হোয়াইট হাউসে সংবাদ সম্মেলন
স্মৃতিশক্তি নিয়ে প্রশ্নে ক্ষুব্ধ বাইডেন
লোকজন এসব প্রশ্ন কীভাবে তুলতে পারে? আমার স্মৃতিশক্তি যথেষ্ট ভালো আছে ইসরাইলি হামলাকে 'বেপরোয়া' বললেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট
প্রকাশ | ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
নিজের বয়স-স্মৃতিশক্তি নিয়ে বারবার প্রশ্ন ওঠায় ব্যাপক বিরক্তি ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। শুক্রবার হোয়াইট হাউসে টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই ক্ষোভ-বিরক্তি প্রকাশও করেছেন তিনি। এক প্রশ্নের উত্তরে বাইডেন বলেন, 'এমনকি অনেকে এমনও বলছে, আমার ছেলে (বিউ বাইডেন) কবে মারা গেছে তা আমি ভুলে গেছি। লোকজন এসব প্রশ্ন কীভাবে তুলতে পারে? আমার স্মৃতিশক্তি যথেষ্ট ভালো আছে।' তথ্যসূত্র : বিবিসি
২০২২ সালে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিরুদ্ধে আফগানিস্তান সংক্রান্ত রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ গোপন নথি ফাঁসের অভিযোগ উঠেছিল। সেই অভিযোগ তদন্ত করতে দেশটির বিচারবিষয়ক মন্ত্রণালয় নিয়োগ করেছিল রবার্ট হুর নামের এক আইনজীবীকে, যিনি বর্তমানে মার্কিন বিচারবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের বিশেষ উপদেষ্টার পদে রয়েছেন।
প্রসঙ্গত, বাইডেনের পূর্বসূরি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অন্যতম আস্থাভাজন কর্মকর্তা ছিলেন রবার্ট হুর। ট্রাম্প তাকে মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের শীর্ষ প্রসিকিউটর করেছিলেন।
তদন্ত শেষে সম্প্রতি ৩৪৫ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছেন হুর। সেখানে তিনি বলেছেন, তদন্তকাজের অংশ হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন তিনি ও তার নেতৃত্বাধীন দল। পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী সেই সাক্ষাৎকারে বাইডেনকে আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন মেয়াদ এবং তার বড় ছেলে বিউ বাইডেনের মৃতু্যর তারিখ জিজ্ঞেস করেছিলেন হুর; কিন্তু বাইডেন এই দুই প্রশ্নের কোনোটিরই সঠিক উত্তর দিতে পারেননি।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার দুই মেয়াদের (২০০৯ সাল থেকে ২০১৭ সাল) পুরো সময়জুড়ে আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন জো বাইডেন। তার বড় ছেলে ও আইনজীবী বিউ বাইডেনের যখন মৃতু্য হয়, সে সময়ও ভাইস প্রেসিডেন্টের পদে ছিলেন তিনি। ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ২০১৫ সালে মারা যান বিউ।
প্রতিবেদনে জো বাইডেন সম্পর্কে বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন রবার্ট হুর; তার মধ্যে একটি ছিল, 'সাক্ষাৎকার পর্বে তিনি (বাইডেন) যেভাবে নিজেকে উপস্থাপন করেছেন, তাতে আমাদের মনে হয়েছে যে, তিনি একজন সহানুভূতিশীল, শিক্ষিত, ভদ্র এবং বয়স্ক মানুষ, যার স্মৃতিশক্তি দুর্বল। এমনকি তিনি কবে আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং কোন্ বছর তার বড় ছেলে মারা গেছেন, তার সঠিক উত্তর দিতে পারেননি।'
বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে বাইডেন বলেন, 'আমি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট এবং জাতীয়-আন্তর্জাতিক অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইসু্য নিয়ে আমাকে মাথা ঘামাতে হয়। (যখন এই প্রশ্ন করা হয়েছিল) সে সময় আমি অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার নিয়ে ভাবছিলাম এবং এটাকেই তারা স্মৃতিশক্তির লোপ বলে ধরে নিয়েছে। আর একটা কথা হলো, লোকজন বারবার আমাকে আমার ছেলের মৃতু্যর ব্যাপারটি মনে করিয়ে দেবে, এটা আমি একদমই চাই না। আমার ছেলে কবে মারা গেছে, তা মনে রাখার কোনো প্রয়োজন আমার নেই।'
১৯৪২ সালের ২০ নভেম্বর পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যে জন্মগ্রহণ করেন জোসেফ রবিনেট বাইডেন। পরে রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার পর যিনি পরিচিতি পান জো বাইডেন নামে ১৯৭২ সালে মাত্র ৩০ বছর বয়সে মার্কিন পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ সিনেট নির্বাচনে জয়ী হয়েছিলেন। আমেরিকার ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সে সিনেটের সদস্যপদ লাভের রেকর্ডটি তার।
আবার একই সঙ্গে, সবচেয়ে বেশি বয়সে দেশটির প্রেসিডেন্ট হওয়ার রেকর্ডেরও অধিকারী বাইডেন। ২০২০ সালে যখন তিনি আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন, সে সময় তার বয়স ৭৭ বছর। বর্তমানে ৮১ বছর বয়সে পা দিয়েছেন জো বাইডেন এবং চলতি বছর নভেম্বরে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হবে দেশটিতে।
জো বাইডেন সেই নির্বাচনে প্রার্থী হতে চান এবং মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী, তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে প্রার্থিতা করার আইনগত এক্তিয়ার রাখেন। কিন্তু আমেরিকার প্রধান বিরোধী দল রিপাবলিকান পার্টির পাশাপাশি বাইডেনের নিজের রাজনৈতিক দল ডেমোক্রেটিক পার্টির একাংশ দীর্ঘ দিন ধরে প্রচার করছেন যে, বাইডেনের বয়স অনেক বেশি এবং বয়সজনিত কারণে তিনি স্মৃতিভ্রংশ সমস্যায় ভুগছেন। এ কারণে আসন্ন নির্বাচনে তার প্রার্থিতা করা উচিত হবে না।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হোয়াইট হাউসের ডিপেস্নামেটিক রিসেপশন হলে চলছিল সংবাদ সম্মেলনে। বাইডেন যখন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছিলেন, সে সময় সেখানকার পরিস্থিতি থমথমে হয়ে উঠেছিল। এক সাংবাদিক প্রেসিডেন্টকে বলেন, মার্কিন জনগণ তার বয়স নিয়ে উদ্বিগ্ন। তার এই প্রশ্নের উত্তরে চড়া মেজাজে বাইডেন বলেন, 'না, জনগণের এ নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা আসলে আপনাদের এবং কেবল আপনাদের।'
ইসরাইলি হামলাকে 'বেপরোয়া' বললেন বাইডেন
এদিকে গাজায় ইসরাইলের সামরিক প্রতিক্রিয়াকে 'বেপরোয়া' বলে মন্তব্য করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। বুধবার গাজায় একটি বর্ধিত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে হামাসের দেওয়া শর্তগুলো প্রত্যাখ্যান করেছিলেন নেতানিয়াহু। সেগুলোকে বিভ্রান্তিকর বলে মন্তব্য করেন তিনি। তখন চুক্তির পরিবর্তে 'পূর্ণ বিজয়' না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছিলেন। এরপরই রাফাহতে বিমান হামলা চালায় ইসরাইল। এতে কমপক্ষে ১৩ জন নিহত হয়েছেন।
গাজায় ইসরাইলের এই সামরিক প্রতিক্রিয়াকে 'বেপরোয়া' বলে অভিহিত করেছেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি আরও বলেন, চলমান এই যুদ্ধে বর্ধিত বিরতিতে সম্মত হওয়ার জন্য ইসরাইল এবং হামাসকে চাপ দেওয়ার জন্য 'অক্লান্তভাবে' কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।
আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রয়োজনীয় সমর্থন জোগাড়ে রাজনৈতিক চাপের মধ্যে রয়েছেন বাইডেন। গাজায় ইসরাইলের আগ্রাসনকে সমর্থনের জন্য এরই মধ্যে অনেকেরই রোষানলে পড়েছেন তিনি। তাই আরব-আমেরিকান সম্প্রদায়ের মতো দেশটির অন্যদের কাছে নিজের গ্রহণযোগ্যতা বাড়াতে এখন অনেকটাই সচেতন বাইডেন।