ইসরাইলি আগ্রাসন
গাজায় জাতিসংঘের আশ্রয়কেন্দ্রে হামলা
যুদ্ধের মূল আইনকে নির্লজ্জভাবে উপেক্ষা করা হলো : জাতিসংঘ দায় ঝেরে ইসরাইল বলেছে, হামাস হামলা চালাতে পারে মার্কিন সিনেটে 'দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান'র পক্ষে ভোট ডেমোক্রেটদের
প্রকাশ | ২৬ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
ইসরাইল দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে বুধবার তীব্র হামলা চালিয়েছে। জাতিসংঘ বলেছে, তাদের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে ট্যাংকের গোলাবর্ষণে ৯ জন নিহত হয়েছেন। আর আহত হয়েছেন অন্তত ৭৫ জন। জাতিসংঘ এ ঘটনায় যুদ্ধের নিয়মের 'স্পষ্ট লঙ্ঘনের' জন্য নিন্দা জানিয়েছে। তবে ইসরাইল এ হামলার জন্য তাদের সেনারা দায়ী নয় বলে দাবি করেছে, হামাস সেখানে হামলা চালিয়ে থাকতে পারে বলে সন্দেহ প্রকাশ করেছে তারা। তথ্যসূত্র : এএফপি, রয়টার্স, আল-জাজিরা, বিবিসি
জাতিসংঘ জানিয়েছে, খান ইউনিসের তাদের বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটিতে ৩০ হাজার বাস্তুচু্যত ফিলিস্তিনি আশ্রয় নিয়ে আছে, সেখানেই হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। ইসরাইলের ঘনিষ্ঠ মিত্র আমেরিকার সরাসরি এ হামলার নিন্দা জানিয়েছে। ফিলিস্তিনি ভূখন্ডের জন্য নিযুক্ত জাতিসংঘের মানবিক সমন্বয়কারী জেমস ম্যাকগোলড্রিক বলেন, 'ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। কিছু ভবন পুড়ে গেছে আর সেখানে মৃতু্যর ঘটনা ঘটেছে। বহু মানুষ ঘটনাস্থল থেকে পালাতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তারা তা পারেননি।' জাতিসংঘের ফিলিস্তিন বিষয়ক শরণার্থী সংস্থা 'ইউএনআরডবিস্নউএ'-এর গাজাবিষয়ক পরিচালক টমাস হোয়াইট জানিয়েছেন, প্রশিক্ষণ কেন্দ্রটির ভবনগুলোর মধ্যে একটিতে ট্যাংকের দু'টি গোলা আঘাত হানে। এই ভবনটিতে প্রায় ৮০০ মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন। অন্তত ৯ জন নিহত ও ৭৫ জন আহত হয়েছেন। ইউএনআরডবিস্নউএ'র প্রধান ফিলিপ লাজারিনি বলেন, সম্ভবত মৃতু্যর সংখ্যা আরও বেশি হবে। লাজারিনি বলেন, 'কম্পাউন্ডটি জাতিসংঘের স্থাপনা হিসেবে পরিষ্কারভাবে চিহ্নিত ছিল। আমাদের সব স্থাপনার মতো এটির অবস্থানও ইসরাইলি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছিল। আরও একবার যুদ্ধের মূল আইনকে নির্লজ্জভাবে উপেক্ষা করা হলো।'
এদিকে ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল বলেন, 'খান ইউনিসে জাতিসংঘের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আজ (বুধবার) যে হামলা হয়েছে, আমরা তার নিন্দা জানাই। বেসামরিকদের অবশ্যই সুরক্ষা দিতে হবে এবং জাতিসংঘের স্থাপনাগুলোর সুরক্ষিত প্রকৃতির প্রতি অবশ্যই শ্রদ্ধা দেখাতে হবে। মানবিক কর্মীদের অবশ্যই সুরক্ষা দিতে হবে, যেন তারা বেসামরিকদের প্রাণ রক্ষাকারী মানবিক সহায়তা দেওয়া অব্যাহত রাখতে পারেন, যা তাদের প্রয়োজন।'
জাতিসংঘের এসব অভিযোগের পর ইসরাইলের সামরিক বাহিনী এক বিবৃতিতে দাবি করে, বৃহত্তর খান ইউনিস এলাকাটি হামাসের যোদ্ধাদের একটি ঘাঁটি। বিপুল সংখ্যক বেসামরিকদের কাছেই লড়াই চলছে বলে স্বীকার করে তারা। কিন্তু ওয়াশিংটন হামলার নিন্দা জানানোর পর দ্বিতীয় আরেক বিবৃতিতে তারা দাবি করে, হামলাটি হামাসের গোলাবর্ষণের কারণে হয়েছিল কিনা, তা যাচাই করার জন্য একটি পরীক্ষা এখনো চলছে।
মার্কিন সিনেটে 'দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান'র
পক্ষে ভোট ডেমোক্রেটদের
মধ্যপ্রাচ্যের আল-আকসা অঞ্চলে 'ইসরাইল ও 'ফিলিস্তিন' নামের দু'টি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে সমর্থন জানিয়েছেন মার্কিন পার্লামেন্ট কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটে সংখ্যাগরিষ্ঠ ডেমোক্রেটিক পার্টির অধিকাংশ সদস্য। কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের মোট ১০০টি আসনের মধ্যে ৫১টিতে রয়েছেন ডেমোক্রেটিক পার্টির সদস্যরা। আমেরিকার বর্তমান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই দলের শীর্ষ নেতা। নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে অবশ্য বিরোধী দল রিপাবলিকান পার্টি সংখ্যাগরিষ্ঠ।
সিনেটের বুধবারের অধিবেশনে ডেমোক্রেটিক পার্টির নেতা ও সিনেটর ব্রায়ান শ্যাটজ একটি বিল উত্থাপন করেন। সেই বিলটিতে আল-আকসা অঞ্চলে একটি গণতান্ত্রিক ও সার্বভৌম ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি ফিলিস্তিনিদের 'ন্যায্য আকাঙ্ক্ষার' প্রতি সম্মান জানিয়ে পৃথক আরেক রাষ্ট্র স্থাপনের উলেস্নখ ছিল।
বিলটি উত্থাপনের পর সেটির পক্ষে-বিপক্ষে ভোটের আহ্বান জানান সিনেট স্পিকার। এই পর্ব শেষ হওয়ার দেখা যায়, সিনেটের ৫১ জন ডেমোক্রেট সদস্যদের মধ্যে ৪৯ জনই প্রস্তাবটির পক্ষে ভোট দিয়েছেন। বুধবারের অধিবেশনের ফাঁকে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন ব্রায়ান শ্যাটজ বলেন, ভবিষ্যতে ইসরাইল ও ফিলিস্তিন শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করবে- এটি একটি আশা। আর এই আশার ভিত্তি হলো দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান।
ইসরাইলের সবচেয়ে বিশ্বস্ত মিত্র আমেরিকা। ২০২০ সালে জো বাইডেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে আল-আকসা অঞ্চলে 'ইসরাইল' ও 'ফিলিস্তিন' নামের দু'টি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছে ওয়াশিংটন।
তবে বুধবারের অধিবেশনে সিনেটের দুই ডেমোক্রেট সদস্য বিলটির বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। এরা হলেন জন ফেটারম্যান এবং জো ম্যাঞ্চিন। কী কারণে তারা বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন, তার কারণও ব্যাখ্যা করেছেন তারা। ফেটারম্যানের সচিব জানান, ডেমোক্রেটিক পার্টির এই সিনিয়র নেতা সবসময়ই দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের পক্ষে। কিন্তু তিনি বিশ্বাস করেন, হামাসকে চিরতরে নিষ্ক্রিয় না করলে মধ্যপ্রাচ্যের আল-আকসা অঞ্চলে শান্তি স্থাপন সম্ভব নয়। সিনেট অধিবেশনে উত্থাপিত বিলটিতে দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের পক্ষে বলা হলেও হামাসকে নিষ্ক্রিয় করার ব্যাপারটির উলেস্নখ ছিল না। এ কারণে তিনি (পক্ষে) ভোট দেননি।
আরেক ডেমোক্রেট সিনেটর জো ম্যাঞ্চিন এক বিবৃতিতে বলেন, 'যদি একবার ফিলিস্তিনের জনগণ তাদের হৃদয় থেকে ইসরাইলের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে, তাহলে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষে দাঁড়ানো প্রথম ব্যক্তিটি হব- আমি।'