ইসরাইলি আগ্রাসন

বিশ্বে আলোর ঝলকানি, অন্ধকারে গাজা

নতুন বছরের শুরুতেই ইসরাইলি শহরে রকেট হামলা হামাসের বিমান হামলায় নিহত ফিলিস্তিনের সাবেক ধর্মমন্ত্রী ইউসুফ সালামা

প্রকাশ | ০২ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
বিশ্বব্যাপী আতশবাজি, নাচ-গান আর আনন্দ-উৎসবের মধ্য দিয়ে সোমবার নতুন বছরের সূচনা হয়েছে। কিন্তু বিশ্বের বেশিরভাগ দেশই যখন নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ায় ব্যস্ত, তখন একটু নিরাপদ আশ্রয় আর খাবারের সন্ধানে গাজার এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন নিরীহ ফিলিস্তিনিরা। সবাই যখন উৎসবে মেতে উঠেছেন, তখন গাজার ঘরে-ঘরে শিশুদের কান্না, প্রিয়জন হারানোর শোকে স্বজনদের হাহাকার। একদিকে, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে আলোর ঝলকানি, অন্যদিকে জ্বালানির অভাবে পুরো গাজা এখন অন্ধকারে ঢাকা। এর মধ্যেই হামলা চালিয়েই যাচ্ছে ইসরাইল। অবশ্য, হামাসও পাল্টা হামলা চালাচ্ছে। নতুন বছরকে যখন স্বাগত জানাতে ইসরাইলিরা আনন্দ করছিল, তখন ভূখন্ডটির বিভিন্ন শহর লক্ষ্য করে ব্যাপক রকেট হামলা চালিয়েছে হামাস। তথ্যসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, এএফপি, আল-জাজিরা গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলের সীমান্তে প্রবেশ করে আকস্মিক হামলা চালায় ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। এরপরই গাজায় পাল্টা আক্রমণ চালায় ইসরাইলি বাহিনী। প্রায় তিন মাস ধরে ফিলিস্তিনের বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়ে সেখানকার আবাসিক স্থাপনা, মসজিদ, স্কুল এবং হাসপাতাল ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। জাতিসংঘ বলছে, গাজার কোথাও এখন নিরাপদ নয়। ফিলিস্তিনিরা জীবন বাঁচাতে যেখানেই আশ্রয় নিচ্ছে, সেখানেই দখলদার ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় নিরীহদের প্রাণহানি ঘটছে। গাজার সরকারি মিডিয়া অফিস বলছে, গত ৮৫ দিনে গাজায় ইসরাইলি হামলায় ২৮ হাজার ৮২২ জন নিহত হয়েছে বা নিখোঁজ রয়েছে। এর মধ্যে ৯ হাজারের বেশিই শিশু। ফিলিস্তিনের তরুণরা জানিয়েছে, ২০২৪ সালে তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যেতে চায়। তারা চায় ইসরাইলের সঙ্গে সংঘাত বন্ধ হোক। তবে ফিলিস্তিনিরা চাইলেও ইসরাইলের সঙ্গে চলমান এই লড়াই এখনই থামার কোনো লক্ষণ নেই। কারণ, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজায় লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছেন। শনিবার এক বিবৃতিতে তিনি এ বিষয়টি পরিষ্কার করেছেন। তিনি আভাস দিয়েছেন, ফিলিস্তিনি এই উপত্যকা এবং অন্যান্য স্থানে লড়াই আরও কয়েক মাস চলতে পারে। এক সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিয়ে নেতানিয়াহু বলেন, গাজার ক্ষমতাসীন হামাস সংগঠনের বিরুদ্ধে তাদের লড়াই ১৩ সপ্তাহে প্রবেশ করেছে। তবে ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের সঙ্গে ইসরাইলি বাহিনীর লড়াই শুধু ওই অঞ্চলেই নয়; বরং তা লেবানন, সিরিয়া, ইরাক ও ইয়েমেনকেও জড়িয়ে ফেলেছে। এখন এসব দেশের সঙ্গেও ইসরাইলের সংঘর্ষের খবর পাওয়া যাচ্ছে। নেতানিয়াহু বলেন, 'ফিলাডেলফি করিডোর এবং আরও পরিষ্কার করে বলতে গেলে গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্তের নিয়ন্ত্রণ আমাদের হাতে থাকা উচিত।' আর ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগারি বলেন, কয়েকজন সেনাকে, যারা বিশেষ করে সংরক্ষিত রয়েছেন, তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে মোতায়েন করা হবে। ২০২৪ সালে গাজায় সংঘাত চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা থেকে তিনি এমন মন্তব্য করেছেন। তিনি আরও বলেন, অতিরিক্ত মিশন থাকবে এবং বছরের বাকি সময় সংঘাত কেমন চলবে, এর জন্য আইডিএফকে অবশ্যই আগে থেকে পরিকল্পনা করতে হবে। চলতি সপ্তাহে বেশ কয়েকজন সেনা গাজা ছাড়বে, যেন আসন্ন অভিযানের আগে তারা শক্তি অর্জন করে নতুনভাবে নামতে পারে। নতুন বছরের শুরুতেই রকেট হামলা হামাসের নতুন বছরের শুরুতেই ইসরাইলি বিভিন্ন শহর লক্ষ্য করে ব্যাপক রকেট হামলা চালিয়েছে হামাস। ইসরাইলি মিডিয়া বলছে, নতুন বছরের শুরুতে দক্ষিণ ও মধ্য ইসরাইলে ২০টির বেশি রকেট ছুড়েছে হামাস। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম 'আল-জাজিরা'র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তেল আবিবের দিকে ২০টির বেশি রকেট ছোড়া হয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ১০টি ইসরাইলি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় প্রতিহত করা হয়। এ সময় ইসরাইলের বিভিন্ন শহরে সতর্ক সংকেত (সাইরেন) বাজানো হয়। হামাসের ছোড়া একটি রকেটের টুকরা ইসরাইলের স্থানীয় এক হাসপাতালে গিয়ে পড়লেও, এতে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। অপরদিকে, অবরুদ্ধ গাজায় ইসরাইলি সেনাদের হামলায় ফিলিস্তিনের সাবেক ধর্মমন্ত্রী ইউসুফ সালামা (৬৮) নিহত হয়েছেন। রোববার (৩১ ডিসেম্বর) ইউসুফ সালামার বাড়িতে ইসরাইলি বাহিনী বিমান হামলা চালায় বলে জানায় ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা 'ওয়াফা'। এ ছাড়া হামাস নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও বিয়ষটি নিশ্চিত করেছে। ওয়াফা বলছে, ইউসুফ সালামার বাড়ি গাজার মধ্যাঞ্চল আল-মাঘাজি শরণার্থী ক্যাম্পে। ফিলিস্তিনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসের ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন ইউসুফ। তিনি ২০০৫-২০০৬ সাল পর্যন্ত ধর্মমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া জেরুজালেমে অবস্থিত পবিত্র আল-আকসা মসজিদের ইমামও ছিলেন ইউসুফ সালামা। তবে ফিলিস্তিনের সাবেক এই মন্ত্রীর বাড়িতে হামলার ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেনি ইসরাইলি সেনাবাহিনী।