কেন্দ্রীয় গাজার দেইল আল-বালাহর একটি মসজিদ ও সেফ হোমে (নিরাপদ আবাস) ইসরাইলি বাহিনীর বিমান হামলায় সোমবার কমপক্ষে ৩০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। জীবিতদের উদ্ধারে কাজ করছেন উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা। এদিকে, গাজা শহরের আল-শিফা হাসপাতালে আটকেপড়া স্বাস্থ্যকর্মী, রোগী এবং বাস্তুচু্যত ফিলিস্তিনিরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। সেখানকার কাছাকাছি একটি এলাকায় সাত ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরাইলি সেনারা। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা, এএফপি, রয়টার্স, আনাদলু, এএফপি
এর আগে রাফায় একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলসহ বেশ কিছু স্থানে হামলা চালায় ইসরাইলি বাহিনী। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, ইসরাইলি বাহিনীর রাতভর হামলায় কমপক্ষে ৯২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। হামলার শিকার ওই কিন্ডারগার্টেনে বাস্তুহারা লোকজন আশ্রয় নিয়েছিলেন।
গাজায় ইসরাইলি সেনাদের আগ্রাসনে ৭৫ শতাংশ মানুষ বাস্তুহারা হয়ে পড়েছেন। সেখানে খাবার, পানি, ওষুধ এবং নিরাপদ আশ্রয়ের তীব্র সংকট তৈরি হয়েছে। 'ইউএন অফিস ফর দ্য কো-অর্ডিনেশন অব হিউম্যানিটারিয়ান অ্যাফেয়ার্স'র (ইউএনওসিএইচএ) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাতিসংঘের শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) অনুমান করছে, গাজার প্রায় ১২ লাখ শিশুর এখন মানসিক স্বাস্থ্য-বিষয়ক সহায়তা প্রয়োজন।
নিরাপদ পানি না থাকলে মারা যাবেন
আরও অনেক ফিলিস্তিনি
টানা চার মাস ধরে ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় অবরুদ্ধ গাজা ভূখন্ডে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র মানবিক সংকট। এমনকি বাড়িঘর হারিয়ে গাজার জনসংখ্যার বেশিরভাগই থাকছেন বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র ও অস্থায়ী তাঁবুতে। এমন অবস্থায় নিরাপদ পানি না থাকলে আরও অনেক ফিলিস্তিনি মারা যাবে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডবিস্নউএ।
সোশ্যাল মিডিয়া পস্ন্যাটফর্ম 'এক্সে' দেওয়া এক বার্তায় সংস্থাটি বলেছে, 'আমাদের ইউএনআরডবিস্নউএ টিম গাজার মানুষের কাছে প্রায় দুই কোটি লিটার পানি পৌঁছে দিয়েছে। কিন্তু চাহিদা মেটাতে তা যথেষ্ট নয়। নিরাপদ পানি না থাকলে আরও অনেক মানুষ সংকট ও রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাবে।' সংস্থাটি আরও বলেছে, 'অবস্থা অমানবিক। মানুষ কোনো ধরনের মৌলিক প্রয়োজনীয়তা পূরণ ছাড়াই বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করছে।'
এদিকে 'এক্সে' দেওয়া পৃথক এক বিবৃতিতে ইউএনআরডবিস্নউএ বলেছে, 'গাজা উপত্যকার বৃহত্তম মানবিক সংস্থা হিসেবে, আমরা গাজার জনগণকে সহায়তা করার জন্য আমাদের অপরিহার্য কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করব।'
ইসরাইল-হামাস সংঘর্ষ বিরতি নিয়ে শঙ্কার কালো মেঘ
ইসরাইল-হামাস সংঘর্ষ-বিরতির আলোচনা এখনো কোনো সমাধানসূত্রে পৌঁছতে পারেনি বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ইসরাইল স্থায়ী সংঘর্ষ-বিরতিতে যেতে নারাজ। আর স্থায়ী সংঘর্ষ-বিরতি ছাড়া আলোচনা চায় না হামাস। ইসরাইল সব পণবন্দির মুক্তি চায়। হামাসের বক্তব্য, সব ফিলিস্তিনি বন্দির বিনিময়ে পণবন্দিদের মুক্তি দেওয়া হবে। কিন্তু নেতানিয়াহু এখনো এই বক্তব্য মেনে নেননি।
সংঘাত বিষয়ক একটি সংস্থার প্রধান অলিভার ম্যাকটারনান বলেন, 'প্যারিসে যে সংঘর্ষ-বিরতি নিয়ে বৈঠক হয়েছে, তা কোনো সমাধানসূত্রে পৌঁছতে পারেনি। বস্তুত, আলোচনা এখনো প্রাথমিক পর্যায়েই আছে।
আমেরিকা, কাতার, মিসর ও ইসরাইলের প্রতিনিধিরা প্যারিসের বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন। বৈঠকের সিদ্ধান্ত হামাসকে পাঠানো হয়েছিল। সাময়িক সংঘর্ষ-বিরতি এবং পণবন্দিদের মুক্তির দাবি ছিল সেই সিদ্ধান্তে। হামাস এখনো এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। হামাসের সূত্র অবশ্য সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে, ওই সিদ্ধান্তের সঙ্গে তারা একমত নয়। তাদের দাবিগুলো সামনে এনেছে হামাস। সেখানে বলা হয়েছে, ইসরাইলের কারাগারে যত ফিলিস্তিনি বন্দি আছে, সবাইকে মুক্তি দিতে হবে। এর বিনিময়ে সব পণবন্দিকে মুক্তি দেওয়া হবে। এ ছাড়া স্থায়ী সংঘর্ষ-বিরতির রাস্তায় যেতে হবে। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু অবশ্য সে পথে হাঁটতে নারাজ। সব ফিলিস্তিনি বন্দিকে তিনি মুক্তি দিতে চান না।