ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার রাফাহ শহরে সোমবার রাতভর ভয়াবহ বিমান হামলা চালিয়েছে দখলদার ইসরাইলি সেনারা। তাদের এ হামলায় রাফাহতে এক রাতেই প্রাণ হারিয়েছেন শতাধিক ফিলিস্তিনি। ফিলিস্তিন রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি (পিসিআরসি) এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, ইসরাইলিদের হামলায় অনেক ভবন ধসে পড়েছে। যেগুলোর এখন বহু মানুষ আটকা পড়ে আছেন। গত ৭ অক্টোবর হামাস ও ইসরাইলের মধ্যে সংঘাত শুরু হয়। এরপর চার মাসের বেশি সময় ধরে গাজায় বর্বরতা চালাচ্ছে তারা। এতে এখন পর্যন্ত ২৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যার বেশিরভাগই নারী ও শিশু। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা, বিবিসি, রয়টার্স, এএফপি
সংঘাতের শুরুর দিকে ইসরাইলি সেনারা প্রথমে গাজার উত্তরাঞ্চলে হামলা চালায়। ওই সময় তারা সাধারণ মানুষকে দক্ষিণাঞ্চলে চলে যেতে বলে। এরপর দক্ষিণাঞ্চলের খান ইউনিস থেকে সাধারণ মানুষকে রাফাহতে চলে যেতে বলে তারা। ইসরাইলি বাহিনীর নির্দেশনা ও জীবন বাঁচাতে প্রায় ১৩ লাখ মানুষ রাফাহতে আশ্রয় নেন। কিন্তু এখন সেখানেই হামলা চালানো শুরু করেছে দখলদার ইসরাইল।
হামলা থামাতে বাইডেনের চাপ
বেসামরিক লোকজনকে নিরাপদ রাখার একটি 'গ্রহণযোগ্য এবং কার্যকরী' পরিকল্পনা ছাড়া ইসরাইলের উচিত হবে না গাজার রাফায় অভিযান চালানো। রোববার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন। রাফাহ শহরে সম্ভাব্য ইসরাইলি অভিযান নিয়ে এখন পর্যন্ত এটিই ছিল প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সবচেয়ে বেশি শক্ত বক্তব্য। বাইডেন গত সপ্তাহে গাজায় ইসরাইলি সামরিক অভিযানকে 'মাত্রাতিরিক্ত' বলে বর্ণনা করেন।
শান্তিচুক্তি নিয়ে মিসরের হুমকি
এর আগে মিসর হুমকি দেয়, ইসরাইলের সেনাবাহিনী যদি গাজার সীমান্ত শহর রাফাহতে স্থল অভিযান চালায়, তাহলে তারা ইসরাইলের সঙ্গে শান্তিচুক্তি থেকে বের হয়ে আসবে। রোববার এ কথা বলেছেন দুজন মিসরীয় কর্মকর্তা এবং একজন পশ্চিমা কূটনীতিক। মিসর আশঙ্কা করছে, রাফাহতে স্থল অভিযান শুরু হলে অবরুদ্ধ গাজায় ত্রাণ সরবরাহের প্রধান পথ বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
এই হুমকির আগে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, হামাসের বিরুদ্ধে গত চার মাস ধরে চলা যুদ্ধে জিততে হলে রাফাহতে সেনাবাহিনী পাঠাতে হবে। তিনি বলেন, রাফাহতে এখনো হামাসের চারটি ব্যাটালিয়ন আছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে মিসর ও ইসরাইলের মধ্যকার 'ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি' বাতিলের হুমকি দেওয়া হয়। এই চুক্তি প্রায় ৫০ বছর ধরে আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়তা করেছে।
ইসরাইল ও মিসর '৭০-এর দশকে তৎকালীন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের মধ্যস্থতায় ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি করার আগে পাঁচবার যুদ্ধ করেছে। মিসর গাজার সঙ্গে তাদের সীমান্ত শক্তভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে, পাঁচ কিলোমিটার বাফার জোন তৈরি করেছে, মাটির ওপর এবং নিচে কংক্রিটের দেয়াল তুলেছে। হামাস ওই সীমান্তে সুড়ঙ্গ দিয়ে অস্ত্র পাচার করে বলে ইসরাইলের তোলা অভিযোগ মিসর নাকচ করে বলেছে, তাদের দিকে মিসরের বাহিনীর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ আছে। মিসরের আশঙ্কা, লাখ লাখ ফিলিস্তিনি শরণার্থীর ঢল নামতে পারে, যাদের আর গাজায় ফেরত যেতে দেওয়া হবে না।
গাজায় দুই জিম্মিকে মুক্ত করার দাবি ইসরাইলের
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার রাফাহ শহর থেকে দুই ইসরাইলি জিম্মিকে মুক্ত করার দাবি করেছে ইসরাইল। সোমবার দেশটির সেনাবাহিনী জানিয়েছে, বিশেষ বাহিনীর একটি অভিযানে তাদের উদ্ধার করা হয়েছে। গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস প্রায় ২৪০ ইসরাইলিকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায়। তাদের মধ্যে উদ্ধার করা এই দুই ইসরাইলিও ছিলেন।
ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, উদ্ধারের পর তাদের দেশটির হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে তাদের চিকিৎসা হচ্ছে। উদ্ধার হওয়া দুই ইসরাইলির স্বাস্থ্যের বিষয়ে হাসপাতালের একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তারা এখন 'ভালো অবস্থায়' রয়েছেন।