পাকিস্তান

হালই ধরতে পারবেন না নওয়াজ

সামরিক বাহিনীর সম্মতি ছাড়া কোনো বড় পদক্ষেপ নেওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়

প্রকাশ | ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
নওয়াজ শরিফ
পাকিস্তানে বৃহস্পতিবার শেষ হয়েছে ভোট গ্রহণ। জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ মিলিয়ে এবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন ১৭ হাজারের বেশি প্রার্থী। এবারের নির্বাচনে ভোটার ছিলেন প্রায় ১২ কোটি ৮০ লাখ। তাদের ভোটেই নির্ধারিত হবে, আগামী পাঁচ বছর পরমাণু শক্তিধর এই দেশটির শাসন ক্ষমতায় কারা থাকবেন। তবে বৈশ্বিক নানা মিডিয়া ও থিংক-ট্যাংক বলছে, পাকিস্তানে এবারের নির্বাচনে জিততে চলেছেন দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ। তথ্যসূত্র : রয়টার্স, এএফপি বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনে জয়ের উৎসব শেষে পাকিস্তানের আগামী সরকারের সামনে বিশাল চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করে রয়েছে। বেহাল অর্থনীতি সামাল দিতে আন্তর্জাতিক সহায়তার প্রয়োজনীয়তার পাশাপাশি পাকিস্তানের সঙ্গে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দেশের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতিও কঠিন কাজ হবে। বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বর্তমান উত্তেজনা কাটানো আপাতত সবচেয়ে জরুরি বিষয় হয়ে উঠেছে। ভারত, ইরান ও আফগানিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি সাম্প্রতিককালে পাকিস্তানকে কঠিন অবস্থায় ফেলেছে। নওয়াজ শরিফ চতুর্থবারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হলেও অতীত অভিজ্ঞতা থেকে একটি শিক্ষা তাকে মনে রাখতেই হবে। সামরিক বাহিনীর সম্মতি ছাড়া পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে কোনো বড় পদক্ষেপ নেওয়া তার পক্ষে সম্ভব নয়। গতবার তিনি ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক যতটা সম্ভব স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালিয়েছিলেন। ২০১৫ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে পাকিস্তানে ডেকে ব্যক্তিগত উষ্ণতা দেখিয়ে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন অধ্যায় শুরু করতে চেয়েছিলেন তিনি। এবার ক্ষমতায় এলে শরিফ সেই সামরিক কর্মকর্তাদের ওপর আরও নির্ভরশীল হতে বাধ্য। আইন-আদালতের খাড়া সত্ত্বেও তিনি যে দেশে ফিরে নির্বাচনী প্রচার চালাতে পেরেছেন, সেটা সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরের বদান্যতা ছাড়া সম্ভবই হতো না। জেনারেল মুনিরের সঙ্গে সমঝোতা করতে না পারায় সেনা সমর্থিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান আজ ক্ষমতা হারিয়ে কারাবন্দি। এরই মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা আরও জোরদার করা হয়েছে। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, সে দেশে 'হাইব্রিড' সামরিক শাসনের কাঠামো সৃষ্টি করা হয়েছে, যেখানে যে কোনো নির্বাচিত সরকারের ভূমিকা ও ক্ষমতা অত্যন্ত সীমিত থাকতে বাধ্য। ইমরান খানের আমলে আমেরিকার সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। প্রতিবেশী দেশ আফগানিস্তানের তালেবান সরকার ও ইরানের সঙ্গেও উত্তেজনা বেড়ে গেছে। ভারতের সঙ্গে সম্পর্কেরও কোনো উন্নতি ঘটেনি। একমাত্র চীনের সমর্থন ও সহায়তার ওপর নির্ভর করে পাকিস্তান কোনো রকমে আন্তর্জাতিক মঞ্চে টিকে রয়েছে। কৌশলগত স্বার্থে চীন পাকিস্তানের পাশে থাকলেও সে দেশে বেইজিংয়ের অর্থনৈতিক সুবিধার প্রত্যাশা পুরোপুরি পূর্ণ হচ্ছে না। সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়া পাকিস্তানকে বাণিজ্য ও ট্রানজিটের বড় কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন। চীনের তৈরি অবকাঠামো সেই লক্ষ্য পূরণ করবে বলে তার মনে আশা ছিল। জেনারেল মুনির আমেরিকা ও চীনের মধ্যে কোনো এক শক্তিকে বেছে নেওয়ার বদলে যতটা সম্ভব নিজস্বতা বজায় রাখার পক্ষে। তবে কার্যক্ষেত্রে পাকিস্তানের দুর্বল অর্থনীতি ও সংকট সেই উচ্চাভিলাষ আপাতত পূরণ করতে দিচ্ছে না। সেনা কর্মকর্তাদের সম্মতি নিয়ে নতুন প্রধানমন্ত্রী সেই পথে কতটা অগ্রসর হতে পারবেন, সেদিকেই সবার নজর থাকবে।