পাকিস্তানে নির্বাচন

হাত-পা বাঁধা থাকলেও তীরে উঠেছে ইমরানের দল

ইমরানকে ভোটের আগে কয়েকটি মামলায় সাজা দিয়ে নির্বাচনে অযোগ্য করার চেষ্টা, ব্যালট পেপার থেকে দলের প্রতীক 'ক্রিকেট ব্যাট' সরিয়ে ফেলা সবই হয়েছে

প্রকাশ | ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে এখন পর্যন্ত যে ফল পাওয়া গেছে, তা একদিকে যেমন পরিষ্কার, আবার জটিলও বটে। কারাবন্দি ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফের ব্যানারে ভোটে দাঁড়াতে যাদের পথে বাধা সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়েছিল, সেই স্বতন্ত্র প্রার্থীরাই সবচেয়ে বেশি আসন জিতে নিয়েছেন। অন্যদিকে, দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসন জেতা সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ (পিএমএল-এন) এখন নিজেদের 'একক বৃহত্তম দল' হিসেবে দাবি করতেই পারে। তবে এর মধ্যে একটা বিষয় পরিষ্কার, মামলা আর সাজা দিয়ে নেতা ইমরানকে কারাবন্দি করে রাখা হলেও পিটিআইর জনপ্রিয়তা যে সোস্যাল মিডিয়ার ফোলানো-ফাঁপানো কোনো বিষয় নয়, বরং দলটির প্রতি যে শক্ত জনসমর্থন রয়েছে, সেটি এই ফলের মধ্যে দিয়েই প্রমাণ হয়েছে। ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৯৯টি আসনে জয় পেয়েছেন। আর নওয়াজের পাকিস্তান মুসলিম লিগের (পিএমএল-এন) প্রার্থীরা পেয়েছেন ৬৯টি আসন। ইমরানের দল যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে, তার মঞ্চ অনেক আগে থেকেই তৈরি করা হয়েছিল। দলের প্রতিষ্ঠাতাকে (ইমরান) ভোটের আগে কয়েকটি মামলায় সাজা দিয়ে নির্বাচনে অযোগ্য করার চেষ্টা, ব্যালট পেপার থেকে দলের প্রতীক 'ক্রিকেট ব্যাট' সরিয়ে ফেলা, সবই হয়েছে। ২০২২ সালে ক্ষমতাচু্যত ইমরান শুরু থেকেই বলে আসছিলেন, তার বিরুদ্ধে করা মামলাগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এই বিরূপ পরিস্থিতিতে স্বতন্ত্র হিসেবে ভোটে অংশ নেওয়া পিটিআইর প্রার্থীরা স্বস্তিতে নির্বাচনী প্রচারেও অংশ নিতে পারেননি। কারণ তাদের অধিকাংশই হয় জেলে আছেন, নয়তো পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। দুই বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটির অভিযোগ, তাদের প্রার্থীদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে এবং নির্বাচনী প্রচারে নামার চেষ্টা করলেই পুলিশ তুলে নিয়ে গেছে। যদিও কর্তৃপক্ষ বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। এতসব বাধার পরও পিটিআইর ব্যানারে নির্বাচনে অংশ নেওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থীরাই অন্যদের চেয়ে বেশি আসন জিতে নিয়েছেন। অনেকটা এভাবে বলা যায়, হাত-পা বেঁধে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। তারপরও ইমরানের দল সাঁতরে তীরে উঠেছে। অন্যদিকে, নির্বাচনের আগে অধিকাংশ পর্যবেক্ষকের ধারণা ছিল, নওয়াজের পিএমএল-এনই জিততে যাচ্ছে। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে দলটি রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। আর ঘাতকের হাতে নিহত সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো ও সাবেক প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারির সন্তান বিলওয়াল ভুট্টোর পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) রয়েছে তৃতীয় স্থানে। ভোটের ফল মোটামুটি পরিষ্কার হলেও আসল জটিলতা রয়েছে পরবর্তী ধাপে। বিভিন্ন দলের প্রার্থীদের চ্যালেঞ্জে ফল পাল্টেও যেতে পারে। কিন্তু এটিই শেষ নয়। সরকার গঠন করতে হলে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কোনো একটি দলে যোগ দিতে হবে। আর সেটি করতে হবে প্রার্থীদের অফিসিয়ালি বিজয়ী ঘোষণা করার পর থেকে তিনদিনের মধ্যে। স্বাভাবিকভাবেই পিটিআইকে এখন দ্রম্নত সমাধানের পথ বের করতে হবে। নির্বাচনে অংশ দলগুলো এরই মধ্যে জয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থীদের দিকে নজর দিতে শুরু করেছে; প্রতিটি দলই আশাবাদী তাদের দলে ভেড়ানোর ব্যাপারে। একই সময় সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে পার্লামেন্টে যেতে নওয়াজের দল পিএমএল-এনের জোট গঠন করতে হবে। অন্যদিকে, বর্তমান পরিস্থিতিতে ধরে নেওয়া যায়, শনিবার কয়েকটি মামলায় জামিন পেলেও সহসাই কারাগার থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না ইমরান খান। ফলে পিটিআইকেও ঠিক করতে হবে, কে তাদের নেতৃত্ব দেবেন। নির্বাচনের ফল পাকিস্তানের রাজনীতিকে আরেকটি বড় প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা অনেকটাই নিশ্চিত, বিভিন্ন সময় সেনাবাহিনীর বিরোধিতা করলেও তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ও পিএমএল-এন নেতা নওয়াজ শরিফ তাদের সমর্থন পাচ্ছেন। তারপরও ইমরানের দল সমর্থিত প্রার্থীরা জিতেছেন। এ অবস্থায় পাকিস্তানের রাজনীতিতে সবসময় প্রভাব বিস্তার করে আসা সেনাবাহিনীর ভূমিকা কী হবে? পাকিস্তানে 'রাজনীতির ভেতরে রাজনীতি' নিয়ে প্রায়ই কথা শোনা যায়। গতিশীল ক্ষমতার মধ্যে জটিলতা আর কূটচাল; নানা জোট, ক্ষোভ- এসব নতুন কিছু নেয় দেশটির রাজনীতিতে। ফলে কেমন নির্বাচন হতে যাচ্ছে, সেটা অনেকটা আগে থেকেই অনুমান করে রেখেছিলেন অনেকে। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা