তিন মার্কিন সেনা নিহত

ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ চায় না আমেরিকা

সরাসরি যুদ্ধে না গেলেও যোগ্য জবাব দেওয়া হবে। ইরানকে কীভাবে জবাব দেওয়া হবে, তা ঠিক করবেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন নিজে

প্রকাশ | ৩১ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
জন কারবি
জর্ডানে মার্কিন এক সেনাঘাঁটিতে ড্রোন হামলায় তিন মার্কিন সেনা নিহত হওয়ার পর মধ্যপ্রাচ্যে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে। এই তিন সেনা নিহত হওয়ার পর বাইডেন প্রশাসন প্রচন্ড চাপের মুখে আছে। মার্কিন সিনেটর ও কংগ্রেস সদস্যরা ইরানের ওপর সামরিক অভিযান চালানোর জন্য প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তবে এই ঘটনার পর হোয়াইট হাউস সোমবার বলেছে, এই হামলার কড়া জবাব দেওয়ার পরিকল্পনা করছে আমেরিকা। কিন্তু ইরানের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধ চায় না বলে জানিয়েছে আমেরিকা। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই হামলার দায় চাপিয়েছেন ইরান সমর্থিত বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলোর ওপর। তথ্যসূত্র : রয়টার্স, বিবিসি, এএফপি হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক মুখপাত্র জন কারবি জানিয়েছেন, ইরানকে কীভাবে জবাব দেওয়া হবে, তা ঠিক করবেন প্রেসিডেন্ট নিজে। কবে কীভাবে এ কাজ করা হবে, তা সম্পূর্ণ প্রেসিডেন্টের হাতে। তবে এই মুহূর্তে নতুন করে কোনো যুদ্ধে জড়াতে চায় না আমেরিকা। ফলে ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামবে না আমেরিকা। বরং যে পরিমাণ ক্ষতি ইরানের মদতপুষ্ট গোষ্ঠী করেছে, সেভাবেই তাদের জবাব দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন তিনি। কারবি বলেন, 'আমরা মধ্যপ্রাচ্যে বৃহত্তর সংঘাত চাইছি না।' কিন্তু সোমবার দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন বলেন, নিজেদের সেনাদের রক্ষা করার জন্য আমেরিকা 'প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপই' গ্রহণ করবে। পেন্টাগনে ন্যাটো সেক্রেটারি জেনারেল জেনস স্টলটেনবার্গের সঙ্গে বৈঠকের শুরুতে অস্টিন বলেন, 'প্রেসিডেন্ট (জো বাইডেন) ও আমি মার্কিন বাহিনীর ওপর কোনো ধরনের হামলা সহ্য করব না এবং আমরা আমেরিকা এবং আমাদের সেনাদের রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেব।' মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি বিস্নংকেন বলেছেন, 'প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যেমন বলেছেন, আমরা (হামলার) প্রতিক্রিয়া জানাব এবং সেই প্রতিক্রিয়া বহু-স্তরীয় হতে পারে, পর্যায়ক্রমে আসতে পারে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে চলতে পারে।' তবে বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলেছেন, তারা উত্তেজনাকর এই পরিস্থিতি আরও বাড়তে চান না। এমনকি আমেরিকার সঙ্গে ইরানও যুদ্ধ চায় না বলে ইঙ্গিত দিয়েছে পেন্টাগন। ফিলিস্তিনের গাজা ভূখন্ডে ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে প্রায় চার মাস ধরে চলা সংঘাতের আবহে গত শনিবার রাতের হামলায় এই জর্ডানের মাটিতে প্রথম তিন মার্কিন সেনা নিহত হয়। যদিও মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে আমেরিকার সেনারা বহুবার গোলাগুলির সম্মুখীন হয়েছে। আমেরিকার সেন্ট্রাল কমান্ড জানিয়েছে, সিরিয়ার সীমান্তের কাছে জর্ডানের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ওই হামলায় আরও ৩৪ জন আমেরিকান সেনা আহত হয়েছে। ইসরাইল-হামাস সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকান বাহিনীকে ইরাক, সিরিয়া, জর্ডান ও ইয়েমেনের উপকূল থেকে ইরান-সমর্থিত বাহিনী ১৫০ বারের বেশিবার আক্রমণ করেছে। তবে সিরিয়ার সঙ্গে জর্ডানের উত্তর-পূর্ব সীমান্তের কাছে 'টাওয়ার ২২' নামে পরিচিত একটি দূরবর্তী চৌকিতে রোববারের হামলার আগ পর্যন্ত আগের কোনো হামলাতেই মার্কিন সেনা নিহত বা এত বেশি সংখ্যক সেনা আহত হয়নি। এদিকে, পেন্টাগনের মুখপাত্র সাবরিনা সিং সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ইরান যুদ্ধে যেতে চাইছে, এমনটা তাদের মনে হচ্ছে না। আমেরিকা সরাসরি যুদ্ধে না গেলেও যোগ্য জবাব তেহরানকে দেওয়া হবে। এবং তা অতি দ্রম্নতই দেওয়া হবে। এদিন সাবরিনা একটি নির্দিষ্ট সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর নামও বলেছেন। তার বক্তব্য, যারা জর্ডানে মার্কিন ঘাঁটিতে আক্রমণ চালিয়েছে, তাদের নাম 'কাতাইব হিজবুলস্নাহ'। তারা যে আক্রমণ চালিয়েছে, তাতে ইরানের মদত স্পষ্ট। আমেরিকার হাতে নির্দিষ্ট প্রমাণ আছে। যদিও ইরান এই হামলায় তাদের যোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছে। দেশটির সরকারি সংবাদ সংস্থা 'ইরনা' এই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানির বক্তব্য উদ্ধৃত করেছে, ফিলিস্তিনি জাতিকে কীভাবে সমর্থন করবে বা সে দেশের মানুষদের কীভাবে রক্ষা করবে প্রতিরোধী গোষ্ঠীগুলো, তাদের সেই সিদ্ধান্তে ইরানের কোনো ভূমিকা নেই। জর্ডানও জানিয়েছে, ঘটনাটি তাদের এলাকায় হয়নি। সীমান্তের অন্য ধারে সিরিয়ার ভেতর ঘটেছে। আমেরিকা অবশ্য নির্দিষ্ট করে জানিয়েছে, সীমান্তে জর্ডানের দিকে তাদের যে ঘাঁটি আছে, সেখানেই ড্রোন হামলা চালানো হয়েছিল। তাহলে কীভাবে প্রতিশোধ নেবে আমেরিকা? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাণঘাতী এই হামলার জবাবে বাইডেন ইরানের বাইরে এমনকি ইরানের অভ্যন্তরেও ইরানি বাহিনীকে লক্ষ্যবস্তু করে হামলা চালাতে পারেন। আবার সেই পথে না হেঁটে শুধুমাত্র ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়াদের বিরুদ্ধে আরও সতর্ক প্রতিশোধমূলক আক্রমণও বেছে নিতে পারেন তিনি।