ইয়েমেনের ক্ষমতাসীন হুতি গোষ্ঠীর সামরিক লক্ষ্যস্থলগুলোতে বিমান ও সাগর থেকে বৃহস্পতিবার হামলা চালিয়েছে আমেরিকা ও যুক্তরাজ্য। লোহিত সাগরে চলাচলরত জাহাজগুলোর ওপর হুতিদের হামলার জবাবে এসব আক্রমণ চালানো হয়েছে। প্রায় ১৬টি লক্ষ্যবস্তুতে চালানো হামলায় ছয় হুতি বিদ্রোহী নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। এই হামলা ওই অঞ্চলজুড়ে ফিলিস্তিনি ছিটমহল গাজায় চলা ইসরাইল-হামাস যুদ্ধের নাটকীয় এক প্রসারণ। এদিকে, হুতি যোদ্ধাদের পক্ষ থেকে এই 'অভিযানের' কথা নিশ্চিত করে হামলার জবাবে পাল্টা হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। ইয়েমেনে হুতিদের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী হুসেইন আল-ইজি বলেছেন, এই হামলার জন্য আমেরিকা ও যুক্তরাজ্যকে চরম মূল্য দিতে হবে। তথ্যসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, আল-জাজিরা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, গত নভেম্বর থেকে লোহিত সাগরে মার্কিন জাহাজে ইরান-সমর্থিত হুতিদের হামলার প্রতিক্রিয়া হিসেবে এই হামলা চালানো হয়েছে। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, প্রয়োজনে আরও হামলার নির্দেশ দিতে তিনি সংকোচ বোধ করবেন না। লোহিত সাগরে জাহাজগুলোতে একের পর এক হামলার পর 'প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপ' হিসেবে মার্কিন ও ব্রিটিশ বাহিনী ইয়েমেনে ইরান-সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে বিমান হামলা চালিয়েছে বলে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জানিয়েছেন। বাইডেন বলেছেন, এই মিশনে নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও বাহরাইন সমর্থন দিয়েছে।
আমেরিকার সরকারি কর্তৃপক্ষ বলছে, যুদ্ধজাহাজ থেকে টমাহক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছে এবং মার্কিন যুদ্ধবিমান থেকে রাজধানী সানা, হুদায়দাহ এবং হুতিদের লোহিত সাগরের শক্ত ঘাঁটির বন্দরগুলোসহ মোট ১৬টির বেশি স্থানে হামলা চালানো হয়েছে। সাইপ্রাসের আক্রোটিরি ঘাঁটি থেকে উড্ডয়ন করে আমেরিকার চারটি আরএএফ টাইফুন যুদ্ধবিমান দু'টি হুতি টার্গেট লক্ষ্য করে হামলা চালায়।
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন একটি বিবৃতিতে বলেছেন, 'হুতিদের সক্ষমতা ব্যাহত করতে এবং কমিয়ে আনতে' এই যৌথ সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এই পদক্ষেপের আওতায় হুতিদের পাইলটবিহীন ড্রোন, চালকবিহীন জাহাজ, স্থল-হামলায় ব্যবহৃত ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, উপকূলীয় রেডার এবং আকাশ প্রতিরক্ষা সক্ষমতা লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে।
এদিকে, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক জানিয়েছেন, হুতিদের সামরিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালাতে সহায়তা করেছে রয়্যাল এয়ার ফোর্সের যুদ্ধবিমান। তিনি বলেন, এই হামলা আত্মরক্ষার জন্য প্রয়োজন ছিল। তিনি বলেন, 'যুক্তরাজ্য সব সময় চলাচলে স্বাধীনতা এবং বাণিজ্যের অবাধ প্রবাহের পক্ষে অবস্থান নেবে। এ কারণে আমরা আমেরিকার সঙ্গে মিলে সীমিত, প্রয়োজনীয় এবং আত্মরক্ষায় যথাযথ মাত্রার পদক্ষেপ নিয়েছি।'
ইয়েমেনের রাজধানী সানা, লোহিত সাগরের হুদায়দাহ বন্দর, ধামার এবং উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় সাদায় অবস্থিত হুতি বিদ্রোহীদের শক্তিশালী ঘাঁটি লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি করেছে আমেরিকা ও যুক্তরাজ্য।
ইয়েমেনের অধিকাংশ অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণই হুতিদের হাতে। গাজায় ইসরাইল-হামাস সংঘাতে তারা দৃঢ়ভাবে হামাসকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। মূলত হামাস ও ইসরাইলের মধ্যকার এই যুদ্ধের ঢেউ পৌঁছেছে লোহিত সাগরে। গাজায় বোমা হামলা শুরুর পরপরই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে লোহিত সাগরে। হুতি বিদ্রোহীরা সেখানে বাণিজ্যিক জাহাজ লক্ষ্য করে হামলা শুরু করে।
এদিকে, হুতি আনসারুলস্নাহ আন্দোলনের রাজনৈতিক বু্যরোর সদস্য মোহাম্মাদ আল-বুখাতি সতর্ক করে বলেছেন, ওয়াশিংটন ও যুক্তরাজ্য যদি যুদ্ধের বিস্তার ঘটাতে চায়, তাহলে মধ্যপ্রাচ্যে তাদের ঘাঁটিগুলোতে হামলা চালানো হবে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, 'আলস্নাহর ইচ্ছায় এই যুদ্ধে ইয়েমেন বিজয়ী হবে। তারা ফিলিস্তিনে আমাদের ভাইদের সমর্থন জানাতে ব্যর্থ হয়েছে।' ইয়েমেনের এই হুতি নেতা বলেন, 'আমরা আলস্নাহর সন্তুষ্টি অর্জন করার লক্ষ্যে নিজেদের উৎসর্গ করেছি। আমরা আলস্নাহর প্রতি কৃতজ্ঞ যে, এখন আমরা আরব ও মুসলিম বিশ্বের শত্রম্নদের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়েছি।'
এদিকে, ইয়েমেনে হামলার বিষয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে রাশিয়া। একটি কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, এই হামলার পর রাশিয়া জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের কাছে একটি বার্তা পাঠিয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, তারা ইয়েমেনে আমেরিকা ও যুক্তরাজ্যের এই হামলাকে জাতিসংঘের সনদের লঙ্ঘন বলে মনে করে। শুক্রবার নিরাপত্তা পরিষদের একটি জরুরি অধিবেশন ডাকারও আহ্বান জানিয়েছে দেশটি।
সৌদি আরবও আমেরিকা ও তার মিত্র দেশগুলোকে হামলার ক্ষেত্রে সংযমী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে এবং 'উত্তেজনা না বাড়ানোর'ও আহ্বান জানিয়েছে। সৌদি আরবের পররাষ্ট্র দপ্তরের এক বিবৃতির উদ্ধৃতি দিয়ে সংবাদ মাধ্যমগুলো বলছে, 'গভীর উদ্বেগের' সঙ্গে রিয়াদ পুরো পরিস্থিতির ওপর নিবিড়ভাবে নজর রাখছে। রিয়াদ বলেছে, লোহিত সাগর অঞ্চলে নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ওপর জোর দেয় সৌদি আরব। এই জলপথের স্বাধীনতা একটি আন্তর্জাতিক দাবি।