ইসরাইলি আগ্রাসন
গাজার রাফাহ নিয়ে বিশ্বে উদ্বেগ বাড়ছে
রাফাহতে অবস্থানকারীদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই, অভিযান চালালে হাজার হাজার মানুষ নিহত হবে জাতিসংঘ সদর দপ্তরের নিচে হামাসের কমান্ড টানেল!
প্রকাশ | ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
গাজার রাফাহ শহরে ইসরাইলের পরিকল্পিত হামলার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মহল থেকে কড়া সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে। ইসরাইলের গাজা হামলার ফলে বাস্তুচু্যত সব মানুষ এখন মিসর সীমান্তবর্তী দক্ষিণের এই শহরে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। তাদের সংখ্যা গাজার মোট জনসংখ্যার কমপক্ষে অর্ধেক। সেখানেই স্থল অভিযান চালানোর ঘোষণা দিয়েছে ইসরাইল। এখন সেখানে বিমান হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল। এই হামলায় রোববার রাফাহ শহরে ২৮ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এদিকে, গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসনে এখন পর্যন্ত ২৮ হাজার ৬৪ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৬৭ হাজার ৬১১ জন আহত হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ছোট্ট ওই ভূখন্ডটিতে ইসরাইলের হামলায় অন্তত ১১৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১৫২ জন। তথ্যসূত্র : বিবিসি, আল-জাজিরা, এএফপি, রয়টার্স
গত বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেন, হামাসের পতন ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই ইসরাইলের হাতে। তিনি বলেন, একটি সম্পূর্ণ এবং চূড়ান্ত বিজয় ছাড়া অন্য কোনো সমাধান নেই। হামাস যদি গাজায় টিকে থাকে, তবে আবারও তারা হুমকি হয়ে উঠবে। এরপর ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সেনাবাহিনীকে রাফায় অভিযানের নির্দেশ দেন। তিনি শুক্রবার গভীর রাতে সামরিক ও নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরের 'জনসংখ্যা সরিয়ে নেওয়া এবং হামাসের ব্যাটালিয়ন ধ্বংস করার জন্য একটি সম্মিলিত পরিকল্পনা' মন্ত্রিসভায় জমা দিতে বলেন। গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলের অবৈধ বসতিতে হামাসের হামলার জবাবে জায়নবাদী সরকারের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কঠোর সমালোচনা করার পর নেতানিয়াহুর এই ঘোষণা বিশ্ব নেতা এবং জাতিসংঘের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
এই অবস্থায় সতর্কতা উচ্চারণ করেছেন সাবেক ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও বর্তমানে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন, ডাচ্ পররাষ্ট্রমন্ত্রী হ্যাঙ্কি ব্রম্নইন্স স্স্নোট। ডেভিড ক্যামেরন বলেছেন, ওই এলাকায় গাজার প্রায় অর্ধেক মানুষ বসবাস করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে ডেভিড ক্যামেরন বলেন, রাফাহতে সামরিক অভিযানের পরিপ্রেক্ষিত নিয়ে তিনি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এ ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার হলো, অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ করা এবং জিম্মিদের মুক্ত করা। এরপর পরিস্থিতিকে টেকসই এবং স্থায়ী যুদ্ধবিরতির দিকে নিয়ে যাওয়া।
হাঙ্কি ব্রম্নইন্স সতর্ক করেছেন এই বলে, সেখানে ইসরাইল অভিযান চালালে বিপুল পরিমাণ মানুষের প্রাণহানি হবে। যদি রাফাহতে স্থল অভিযান চালানো হয়, তাহলে খুব করুণ পরিণতি হবে বলে সতর্কতা দিয়েছে সৌদি আরব। আর গাজার হামাস শাসকরা বলেছেন, সেখানে হামলা চালানো হলে হাজার হাজার মানুষ হতাহত হবেন। হামাস এক বিবৃতিতে বলেছে, যে কোনো সামরিক পদক্ষেপের বিপর্যয়মূলক প্রতিক্রিয়া হবে, যা 'রাফাহ আক্রমণ করলে হাজার হাজার শহীদ এবং আহত হতে পারে'।
একই বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও জাতিসংঘ। দাতা সংস্থাগুলো বলেছে, মিসর সীমান্তের এই শহর থেকে প্রতিজন মানুষকে উদ্ধার করা অসম্ভব। পরিস্থিতি মূল্যায়নের জন্য গাজায় অবস্থান করছেন জাতিসংঘের মানবিক বিষয়ক সমন্বয়কারী জেমি ম্যাকগোলড্রিক। তিনি বলেছেন, ইসরাইলি সেনারা অভিযান চালালে রাফাহতে অবস্থানকারীদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই। তিনি আরও বলেন, যেসব এলাকাকে নিরাপদ ঘোষণা করা হয়েছিল, তা আর নিরাপদ নেই। এখন যদি এসব মানুষকে সরে যেতে হয়, তাহলে তারা কোথায় যাবে? প্রশ্ন রাখেন তিনি। বলেন, 'আমরা শুধু একটি ভয়াবহ পরিস্থিতির আশঙ্কা করছি। এতে অবস্থা শুধু আরও ভয়াবহ হবে।'
জাতিসংঘ সদর দপ্তরের নিচে হামাসের কমান্ড টানেল!
এদিকে, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় জাতিসংঘের সদর দপ্তরের নিচে হামাসের কমান্ড টানেল খুঁজে পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে ইসরাইল। একই সঙ্গে ইসরাইলি সামরিক বাহিনী এটিকে হামাসের শোষণের নতুন প্রমাণ বলেও অভিহিত করেছে। ইসরাইলি সামরিক বাহিনী দাবি করেছে, শত শত মিটার দীর্ঘ এবং আংশিকভাবে ইউএনআরডাবিস্নউএর গাজা সদর দপ্তরের নিচে পরিচালিত একটি টানেল নেটওয়ার্ক খুঁজে পেয়েছে।
গত বছরের ৭ অক্টোবরে ইসরাইলে নজিরবিহীন হামলা চালায় ফিলিস্তিনের গাজা ভূখন্ডের স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস। আর হামাসের সেই হামলায় ফিলিস্তিনে নিযুক্ত জাতিসংঘের শরণার্থী-বিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডাবিস্নউএ-এর কর্মীদের জড়িত থাকার অভিযোগ সামনে এনেছে ইসরাইল। এরপর থেকেই সংস্থাটি বেশ সংকটে রয়েছে এবং আমেরিকা-যুক্তরাজ্যসহ বেশ কয়েকটি দেশ জাতিসংঘের এই সংস্থার অর্থায়ন স্থগিত করেছে।