গাজায় আগ্রাসন

গাজাজুড়ে চলছে তীব্র যুদ্ধ :ইসরাইল

গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত বেড়ে প্রায় ২৮ হাজার রাফাহর সব বাসিন্দাকে সরাতে চান নেতানিয়াহু পশ্চিম তীরের হাসপাতালে ইসরাইলি হত্যাকান্ড যুদ্ধাপরাধ হতে পারে

প্রকাশ | ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ফিলিস্তিনের গাজার অন্যতম শহর গাজা সিটিতে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী -রয়টার্স অনলাইন
গাজাজুড়ে হামাসের সঙ্গে তীব্র যুদ্ধ চলছে বলে জানিয়েছে ইসরাইলি সেনাবাহিনী। সবচেয়ে বেশি লড়াই হচ্ছে দক্ষিণ, পশ্চিম ও উত্তর গাজায়। এসব এলাকায় অব্যাহত বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে দখলদার বাহিনী। ইসরাইলের সেনাবাহিনী দাবি করেছে তাদের সঙ্গে লড়াইকালে মধ্য গাজায় বেশকিছু হামাস যোদ্ধা নিহত ও আটক হয়েছে। দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসেও হামাসের বেশ কিছু ঘাঁটিতে অভিযান চালানো হয়েছে। এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, হামাসের কাছ থেকে রকেটচালিত গ্রেনেড, অ্যাসল্ট রাইফেলসহ সামরিক সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা, বিবিসি, রয়টার্স, এএফপি, সিএনএন গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর তান্ডব কমছেই না। বরং গাজার এমন কোনো স্থান বাকি নেই যেখানে তারা হামলা চালায়নি। এই উপত্যকার কোথাও এখন নিরাপদ নয়। জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, রাফায় অবস্থান করা লাখ লাখ ফিলিস্তিনি চরম বিপর্যয়ের মুখোমুখি। তাদের যাওয়ার জন্য কোনো নিরাপদ স্থান নেই। গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহত বেড়ে প্রায় ২৮ হাজার গত ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় কমপক্ষে ২৭ হাজার ৯৪৭ জন নিহত হয়েছেন। এছাড়া আহত হয়েছেন আরও ৬৭ হাজার ৪৫৯ জন। খান ইউনিসে ইসরাইলি স্নাইপাররা নাসের হাসপাতালের বাইরে অন্তত ২১ জনকে হত্যা করেছে। নিহতদের মধ্যে চিকিৎসা কর্মীও রয়েছেন। গাজায় ২৪ ঘণ্টায় ১০৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরও ১৪২ জন আহত হয়েছেন। রাফাহর সব বাসিন্দাকে সরাতে চান নেতানিয়াহু ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাহর সব বাসিন্দাকে সরাতে চান ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনীকে (আইডিএফ) শিগগিরই এ সংক্রান্ত একটি পরিকল্পনা তৈরি করার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি। শুক্রবার এক বিবৃতিতে 'আইডিএফ' বলেছে, 'আমরা শিগগিরই গাজায় বড় আকারের অভিযান পরিচালনা করতে যাচ্ছি এবং সেই অভিযানে বেসামরিক লোকজন হতাহতের ঘটনা এড়াতে চাইছি। এ কারণেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী (নেতানিয়াহু) এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় রাফাহ থেকে বেসামরিক ফিলিস্তিনিদের সরাতে চাইছে এবং আইডিএফকে এ সংক্রান্ত একটি পরিকল্পনা প্রণয়নের নির্দেশ দিয়েছে।' জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর রাফাহতে বসবাস করেন ১৩ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি। তবে ইসরাইলি বাহিনী গাজায় অভিযান শুরুর পর তাদের একটি বড় অংশই নিজেদের বাড়িঘর ছেড়ে বিভিন্ন শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন। যে অল্পসংখ্যক ফিলিস্তিনি রাফায় এখন রয়েছেন, এবার তাদেরও সরানোর পরিকল্পনা করছে ইসরাইল। গত বৃহস্পতিবার অবশ্য এক ভাষণে নেতানিয়াহু বলেছিলেন, 'হামাসের সর্বশেষ ঘাঁটি হলো রাফাহ। শিগগিরই সেখানে ইসরাইলি অভিযান শুরু করবে।' আইডিএফের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, হামাসের অন্তত চারটি ব্যাটালিয়ন আত্মগোপন করে আছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, 'আমাদের এই অভিযানের মিশন হামাসকে সম্পূর্ণ নির্মূল করা। রাফাতে (হামাসের) চারটি ব্যাটালিয়নের সঙ্গে মোকাবিলা না করে এই মিশন শেষ করা সম্ভব নয়।' প্রসঙ্গত, এই রাফাহ শহরের কাছেই অবস্থিত গাজা ও মিশরের সিনাই অঞ্চলের সীমান্তপথ রাফাহ ক্রসিং। এই সীমান্তপথটি গাজার বাসিন্দাদের 'লাইফ লাইন' নামেও পরিচিত। কারণ গাজা উপত্যকায় বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের জন্য জাতিসংঘ ও অন্য দাতাগোষ্ঠীগুলোর ত্রাণ ও সহায়তা পণ্য গাজায় পৌঁছায় এই সীমান্তপথ দিয়েই। পশ্চিম তীরের হাসপাতালে ইসরাইলি হত্যাকান্ড যুদ্ধাপরাধ হতে পারে ইসরাইলি কমান্ডোরা চিকিৎসা কর্মী ও মুসলিম নারীর ছদ্মবেশ ধরে ফিলিস্তিনের অধিকৃত পশ্চিম তীরের হাসপাতালে তিন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে যে কান্ড ঘটিয়েছে তা যুদ্ধাপরাধ হতে পারে বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘের একদল বিশেষজ্ঞ। আইডিএফ জানিয়েছিল, গত ২৯ জানুয়ারি ইসরাইলের সেনাবাহিনী, অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেত ও ইসরাইলি সীমান্ত পুলিশ পশ্চিম তীরের জেনিনে ইবনে সিনা হাসপাতালে এক যৌথ ছদ্মবেশী অভিযান চালিয়ে তিন ফিলিস্তিনি 'জঙ্গিকে' হত্যা করেছে। পশ্চিম তীরের অস্থিরতা কবলিত ফিলিস্তিনি শহরগুলোর মধ্যে জেনিন অন্যতম। শহরটির ইবনে সিনা হাসপাতালে ইসরাইলের ওই গোপন অভিযানে নিহতদের মধ্যে বাসেল আল-গাজ্জাভি নামের এক ফিলিস্তিনি ছিলেন, তিনি এর আগে ইসরাইলের চালানো বিমান হামলায় আহত হয়ে সেখানে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। শুক্রবার এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, 'আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন অনুযায়ী, হাসপাতালে চিকিৎসাধীন প্রতিরোধ ক্ষমতাহীন আহত এক রোগীকে হত্যা করা যুদ্ধাপরাধ। আপাতদৃষ্টিতে ক্ষতিহীন, সুরক্ষিত চিকিৎসা কর্মী ও বেসামরিকদের ছদ্মবেশ ধরে ইসরাইলি বাহিনী দৃশ্যত বিশ্বাসভঙ্গ করেছে যা যে কোনো পরিস্থিতিতে নিষিদ্ধ; এখানেও যুদ্ধাপরাধ সংঘটিত হয়েছে।' তারা ইসরাইলের কর্তৃপক্ষের প্রতি এ বিষয়ে একটি তদন্ত পরিচালনার আহ্বান জানিয়েছেন। এই বিশেষজ্ঞরা জাতিসংঘের একটি নির্দিষ্ট মানবাধিকার ইসু্য পরীক্ষা করার জন্য নিযুক্ত বিশেষ প্রতিবেদক। ইবনে সিনা হাসপাতালের সিসিটিভির ফুটেজে দেখা গেছে, প্রায় ১০ জনের একটি দল বিভিন্ন বেসামরিক পোশাকে ও চিকিৎসকদের পোশাক পরে একটি করিডোর ধরে যাচ্ছে, তারা অ্যাসল্ট রাইফেলে সজ্জিত; তাদের মধ্যে অন্তত তিনজন নারীদের পোশাক পরা যাদের মাথায় স্কার্ফও ছিল। ইসরাইলি সামরিক বাহিনীর দাবি, ওই হাসপাতালে যাদের হত্যা করা হয়েছে তাদের মধ্যে ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাসের এক যোদ্ধাও ছিলেন, অন্য দুইজন জেনিন ব্রিগেড ও ইসলামিক জিহাদের সশস্ত্র শাখার পক্ষে কাজ করতেন।