গত অক্টোবরে হামাসের হামলার জবাবে ইসরাইলের প্রতিশোধ অভিযান শুরুর পর থেকে গাজার অর্ধেকের বেশি ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে বলে উঠে এসেছে নতুন এক বিশ্লেষণে।
নিউ ইয়র্কের সিটি ইউনিভার্সিটির কোরি শের এবং ওরেগন স্টেট ইউনিভার্সিটির জ্যামন ভ্যান ডেন হোয়েক ওই অভিযানের আগে এবং পরে গাজার স্যাটেলাইট ছবিগুলো বিশ্লেষণ করে ধ্বংসযজ্ঞের মাত্রা সম্পর্কে ধারণা পাওয়ার চেষ্টা করেছেন।
বিবিসি লিখেছে, ডিসেম্বরের শুরু থেকে গাজার দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলে ইসরাইলের বোমাবর্ষণ কীভাবে তীব্র হয়েছে, খান ইউনিস কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ওই বিশ্লেষণে তা উঠে এসেছে। গাজাজুড়ে আবাসিক এলাকাগুলো ধ্বংস হয়ে গেছে; আগে যেখানে ব্যস্ত বাণিজ্যিক এলাকা ছিল, সেখানে এখন ধ্বংসস্তূপ। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। কৃষিজমিগুলোতে যেন চালানো হয়েছে খনন কাজ।
গাজাবাসীকে 'নিজেদের নিরাপত্তার জন্য' বারবার দক্ষিণে সরে যেতে বলছে ইসরাইল। গৃহহীন লাখো মানুষকে আশ্রয় দিতে গাজার দাক্ষিণ অংশে গড়ে উঠেছে তাঁবুর শহর।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ইসরাইল অভিযান শুরু করার পর প্রায় ১৭ লাখ মানুষ বাস্তুচু্যত হয়েছে, যা গাজার মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশের বেশি। বাস্তুহারা এই মানুষগুলোর অর্ধেক এখন গাদাগাদি করে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছেন গাজা ভূখন্ডের দক্ষিণ প্রান্তে।
বিবিসি লিখেছে, ইসরাইলের অভিযানে কৃষিজমিও যেভাবে ধ্বংস করা হয়েছে, তার মাত্রা স্পষ্ট হয়েছে তাদের বিশ্লেষণে।
ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা নিয়ে যখনই প্রশ্ন করা হয়েছে, ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী-আইডিএফ বলেছে, 'হামাস যোদ্ধা এবং সন্ত্রাসী অবকাঠামো'- এ দুটোই তাদের আক্রমণের লক্ষ্য। সেজন্য তারা কীভাবে গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে, তা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে স্যাটেলাইট ছবি বিশ্লষণে।
বিবিসি আরও লিখেছে, পুরো গাজায় ১ লাখ ৪৪ হাজার থেকে ১ লাখ ৭৫ হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে, যা গাজার মোট ভবনের ৫০ থেকে ৬১ শতাংশের মধ্যে।
গত কয়েক সপ্তাহে ইসরাইলের অভিযানে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গাজার দক্ষিণের শহর খান ইউনিস। বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, ৩৮ হাজার বা ৪৬ শতাংশ ভবন ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেখানে। গত দুই সপ্তাহেই ধ্বংস করা হয়েছে দেড় হাজারের বেশি ভবন।
শহরের কেন্দ্রস্থলের ১৬তলা আবাসিক ভবন আল-ফাররা টাওয়ার ছিল গাজার সবচেয়ে উঁচু ভবন। আগের এবং পরের ছবি মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, গত ৯ জানুয়ারি মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে ভবনটি। আশপাশের ভবনেরও মোটামুটি একই পরিণতি হয়েছে ইসরাইলের বোমা বর্ষণে।