শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
ত্রাণকর্মীদের হামলায় সংশ্লিষ্টতা

গাজায় সাহায্য বন্ধ করবেন না :গুতেরেস

'এখনকার বিপজ্জনক পরিস্থিতির মধ্যে যারা কাজ করছেন তাদের শাস্তি দেওয়া উচিত নয়' গাজায় পাঁচ দিনের ত্রাণ অবরোধের ডাক ইসরাইলি বিক্ষোভকারীদের
যাযাদি ডেস্ক
  ২৯ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস

গাজার ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের ত্রাণ ও মানবিক সহায়তা সরবরাহকারী জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠান 'ইউনাইটেড নেশনস এজেন্সি ফর প্যালেস্টিনিয়ান রিফিউজিস'র (ইউএনআরডাবিস্নউএ) বেশ কয়েকজন কর্মীর বিরুদ্ধে ইসরাইলে হামাসের হামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদের সংস্থাটি বরখাস্ত করলেও সহায়তা বন্ধের ঘোষণা দেয় আমেরিকাসহ ৯টি দেশ। এ নিয়ে কথা বলেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেস সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িত যে কোনো জাতিসংঘ কর্মীকে এর জন্য দায়ী করে তার বিচার করার অঙ্গীকার করেছেন। অভিযোগের কারণে ইউএনআরডাবিস্নউয়ে অর্থায়ন বন্ধ করা দেশগুলোকে সংস্থাটির পাশে থাকার জন্য অনুরোধও করেছেন তিনি। তথ্যসূত্র : এএফপি, আল-জাজিরা, বিবিসি, রয়টার্স

এক বিবৃতিতে গুতেরেস বলেন, "সন্ত্রাসে জড়িত যে কোনো জাতিসংঘ কর্মীকে বিচারের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা করতে 'সেক্রেটারিয়েট' প্রস্তুত রয়েছে। ইউএনআরডাবিস্নউএ সংস্থায় মানবিক ত্রাণকাজের জন্য এখনকার সবচেয়ে বিপজ্জনক পরিস্থিতির মধ্যে যে হাজার হাজার নারী-পুরুষ কাজ করছেন, তাদের শাস্তি দেওয়া উচিত নয়। মরিয়া যেসব মানুষের মৌলিক চাহিদা মেটাতে তারা যে সেবা দিচ্ছেন, তা অবশ্যই পূরণ হওয়া উচিত।"

জাতিসংঘ কর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে প্রথম সরাসরি বলা কথায় মহাসচিব গুতেরেস এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য দিয়েছেন। তিনি জানান, হামাসের হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ আছে ইউএনআরডবিস্নউএ-এর ১২ কর্মচারীর বিরুদ্ধে। এর মধ্যে ৯ জনকে বরখাস্ত করা হয়েছে। একজনের মৃতু্য হয়েছে এবং অন্য দুইজনের পরিচয় স্পষ্টভাবে জানার চেষ্টা চলছে। ইসরাইল ওই কর্মচারীদের বিরুদ্ধে হামাসের হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ করার পর আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ইতালি, অস্ট্রেলিয়া, ফিনল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস এবং কানাডা ইউএনআরডবিস্নউ সংস্থায় তহবিল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে।

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, 'আমি তাদের উদ্বেগের বিষয়টি বুঝি। আমি নিজেও এমন অভিযোগ শুনে চমকে গেছি। এরপরও আমি অর্থায়ন স্থগিত করা দেশগুলোর কাছে এই আবেদন জানাচ্ছি, অন্তত ইউএনআরডাবিস্নউএ-এর কার্যক্রম সচল রাখার নিশ্চয়তাটুকু দিন।'

ইউএনআরডবিস্নউএয়ের কমিশনার জেনারেল ফিলিপ লাজারিনি বলেছেন, 'গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলে ভয়াবহ হামলায় ইউএনআরডবিস্নউএর বেশ কয়েকজন কর্মী জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে বলে তথ্য দিয়েছে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ। সংস্থার মানবিক সহায়তা প্রদানের সক্ষমতা রক্ষা করতে আমি এই সদস্যদের সঙ্গে অবিলম্বে চুক্তি বাতিল করার এবং সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য শিগগিরই তদন্ত শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।' গাজায় ইউএনআরডাবিস্নউএর ১৩ হাজার কর্মী রয়েছেন। তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ফিলিস্তিনি স্কুলের শিক্ষক, চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও ত্রাণকর্মী।

পাঁচ দিনের ত্রাণ অবরোধের ডাক

ইসরাইলি বিক্ষোভকারীদের

এদিকে, গাজা উপত্যকায় মানবিক সহায়তা সরবরাহ বন্ধের জন্য পাঁচ দিনের ত্রাণ অবরোধের ডাক দিয়েছে ইসরাইলি বন্দিদের পরিবার ও বিক্ষোভকারীরা। ত্রাণবাহী ট্রাক আটকানোর জন্য বিভিন্ন প্রবেশদ্বারের দিকে যাচ্ছে তারা। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখা গেছে, ইসরাইলের পতাকা ও ব্যানার নিয়ে কেরাম শালোম নামে পরিচিত কারেম আবু সালেম ক্রসিংয়ের দিকে যাচ্ছে বিক্ষোভকারীরা।

গত কয়েকদিনে ত্রাণবাহী ট্রাক আটকাতে কতটা সফল হয়েছে, এর হিসাব না থাকলেও ইসরাইলি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, বুধবার শতাধিক ত্রাণবাহী ট্রাক আটকে রেখেছে বিক্ষোভকারীরা। সেগুলোর মধ্যে কয়েকটিকে শেষ পর্যন্ত মিশরের অন্য প্রবেশপথে যেতে হয়েছিল।

তিন মাসের বেশি সময় ধরে চলা ইসরাইলের বোমাবর্ষণ ও হামলায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস শাসিত গাজা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, ভূখন্ডটিতে প্রায় দুর্ভিক্ষাবস্থা বিরাজ করছে।

ইসরাইলি হামলায় প্রাণ গেল আরও ১৬৫ ফিলিস্তিনির

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের নির্বিচার হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও অন্তত ১৬৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। একই সময় আহত হয়েছেন আরও ২৯০ জন ফিলিস্তিনি। রোববার গাজার ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী হামাস নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় উপত্যকায় ইসরাইলি হামলায় নতুন করে ১৬৫ ফিলিস্তিনি নিহত ও ২৯০ জন আহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি হামলায় কমপক্ষে ২৬ হাজার ৪২২ ফিলিস্তিনি নিহত ও আরও ৬৫ হাজার ৮৭ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ১১ হাজারের বেশি শিশু ও সাড়ে ৭ হাজার নারী রয়েছেন। গাজায় ইসরাইলের হামলায় অবরুদ্ধ এই ভূখন্ডের বিশাল অংশ ধ্বংস হয়ে গেছে। তিন মাসের বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ মানুষ বাস্তুচু্যত হয়েছেন।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে