ইসরাইলি আগ্রাসন
গাজায় প্রাণহানি ২৫ হাজার ছাড়াল
'এই হামলা সেখানকার ২৪ লাখ মানুষের জন্য মানবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি করেছে' মার্কিনি চাপ তোয়াক্কা করছেন না নেতানিয়াহু
প্রকাশ | ২২ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
নতুন বছরে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজায় ইসরাইলের হামলার তীব্রতা বেড়েছে। হামাস নির্মূলের নামে ইসরাইলের এই হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সাধারণ মানুষই। ইসরাইলি হামলায় গাজা উপত্যকার বেশির ভাগ এলাকাই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। জাতিসংঘ ও বিভিন্ন ত্রাণ সংস্থা সতর্ক করে বলেছে, এই হামলা সেখানকার ২৪ লাখ মানুষের জন্য মানবিক বিপর্যয়ের সৃষ্টি করেছে। এদিকে, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় রোববার জানিয়েছে, গত ৭ অক্টোবর থেকে নির্বিচার ইসরাইলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ২৫ হাজার ১০৫ জন। পাশাপাশি আহত হয়েছেন আরও ৬২ হাজার ৬৮১ জন। অনেক মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় আটকে আছেন। কারণ, উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছতে পারছেন না। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় প্রায় ১৭৮ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ২৯৩ জন আহত হয়েছেন। এ ছাড়া হামলায় আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৩০০ ফিলিস্তিনি। তথ্যসূত্র : আল-জাজিরা, বিবিসি, রয়টার্স, এএফপি
ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা 'ওয়াফা' জানিয়েছে, শনিবার দক্ষিণ গাজা উপত্যকার খান ইউনিসের উত্তর-পূর্বে আল-কারারা শহরে ইসরাইলি বাহিনী একাধিক বাড়ি উড়িয়ে দিয়েছে। এ সময় বেশ কয়েকজন নিহত ও অন্যরা আহত হন। এ ছাড়া ইসরাইলি যুদ্ধবিমান খান ইউনিসের পূর্ব ও দক্ষিণে বনি সুহাইলা, আল-জানা, আবাসান এবং বাতন আল-সামিন এলাকায় তীব্র বিমান হামলা চালিয়েছে। উত্তর গাজা উপত্যকার জাবালিয়া শহরও ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার শিকার হয়েছে।
জাতিসংঘ বলছে, হামাস-ইসরাইল সংঘাতের প্রধান ভুক্তভোগী ফিলিস্তিনি নারী ও শিশুরা। গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলি ভূখন্ডে হামলা চালিয়ে এক হাজার ২০০ জনকে হত্যা করে হামাসের যোদ্ধারা। একই সঙ্গে আরও প্রায় ২৪০ জনকে ধরে নিয়ে গাজায় জিম্মি করে রাখে তারা। পরে ওই দিনই গাজা উপত্যকায় বিমান হামলা শুরু করে ইসরাইলি বাহিনী। টানা তিন সপ্তাহের বিমান হামলার পর ইসরাইলের সামরিক বাহিনী উত্তর গাজায় স্থল অভিযান শুরু করে। এতে গাজার মোট ২৩ লাখ বাসিন্দার প্রায় ৮৫ শতাংশই তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছেন। সেখানকার হাজার হাজার মানুষ উপকূলীয় এই উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলে জাতিসংঘ পরিচালিত আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন। জাতিসংঘের কর্মকর্তারা বলছেন, উপত্যকার প্রায় এক-চতুর্থাংশ মানুষ অনাহারে রয়েছেন। অব্যাহত বোমাবর্ষণ আর ইসরাইলের বিধিনিষেধের কারণে মানবিক সহায়তা পৌঁছতে পারছে না গাজায়।
হামাসের সঙ্গে সংঘাতে ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর অন্তত ১৯৫ সদস্য নিহত হয়েছে বলে ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হামাসকে ধ্বংস এবং জিম্মিদের ফেরত না দেওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চলবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
মার্কিনি চাপ তোয়াক্কা করছেন না নেতানিয়াহু
এদিকে, জায়নবাদী ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু আবারও বলেছেন, ফিলিস্তিনি ভূখন্ডের নিরাপত্তার দায়িত্ব তাদের হাতেই থাকবে। তিনি বলেছেন, তাদের এই পরিকল্পনার সঙ্গে আলাদা ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিষয়টি পুরোই 'অবাস্তব'।
আমেরিকা এবং পশ্চিমা দেশগুলো বলছে, এই অঞ্চলের নিরাপত্তার জন্য আলাদা ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা জরুরি। এ ক্ষেত্রে ইসরাইলকে তারা চাপও দিচ্ছে। কিন্তু শনিবার নেতানিয়াহু তার বক্তব্যে এসব চাপকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছেন।
গত শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র নিয়ে কথা বলেন নেতানিয়াহু। নেতানিয়াহুর এমন কথা স্পষ্ট করেছে, গাজায় যুদ্ধ পরবর্তী সরকার এবং স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠন নিয়ে আমেরিকার সঙ্গে ইসরাইলের প্রকাশ্য বিরোধ আরও ঘনীভূত হয়েছে। আমেরিকা মনে করে, ইসরাইল ও ফিলিস্তিন আলাদা রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমেই এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা আনা সম্ভব। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের দপ্তর হোয়াইট হাউস স্বীকার করে নিয়েছে, আমেরিকা ও ইসরাইল 'পুরো বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে দেখে'। শুক্রবার নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা বলার পর বাইডেন বলেন, 'দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের বিভিন্ন পদ্ধতি আছে। জাতিসংঘের অনেক দেশ আছে যাদের কোনো সামরিক বাহিনী নেই।'
এরপর এক বিবৃতিতে নেতানিয়াহুর দপ্তর বলে, 'প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সঙ্গে আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু তার নীতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, হামাস পরাজিত হওয়ার পর গাজার নিরাপত্তার দায়িত্ব থাকবে ইসরাইলের হাতে। যেন গাজা ভবিষ্যতে ইসরাইলের জন্য হুমকি না হতে পারে। এ বিষয়টি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরিপন্থি।' পরে মাইক্রো বস্নগিং সাইট 'এক্সে' দেওয়া এক পোস্টে নেতানিয়াহু বলেন, জর্ডানের পশ্চিমাঞ্চলের অঞ্চলগুলোর নিরাপত্তার দায়িত্বও থাকবে ইসরাইলের হাতে। এই অঞ্চলের সঙ্গেই ইসরাইলের দখলকৃত পশ্চিম তীরের অবস্থান।