মার্কিন প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান

ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিরোধী নেতানিয়াহু

সম্পূর্ণ বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত হামলা চালানোর প্রতিশ্রম্নতি নেতানিয়াহুর বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছে আমেরিকা হামাসকে সম্পূর্ণভাবে হারানো সম্ভব নয় : ইসরাইলের মন্ত্রী

প্রকাশ | ২০ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু
গাজা সংঘাত শেষে একটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনে আমেরিকার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে ইসরাইল। বৃহস্পতিবার জায়নবাদী ভূখন্ডটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু মার্কিন এই প্রস্তাবের প্রকাশ্য বিরোধিতা করেন। এমনকি গাজায় 'যুদ্ধ' শেষ হলে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করার বিষয়টি তিনি আমেরিকাকে জানিয়েও দিয়েছেন। নেতানিয়াহু বলেন, তিনি আমেরিকাকে বলেছেন, গাজায় সংঘাত শেষ হওয়ার পর ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেন তিনি। তথ্যসূত্র : বিবিসি, সিএনএন, রয়টার্স, আল-জাজিরা এক সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহু গাজায় হামাসের ধ্বংস এবং অবশিষ্ট ইসরাইলি বন্দিদের ফিরে আসার মাধ্যমে 'সম্পূর্ণ বিজয় অর্জন না হওয়া পর্যন্ত' হামলা চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রম্নতি দেন। আর এতে 'আরও অনেক মাস' সময় লাগতে পারে। গাজার হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, গত বছরের ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরাইলি আগ্রাসন শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ২৫ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এছাড়া হামলায় গাজার মোট জনসংখ্যার ৮৫ শতাংশ মানুষই বাস্তুচু্যত হয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে গাজায় ইসরাইলকে তার আক্রমণের লাগাম টানতে এবং যুদ্ধের টেকসই সমাপ্তির জন্য অর্থপূর্ণ আলোচনায় যুক্ত হওয়ার জন্য তীব্র চাপের মধ্যে রয়েছে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ। আমেরিকাসহ ইসরাইলের মিত্ররা সংকট সমাধানে 'দুই-রাষ্ট্র সমাধান' ফর্মুলার পুনরুজ্জীবনের আহ্বান জানিয়েছে। আর সেটি হলে একটি ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ও ইসরাইলি রাষ্ট্র পাশাপাশি প্রতিষ্ঠিত থাকবে। অনেকের আশা, বর্তমান সংকট তথা সহিংসতার অবিরাম চক্রের একমাত্র কার্যকর বিকল্প হিসেবে যুদ্ধরত পক্ষগুলোকে কূটনীতিতে ফিরে যেতে বাধ্য করতে পারে। কিন্তু নেতানিয়াহুর মন্তব্য থেকে দেখা যাচ্ছে, তার উদ্দেশ্য একেবারেই বিপরীত। বৃহস্পতিবারের সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, জর্ডান নদীর পশ্চিমের সব ভূমির ওপর ইসরাইলের নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে। মূলত এই অঞ্চলটি ভবিষ্যতে ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের ভূখন্ডের মধ্যে থাকবে। তিনি বলেন, 'এটি একটি প্রয়োজনীয় শর্ত এবং এটি (ফিলিস্তিনের) সার্বভৌমত্বের ধারণার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কী করতে হবে? আমি আমাদের আমেরিকান বন্ধুদের এই সত্যটা বলি এবং আমি আমাদের ওপর এমন একটি বাস্তবতা চাপিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টাও আটকে দিই যা ইসরাইলের নিরাপত্তার ক্ষতি করবে।' নেতানিয়াহু তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের বেশিরভাগ সময় ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করে কাটিয়েছেন। গত মাসে ইসরাইলি এই প্রধানমন্ত্রী গর্ব করেছেন, তিনি এর (ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র) প্রতিষ্ঠা রোধ করতে পেরে গর্বিত। তাই তার সর্বশেষ এই মন্তব্যে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কিন্তু ওয়াশিংটনের কূটনৈতিক চাপের বিষয়ে প্রকাশ্যে এই ধরনের মন্তব্য এবং বর্তমান সামরিক হামলা বজায় রাখার সংকল্প কার্যত ইসরাইলের পশ্চিমা মিত্রদের সঙ্গে দেশটির দূরত্ব আরও প্রসারিত করবে। নেতানিয়াহুর বক্তব্য প্রত্যাখ্যান আমেরিকার এদিকে, স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের বিরোধিতা করে নেতানিয়াহু যে বক্তব্য দিয়েছেন তা প্রত্যাখ্যান করেছে আমেরিকা। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের তিনজন শীর্ষ কর্মকর্তা এই ইসু্যতে আমেরিকার অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। আমেরিকার জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিলের মুখপাত্র ও বাইডেনের অন্যতম উপদেষ্টা জন কারবি শুক্রবার ওয়াশিংটনে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, 'আমরা অবশ্যই এই ইসু্যতে (নেতানিয়াহুর সঙ্গে) ভিন্নমত পোষণ করি।' বাইডেন প্রশাসনের অপর এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, 'যদি তার (নেতানিয়াহু) এই বক্তব্যকে চূড়ান্ত বলে ধরে নেই, তাহলে একদিকে গাজায় মানবিক সহায়তার প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাবে অন্যদিকে সেখানে আটক জিম্মিদের মুক্তিও আটকে যাবে যা কখনো কাম্য নয়। এছাড়া আরও অনেক বিষয় এর সঙ্গে যুক্ত রয়েছে। সেসব ইসু্যকে অগ্রাধিকার দিয়ে আমরা আমাদের কাজ চালিয়ে যাব। দ্বিরাষ্ট্র সমাধান নিয়ে আমেরিকার তৎপরতা থামবে না।' মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার শুক্রবার এক ব্রিফিংয়ে এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, 'গাজা উপত্যকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একটি দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জ আর উপত্যকাকে পুনর্গঠন করা স্বল্পমেয়াদি চ্যালেঞ্জ। স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা ছাড়া এই দুই চ্যালেঞ্জের কোনোটিই মোকাবিলা করা সম্ভব নয়।' হামাসকে সম্পূর্ণভাবে হারানো সম্ভব নয় ইসরাইলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার দপ্তরবিহীন মন্ত্রী ও প্রতিরক্ষা বাহিনীর সাবেক প্রধান গাদি ইজেনকোত বলেছেন, ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসকে সম্পূর্ণভাবে হারানো কোনোভাবেই সম্ভব নয়। হামাসকে পুরোপুরিভাবে পরাজিত করার যে আলোচনা চলছে সেটি কার্যত অবাস্তব। এছাড়া গাজায় যুদ্ধ পরিচালনার ধরন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সমালোচনাও করেছেন তিনি। হামাসের হাতে আটক জিম্মিদের নিয়েও কথা বলেছেন যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার এই সদস্য। তার মতে, নেতানিয়াহু জিম্মিদের মুক্ত করতে সামরিক চাপ প্রয়োগের কথা বললেও জিম্মিদের জীবিত ফিরে পেতে হলে হামাসের সঙ্গে চুক্তি করা ছাড়া কোনো উপায় নেই। তিনি বলেছেন, 'এটি বলতে হবে, সাহসিকতার সঙ্গে, চুক্তি ছাড়া জিম্মিদের আপাতত ছাড়ানো সম্ভব নয়। তাদের মুক্ত করার একমাত্র উপায় হলো হামাসের সঙ্গে চুক্তি করা।' গাদি ইজেনকাত আরও জানিয়েছেন, গত ১১ অক্টোবর লেবাননের সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুলস্নাহর বিরুদ্ধে বড় সামরিক অভিযান শুরুর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা। কিন্তু তিনি ও অপর মন্ত্রী বেনি গানজ এই সিদ্ধান্ত থেকে সবাইকে নিবৃত করেন। তিনি বলেছেন, ওইদিন মন্ত্রিসভার বৈঠকে তারা উপস্থিত থাকায় ইসরাইল 'মারাত্মক ভুল' থেকে বেঁচে গেছে।