত্র : রয়টার্স, আল-জাজিরা, বিবিসি, এএফপি
যুদ্ধবিরতি উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গাজা থেকে ইসরাইলি জিম্মিদের মুক্তি ও লড়াইয়ে দীর্ঘমেয়াদি একটি বিরতির প্রস্তাব সামনে রেখে তিন ধাপের একটি যুদ্ধবিরতির কাঠামো নিয়ে কাজ শুরু করতে আমেরিকা, মিসর, ইসরাইল ও কাতারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কায়রোতে বসার কথা রয়েছে।
আমেরিকা সফররত বাদশাহ আবদুলস্নাহর সঙ্গে হোয়াইট হাউসে বৈঠক করার পর সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট বাইডেন বলেন, 'ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে একটি জিম্মি চুক্তি নিয়ে আমেরিকা কাজ করছে। এর মাধ্যমে গাজায় অবিলম্বে ও অন্তত ছয় সপ্তাহের জন্য শান্ত পরিস্থিতি বিরাজ করবে।' মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানান, তিনি 'রাতদিন' এই ইসু্যটি নিয়ে কাজ করছেন। তিনি বলেন, সংঘাতে ছয় সপ্তাহের বিরতি 'আরও দীর্ঘমেয়াদি কিছু নির্মাণের' ভিত্তি স্থাপন করবে।
হামাসকে নির্মূলের লক্ষ্য নিয়ে টানা চার মাসের বেশি সময় ধরে অবরুদ্ধ গাজা ভূখন্ডে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। এই হামলায় ভূখন্ডটিতে এরই মধ্যে ২৭ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে নিরীহ বেসামরিক নাগরিকের সংখ্যা 'অনেক বেশি' বলে এবার স্বীকার করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি বলেন, 'গাজায় হারিয়ে যাওয়া প্রতিটি নিরপরাধ জীবন এক একটি ট্র্যাজেডি। ইসরাইলি ও ফিলিস্তিনে যারা নিহত হয়েছেন, আমরা তাদের উভয়ের জন্য এবং শোকার্ত পরিবারের সবার জন্য আমরা প্রার্থনা করি।' মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ইসরাইল ও ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে বন্দিবিনিময় চুক্তির বিষয়ে কাজ করছে আমেরিকা। এই চুক্তি 'অন্তত ছয় সপ্তাহ সময়ের জন্য গাজায় টেকসই ও সবার জন্য ভালো সময় নিয়ে আসবে। পরে এটি হয়তো আমরা আরও কিছু সময় স্থায়ী করতে পারি।'
এর আগের মার্কিন আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে বাইডেন বলেন, 'রাফাহতে আশ্রয় নেওয়া ১০ লাখের বেশি মানুষের নিরাপত্তা ও সহায়তা নিশ্চিত করার জন্য একটি বিশ্বাসযোগ্য পরিকল্পনা ছাড়া সেখানে বড় সামরিক অভিযান চালানো উচিত নয়।' সহিংসতা থেকে বাঁচতে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার কারণে রাফাহতে অনেক বাস্তুচু্যত লোক রয়েছে উলেস্নখ করে বাইডেন বলেন, 'তাদের রক্ষা করা দরকার'। তিনি বলেন, 'আমরাও শুরু থেকে (নিজেদের অবস্থানে) স্পষ্ট ছিলাম। আমরা গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের যে কোনো জোরপূর্বক বাস্তুচু্যতির বিরোধিতা করি।'
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বিশ্বাসযোগ্য কোনো পরিকল্পনা ছাড়া ইসরাইলকে রাফাহতে হামলা না চালানোর জন্য বলেছিলেন। কিন্তু তার পরামর্শ উপেক্ষা করেই রোববার রাতে শহরটিতে ব্যাপক হামলা চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। গাজার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইসরাইলের হামলায় রাফাহতে ৭৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত ও বহু আহত হয়েছেন। এই হামলা চলাকালে তাদের বিশেষ বাহিনী অভিযান চালিয়ে রাফা থেকে দুই ইসরাইলি জিম্মিকে উদ্ধার করেছে বলে দাবি ইসরাইলের। সমালোচকরা বলছেন, দুই জিম্মিকে উদ্ধার করতে এতগুলো ফিলিস্তিনির প্রাণ কেড়ে নিল ইসরাইল।
সংবাদ সম্মেলনে জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুলস্নাহ রাফাহ আক্রমণে ইসরাইলের পরিকল্পনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, 'এটি নিশ্চিতভাবে আরেকটি মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করবে। আবদুলস্নাহ ফিলিস্তিনিদের দুর্দশার দিকটি তুলে ধরেন, বিশেষ করে গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফায় যে ১০ লাখের বেশি বেসামরিক আশ্রয়ের খোঁজে আছেন, তাদের মানবেতর পরিস্থিতির দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি। আবদুলস্নাহ বলেন, 'আমরা পাশে দাঁড়িয়ে থেকে এটি চলতে দিতে পারি না। এখনই আমাদের একটি টেকসই যুদ্ধবিরতি দরকার। এই যুদ্ধ অবশ্যই শেষ করতে হবে।'
ইসরাইলকে সামরিক সহায়তা
কমান : বাইডেনকে ইইউ
এদিকে, গাজায় বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের হতাহত হওয়া ঠেকাতে ইসরাইলকে সামরিক সহায়তা প্রদান হ্রাস করার জন্য আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপের দেশগুলোর জোট ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ)। সোমবার বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে ইউরোপীয় ইউনিয়ন কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জোটের পররাষ্ট্রনীতি বিভাগের প্রধান জোসেপ বোরেল মার্কিন প্রেসিডেন্টকে উদ্দেশে বলেন, 'আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সম্প্রতি বলেছেন যে, গাজায় নিহত বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা অনেক বেশি। আমি তাকে বলতে চাই, যদি সত্যি আপনি (বাইডেন) এমনটা মনে করেন, তাহলে ইসরাইলে সামরিক সহায়তা পাঠানো হ্রাস করুন। ইসরাইলি বাহিনীর হাতে অস্ত্র-গোলাবারুদ কম থাকলে গাজায় বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের নিহতের হারও হ্রাস পাবে।'
আমেরিকা যদি ইসরাইলকে সামরিক সহায়তা সহায়তা প্রদান হ্রাস করে, তাহলে ইইউও সেই পথে হাঁটবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন জোসেপ বোরেল। সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, 'একই কথা আমাদের বেলায়ও প্রযোজ্য। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যদি মনে করে যে, গাজায় বেসামরিকদের গণনিধন যজ্ঞ চলছে, তাহলে আমাদেরও সামরিক সহায়তা সংক্রান্ত আইন-বিধি পরিবর্তন করতে হবে।'