ইসরাইল-হামাস সংঘাত
গাজার খান ইউনিসে চলছে তুমুল লড়াই
গাজার নাসের হাসপাতাল পুরোপুরি বিদু্যৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ১১ ফিলিস্তিনি যোদ্ধাকে হত্যার দাবি ইসরাইলের জাতিসংঘ কর্মীদের বিরুদ্ধে হামলায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ
প্রকাশ | ২৮ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
গাজায় হামাস ও ইসরাইলি বাহিনীর মধ্যে তুমুল লড়াই চলছে। বিশেষ করে খান ইউনিসে। সেখানকার নাসের হাসপাতাল এরই মধ্যে পুরোপুরি বিদু্যৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন রোগীরা। কয়েক দিন ধরেই খান ইউনিসে অব্যাহত বোমা হামলা চালাচ্ছে ইসরাইল। এ ছাড়া আল-দাহারা এলাকা থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে দিয়েছে ইসরাইলি বাহিনী। তথ্যসূত্র : এএফপি, বিবিসি, আল-জাজিরা, রয়টার্স
এদিকে, আন্তর্জাতিক আদালত বলেছে, ইসরাইলকে নিশ্চিত করতে হবে যে, তার বাহিনী গণহত্যা চালাবে না। গণহত্যা প্রতিরোধে কী করা হয়েছে, সে বিষয়ে আগামী এক মাসের মধ্যে এ বিষয়ে আদালতকে প্রতিবেদন দিতে হবে। ইসরাইলকে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় গণহত্যার মতো হামলা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক বিচার আদালত। শুক্রবারের রায়ে বলা হয়েছে, ইসরাইলকে নিশ্চিত করতে হবে যে, তার বাহিনী গাজায় আর গণহত্যা চালাবে না এবং 'কথিত' গণহত্যার প্রমাণ সংরক্ষণ নিশ্চিত করবে। তবে গাজায় ইসরাইলকে তাৎক্ষণিকভাবে সামরিক অভিযান বন্ধের নির্দেশ আদালত দেয়নি।
১১ ফিলিস্তিনি যোদ্ধাকে হত্যার
দাবি ইসরাইলের
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার খান ইউনিসে ইসরাইলের হাতে অন্তত ১১ ফিলিস্তিনি যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। এক বিবৃতিতে শনিবার ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, গাজার খান ইউনিসে যুদ্ধে ইসরাইলি বিমান, ট্যাঙ্ক এবং পদাতিক সেনারা গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ১১ ফিলিস্তিনি যোদ্ধাকে হত্যা করেছে।
এর আগে, ইসরাইলি সেনাবাহিনীর অপর একটি বিবৃতিতে বলা হয়, তাদের সেনারা ফিলিস্তিনি যোদ্ধাদের লক্ষ্যবস্তু (টার্গেট) করেছে। তখন যোদ্ধাদের একটি দল তাদের সেনাদের কাছে বিস্ফোরক রাখার চেষ্টা করছিল এবং অন্য দলগুলো সেনাদের লক্ষ্য করে রাইফেল ও রকেট চালিত গ্রেনেড ছুড়ছিল। তবে এই হামলায় ইসরাইলি সেনাদের কেউ হতাহত হয়েছে কিনা, জানা যায়নি।
জাতিসংঘ কর্মীদের বিরুদ্ধে হামলায়
সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ
এদিকে, গাজার ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের ত্রাণ ও মানবিক সহায়তা সরবরাহকারী জাতিসংঘের প্রতিষ্ঠান 'ইউনাইটেড নেশনস এজেন্সি ফর প্যালেস্টিনিয়ান রিফিউজিস'র (ইউএনআরডাবিস্নউএ-আনরোয়া) বেশ কয়েকজন কর্মীর বিরুদ্ধে গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ করেছে আমেরিকা। শুক্রবার লিখিত বিবৃতিতে এই অভিযোগ এনেছে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অভিযোগের যথাযথ তদন্ত না হলে আনরোয়া তহবিলে মার্কিন আর্থিক সহায়তা বরাদ্দ বন্ধ থাকবে বলেও জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, 'আমরা অত্যন্ত যন্ত্রণার সঙ্গে জানাচ্ছি, গত ৭ অক্টোবরের হামলার সঙ্গে আনরোয়ার অন্তত ১২ জন কর্মীর সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ পাওয়া গেছে।'
পরে একই দিন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের বলেন, 'আনরোয়াতে কর্মরত বেশ কয়েকজন কর্মীর বিরুদ্ধে ৭ অক্টোবর হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ এসেছে। আমরা অস্থায়ীভাবে সংস্থাটিতে আর্থিক সহায়তা প্রদান বন্ধ রেখেছি এবং পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। আশা করছি, সংস্থাটির কর্তৃপক্ষ এই ইসু্যতে দৃশ্যমান ও যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন।' আমেরিকার পাশাপাশি অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও ইতালি জানিয়েছে, তারাও জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থায় অর্থ সহায়তা স্থগিত করছে।
এদিকে, শনিবার আনরোয়ার কমিশনার জেনারেল (প্রধান নির্বাহী) ফিলিপ লাজারিনি সাংবাদিকদের এই অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে জানিয়েছেন, সংস্থাটি এরই মধ্যে অভিযোগ আসা কর্মীদের চাকরিচু্যত করেছে এবং এ বিষয়ক তদন্ত শুরু করেছে। লাজারিনি বলেন, '৭ অক্টোবরের হামলার সঙ্গে আনরোয়ার কয়েকজন কর্মীর সংশ্লিষ্টতার তথ্য আমাদের হাতে এসেছে। ইসরাইলি কর্তৃপক্ষও কিছু তথ্য আমাদের সরবরাহ করেছে।' এর প্রতিক্রিয়ায় ইউএনআরডাবিস্নউএ'র একটি 'জরুরি ও বিস্তৃত স্বাধীন পর্যালোচনা'র প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। তার মুখপাত্র স্টিফেন দুজারিক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে, যুদ্ধ শেষে জতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থাকে (ইউএনআরডাবিস্নউএ) গাজায় আর কার্যক্রম চালাতে দেবে না ইসরাইল। শনিবার ইসরাইলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরেল কাৎজ এ কথা জানিয়েছেন। ইসরাইলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী 'এক্সে' বলেছেন, আগামীতে ইউএনআরডাবিস্নউএ যেন আর কাজ করতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে চায় ইসরাইল। এ লক্ষ্যে আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ সংস্থাটির অন্যান্য প্রধান দাতাদের কাছ থেকে সমর্থন লাভের চেষ্টা করবে তারা।