তিন মার্কিন সেনা নিহতের জের

মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে উত্তেজনা

মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের উসকানি দেওয়ার লক্ষ্যেই হামলা হয়েছে : ইরান হামলার জন্য দায়ীদের খুঁজে বের করে সাজা দেওয়া হবে : বাইডেন

প্রকাশ | ৩০ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক

সিরিয়া সীমান্তে জর্ডানের ভূখন্ডে অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিতে ড্রোন হামলায় তিন সেনা নিহত হওয়ার ঘটনায় নতুন করে উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। রোববারের ওই হামলার পর ইরানের দিকে অভিযোগ তুলেছে আমেরিকা। মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, কট্টর ইরান সমর্থিত জঙ্গি গোষ্ঠী এই হামলা চালিয়েছে। এর প্রতিশোধ নেওয়া হবে। কিন্তু ইরান রোববারের এই হামলার সঙ্গে তাদের কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতার কথা অস্বীকার করেছে। সেই সঙ্গে এমন অভিযোগের বিষয়ে আমেরিকাকে সতর্ক করে দিয়েছে তেহরান। এদিকে, ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সহযোগী গোষ্ঠী ইরাকের 'ইসলামিক রেজিস্ট্যান্স গ্রম্নপ' জর্ডান-সিরিয়া সীমান্তের একটি ঘাঁটিসহ মোট তিনটি ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলার দাবি করেছে। তথ্যসূত্র : এএফপি, আল-জাজিরা, রয়টার্স ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, ওই হামলা এবং তিন সেনা নিহত হওয়ার বিষয়ে ইরানের সম্পৃক্ততার যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা ভিত্তিহীন। মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের উসকানি দেওয়ার লক্ষ্যেই এমনটা করা হচ্ছে বলে উলেস্নখ করা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র নাসের কানানি বলেন, আমেরিকাকে আবারও ওই অঞ্চলে নতুন সংঘাতে টেনে নিয়ে যারা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করছেন, এটি তাদের ষড়যন্ত্র। গাজায় ইসরাইল ও হামাসের মধ্যকার সংঘাত শুরুর পর থেকেই ইরান বলে আসছে, এই যুদ্ধ বন্ধ করা না গেলে তা কেবল সংঘাতের পরিধিকে আরও প্রসারিত করবে। হামাসের মুখপাত্র সামি আবু জুহরি মার্কিন বাহিনীর ওপর এই হামলাকে 'মার্কিন প্রশাসনের জন্য একটি বার্তা' বলে অভিহিত করেছেন। গাজার নিরপরাধ মানুষদের হত্যা করা বন্ধ না হলে 'মার্কিন প্রশাসনের পুরো মুসলিম জাহানের মুখোমুখি হওয়া লাগতে পারে' বলে সতর্ক করেছেন তিনি। সামি আবু জুহরি জানিয়েছেন, গাজায় অব্যাহত আমেরিকান-জায়নবাদী আগ্রাসন আঞ্চলিক বিস্ফোরণের ঝুঁকি তৈরি করেছে। এর আগে রোববার এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট বাইডেন ড্রোন হামলায় তিন মার্কিন সেনা নিহত হওয়ার পর প্রতিশোধের হুংকার দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, 'যদিও আমরা এখনো এই হামলার বিষয়ে খুঁটিনাটি তথ্য সংগ্রহ করছি। তবে আমরা জানি, সিরিয়া ও ইরাকে সক্রিয় থাকা ইরান সমর্থিত কট্টর জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো এই হামলা চালিয়েছে।' তিনি বলেন, 'আমরা এক সঙ্গে আমাদের বেছে নেওয়া পদ্ধতিতে এই হামলার জন্য দায়ীদের খুঁজে বের করব এবং সাজার আওতায় আনব।' আমেরিকার প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন বলেছেন, 'মার্কিন বাহিনীগুলোর ওপর ধারাবাহিক হামলার জন্য ইরান সমর্থিত জঙ্গিরা দায়ী। আমাদের বাছাই করা সময় ও স্থানে আমরা এর জবাব দেব।' মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের বৈদেশিক সম্পর্ক বিষয়ক প্যানেলের রিপাবলিকান চেয়ারম্যান মাইকেল ম্যাকল বলেছেন, 'প্রতিরোধ পুনরুদ্ধার ও আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থের সুরক্ষায় আমাদের মধ্যপ্রাচ্য নীতি ঢেলে সাজানো দরকার।' সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, 'এটি আমেরিকার জন্য একটি ভয়ংকর দিন ছিল। জো বাইডেনের দুর্বলতা ও আত্মসমর্পণের কারণে আমাদের ওপর আরেকটি ভয়ানক ও শোচনীয় হামলার ঘটনা ঘটল।' মার্কিন সিনেটের রিপাবলিকান দলীয় নেতা মিচ ম্যাককনেল বলেন, 'প্রতিপক্ষদের নিবৃত্ত করার ব্যর্থতার মূল্য জীবন দিয়ে দিতে হলো। দ্বিধা ও আধা-পদক্ষেপ নিয়ে এই সহিংস আগ্রাসনের মোকাবিলা করতে পারব না আমরা। ইরানকে তার আচরণ পরিবর্তন করতে বাধ্য করার জন্য প্রেসিডেন্ট আমেরিকান শক্তি ব্যবহার করতে চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেবেন, এমন ইঙ্গিত দেখতে পুরো বিশ্ব চোখ রাখছে। আমাদের শত্রম্নরা সাহসী হয়ে উঠেছে।' মার্কিন সিনেটের আর্মড সার্ভিসেস কমিটির রিপাবলিকান সদস্য রজার উইকার বলেছেন, 'আমাদের অবশ্যই ইরানের লক্ষ্যস্থল ও নেতৃত্বের বিরুদ্ধে আঘাত হেনে ইরান ও এর ছায়া বাহিনীগুলোর উপর্যুপরি হামলার জবাব দিতে হবে। এ পর্যন্ত বাইডেন প্রশাসন যে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে তা শুধু আরও হামলা ডেকে এনেছে।' একই কমিটির ডেমোক্রেট সদস্য জ্যাকি রোজেন বলেছেন, 'ইরানকে অবশ্যই জবাবদিহি করতে হবে।' গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের হামলার পর থেকে শুরু হওয়া ইসরাইলের পাল্টা অবিরাম হামলায় গাজা ভূখন্ড ধ্বংস হয়ে গেছে, নিহত হয়েছে ২৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। এই নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে বিরাজমান চরম অস্থিরতার মধ্যেই জর্ডানে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে হামলার ঘটনায় প্রথম মার্কিন সেনা নিহত হলো।