শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
ইরানের পরমাণু বিজ্ঞানী হত্যা

প্রতিশোধের প্রত্যয়ে দাফন সম্পন্ন ফাখরিজাদেহর

হ ২০ বছর ধরে তাকে খুনের চেষ্টা চালানো হয়েছিল হ এবার বিমান হামলায় নিহত ইরানি কমান্ডার
যাযাদি ডেস্ক
  ০২ ডিসেম্বর ২০২০, ০০:০০
জানাজার আগে মোহসেন ফাখরিজাদেহর কফিন বহন

প্রতিশোধ নেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে সোমবার ইরানের শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফাখরিজাদেহর (৬২) দাফন সম্পন্ন হয়েছে। করোনার কারণে রাষ্ট্রীয়ভাবে আয়োজিত তার জানাজা সীমিত পরিসরে করা হয়। সেখানে দেশটির জ্যেষ্ঠ রাজনীতিক ও সেনাবাহিনীর কর্মকর্তারা অংশ নেন। জাতীয় পতাকায় মোড়া পরমাণু বিজ্ঞানীর মৃতদেহ বহন করেন দেশটি সেনা সদস্যরা। সংবাদসূত্র : বিবিসি, আল-জাজিরা

দাফন শেষে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী আমির হাতামি বলেন, 'এই হত্যার প্রতিশোধ নেয়া হবে। আমাদের শত্রম্নরা জানে এবং একজন সৈনিক হিসেবে আমি তাদের উদ্দেশে বলেছি, কোনো অপরাধ, কোনো সন্ত্রাস বা যেকোনো দায়িত্বজ্ঞানহীন কর্মকান্ডের জবাব ইরানের জনগণ অবশ্যই দেবে।'

এর আগে ইরানের 'স্ট্র্যাটেজিক কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন্স'র প্রধান কামাল খাররাজি বলেছিলেন, 'ইরানি জাতির কাছ থেকে যারা ফাখরিজাদেহকে কেড়ে নিয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট এবং হিসাবি জবাব দেবে তেহরান এবং এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই। শহীদ এই বিজ্ঞানীর প্রদর্শিত পথ দেশ অনুসরণ করবে এবং তা করা হবে আরও দ্রম্নত ও আরও জোরেশোরে।'

উলেস্নখ্য, গত শুক্রবার ইরানের রাজধানী তেহরানের কাছে শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফাখরিজাদেহকে রিমোট কন্ট্রোলড (দূর নিয়ন্ত্রিত) এক ধরনের ইলেকট্রনিক অস্ত্র ব্যবহার করে হত্যা করা হয়। রোববার ফার্স নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফখরিজাদেহ গত শুক্রবার একটি বুলেটপ্রম্নফ গাড়িতে করে তার স্ত্রীকে নিয়ে কোথাও যাচ্ছিলেন। সে সময় নিরাপত্তা বাহিনীর তিনটি গাড়ি তাদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিল। তখন একটি গাড়িতে বুলেট লাগার শব্দ হয়। তিনি তখন কী ঘটেছে তা দেখার জন্য বের হন। তিনি গাড়ি থেকে বের হওয়ার পরপরই একটি রিমোট কন্ট্রোলড বন্দুক থেকে গুলি ছোড়া হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফাখরিজাদেহের গাড়ি থেকে ১৫০ মিটার দূর থেকে তাকে গুলি করা হয়েছিল। তাকে কমপক্ষে তিনবার গুলি করা হয়। তার দেহরক্ষীকেও গুলি করা হয়েছে। প্রায় তিন মিনিট ধরে তাদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে।

উলেস্নখ্য, ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ইরানের পাঁচজন খ্যাতনামা পরমাণু বিজ্ঞানীকে হত্যা করা হয়েছে। এসব হত্যাকান্ডের জন্য ইরান বরাবরই ইসরাইলকে দায়ী করে আসছে।

২০ বছর ধরে ফাখরিজাদেহকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে

এদিকে, ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সচিব আলি শামখানি বলেন, 'তার দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফাখরিজাদেহর ওপর সম্ভাব্য হামলা এবং এ রকম হামলার সম্ভাব্য স্থানগুলোর ব্যাপারে পূর্বাভাস দিয়েছিল।'

সোমবার রাজধানী তেহরানের অদূরে ফাখরিজাদেহর জানাজায় অংশ নেন তিনি। সে সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আলি শামখানি বলেন, 'শত্রম্নরা গত ২০ বছর ধরে ইরানের এই বিজ্ঞানীকে হত্যা করার চেষ্টা করে এসেছে।'

শামখানি বলেন, 'দুঃখজনকভাবে ফাখরিজাদেহর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় শৈথিল্য এসেছিল এবং শত্রম্নরা সেই সুযোগের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করেছে। তবে ফাখরিজাদেহর মতো বিজ্ঞানীর সংখ্যা ইরানে কম নয় বলেও জানান তিনি। একজন ফাখরিজাদেহকে হত্যা করলে শত শত ফখরিজাদেহর জন্ম হবে।' ইরানে সর্বোচ্চ এই নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেন, 'ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের শত্রম্নরা ফাখরিজাদেহর শিখিয়ে যাওয়া জ্ঞান ও প্রযুক্তি এ দেশের তরুণ বিজ্ঞানীদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিতে পারবে না।'

দেশটির অন্যতম পরমাণু বিজ্ঞানী এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের গবেষণা ও উদ্ভাবন বিষয়ক সংস্থার চেয়ারম্যান মোহসেন ফাখরিজাদেহ শুক্রবার সন্ধ্যায় সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হন। প্রথম থেকেই এই হত্যাকান্ডের জন্য ইরানের শীর্ষ নেতারা ইসরাইলকে দায়ী করে আসছেন। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুলস্নাহ আলি খামেনি এবং অন্য নেতারা দেশটির প্রধান পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফাখরিজাদেহর হত্যাকান্ডের প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন।

এবার বিমান হামলায় ইরানি কমান্ডার নিহত

অন্যদিকে, ইরানি সেনাবাহিনীর (রেভলু্যশনারি গার্ডস) এক কমান্ডার বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন। আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা মঙ্গলবার দেশটির নিরাপত্তা সূত্রকে উদ্ধৃত করে এই তথ্য জানিয়েছে। স্থানীয় সেনা ও মিলিশিয়া সূত্র ইরানি কমান্ডারের বিমান হামলায় নিহত হওয়ার তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছে।

ইরানের রাজধানী তেহরানের বাইরে গত শুক্রবার দেশটির শীর্ষ পরমাণু বিজ্ঞানী মোহসেন ফাখরিজাদেহকে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকান্ডের রেশ না কাটতেই ইরানের রেভলু্যশনারি গার্ডসের এক কমান্ডারের নিহত হওয়ার খবর এলো।

নিরাপত্তা ও স্থানীয় মিলিশিয়া কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রেভলু্যশনারি গার্ডসের ওই কমান্ডার ইরাক-সিরিয়া সীমান্তে গত শনি থেকে রোববারের মধ্যে নিহত হয়েছেন। তবে নিহত ওই কমান্ডারের নাম নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি স্থানীয় কর্মকর্তারা। তবে তারা বলেছেন, বিমান হামলায় রেভলু্যশনারি গার্ডসের এক কমান্ডার ছাড়াও তিনজন নিহত হয়েছেন। হামলার সময় তারা একটি গাড়ি করে যাচ্ছিলেন।

দুইজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা পৃথকভাবে বলেন, গাড়িটিতে অস্ত্রশস্ত্র ছিল। গাড়িটি সিরিয়ার ভূখন্ডে প্রবেশ করার পরই বিমান হামলা হয়। ওই দুই কর্মকর্তা আরও বলেন, ইরান-সমর্থিত ইরাকি প্যারামিলিটারির সদস্যরা লাশগুলো উদ্ধারে সহায়তা করেন। ঘটনাটি ঠিক কবে ঘটেছে, কীভাবে ঘটেছে, তার বিস্তারিত বিবরণ তারা দেননি।

এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ইরাকের রাজধানী বাগদাদের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত হন রেভলু্যশনারি গার্ডের অভিজাত কুদস ফোর্সের কমান্ডার মেজর জেনারেল কাশেম সোলাইমানি।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে