মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
উঠে এসেছে অব্যবস্থাপনার চিত্র

চীনের গোপন করোনা নথি ফাঁস

হ আক্রান্তের সংখ্যা অর্ধেকেরও কম দেখিয়েছিল কর্তৃপক্ষ হ বিশ্বে করোনা শনাক্ত ছয় কোটি ৩৫ লাখ পার
যাযাদি ডেস্ক
  ০২ ডিসেম্বর ২০২০, ০০:০০
গবেষণাগারে এক চীনা নাগরিক

উহানে করোনা মহামারির একেবারে শুরুর দিনগুলো চীন কীভাবে মোকাবিলা করেছিল, সে সংক্রান্ত নতুন একটি গোপন নথি সোমবার প্রকাশিত হয়েছে। 'দ্য উহান ফাইলস' শিরোনামের ১১৭ পৃষ্ঠার বিশদ ওই অভ্যন্তরীণ নথিটি হাতে পেয়েছে মার্কিন গণমাধ্যম। ফাঁস হওয়া ওই নথিটিতে উঠে এসেছে, করোনা ঢেউয়ের একেবারে প্রথম দিকে চীনা কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনার চিত্র। এতে বলা হয়েছে, প্রথম দিকে নতুন করে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লেগেছে। সংবাদসূত্র : সিএনএন, রয়টার্স

হুবেই প্রদেশের স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা কীভাবে ভাইরাসটি প্রথম শনাক্ত করেছিলেন, ধারাবাহিক তহবিল স্বল্পতা কীভাবে তদের কাজে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছিল, সংশ্লিষ্ট কর্মীদের কাজ ও পরীক্ষা সরঞ্জাম সংক্রান্ত নানা তথ্য উঠে এসেছে এই প্রতিবেদনে।

'কাউন্সিল অব ফরেন রিলেশন্স'র সিনিয়র ফেলো ইয়ানজং হুয়াং বলেন, 'এটি স্পষ্ট, তারা ভুল করেছে। এটি শুধু কোনো নভেল ভাইরাস নিয়ে কাজ করতে গিয়ে সংঘটিত ভুলই নয়; বরং তারা যেভাবে কাজ করেছে, সেখানে আমলাতান্ত্রিক এবং রাজনৈতিকভাবে অনুপ্রাণিত ত্রম্নটি ছিল।

উহানে কোভিড-১৯-এর প্রকোপ শুরু হওয়ার সময় কর্মকর্তারা কী জানতেন এবং তারা প্রকাশ্যে কী বলেছিলেন, এ দুইয়ের মধ্যকার নানা অসঙ্গতিও উঠে এসেছে হুবেইর প্রাদেশিক রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের এসব গোপন নথিতে।

ভান্ডারবিল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগের অধ্যাপক উইলিয়াম শাফনার বলেন, 'কর্মকর্তাদের ধারণা ছিল, যেকোনো মুহূর্তে মহামারিটির প্রভাব কমে যেতে পারে। ফলে তখন তারা মোট আক্রান্তের কোনো তালিকা তৈরি করেনি।'

?'অভ্যন্তরীণ নথি, দয়া করে গোপনীয়তা রক্ষা করুন' এমন মার্ক বা চিহ্নিত করা ওই নথিতে দেখা গেছে, চলতি বছরের ১০ ফেব্রম্নয়ারি স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা পাঁচ হাজার ৯১৮টি নতুন সংক্রমণের কথা জানিয়েছিলেন। অথচ কর্তৃপক্ষ তখন জনসম্মুখে মোট শনাক্তের সংখ্যা দেখিয়েছিল দুই হাজার ৪৭৮। অর্থাৎ, নিশ্চিতভাবে আক্রান্তের যে সংখ্যা, তার অর্ধেকেরও কম দেখিয়েছিল চীনা কর্তৃপক্ষ।

জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের 'চায়না স্টাডিজ প্রোগ্রাম'র পরিচালক অ্যান্ড্রু মের্থা বলেন, 'চীন বাইরের দুনিয়ায় তার ভাবমূর্তি রক্ষার ওপর জোর দিয়েছে। করোনা আক্রান্তদের সংখ্যা কম দেখানোর ক্ষেত্রে নিচের পর্যায়ের কর্মকর্তাদের উৎসাহ ছিল স্পষ্ট। অথবা ঊর্ধ্বতনদের তারা দেখাতে চাইতো, তারা ইচ্ছাকৃতভাবে কম রিপোর্ট করছে।'

ফেব্রম্নয়ারির মাঝামাঝি নাগাদ কর্মকর্তারা তাদের সিস্টেমের উন্নয়ন করেন। হুবেই-এর স্বাস্থ্য বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করা হয়; যারা এসবের জন্য দায়ী ছিল। ফাঁস হওয়া নথিতে বলা হয়, প্রাদুর্ভাবের প্রথম কয়েক মাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে গড়ে ২৩.২ দিন সময় লেগেছিল। ফলে সরকারের জন্য শনাক্তের নিয়মিত আপডেট না দিয়ে পুরনো সংখ্যা প্রচারের সুযোগ তৈরি হয়।

চীনের ফাঁস হওয়া নথি অনুযায়ী, দেশটির কর্মকর্তারা কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের মাত্রা বুঝতে পারেননি। এটি একটি আন্তর্জাতিক সংকটে রূপান্তরিত হবে; এটিও তারা অনুধাবন করতে পারেনি।

উলেস্নখ্য, গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস। উৎপত্তিস্থল চীনে এখন ভাইরাসটির প্রাদুর্ভাব কমে গেছে। তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশে এই ভাইরাসের প্রকোপ বাড়ছে। চীনের বাইরে করোনাভাইরাসের প্রকোপ ১৩ গুণ বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষাপটে গত ১১ মার্চ দুনিয়াজুড়ে মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডবিস্নউএইচও)।

বিশ্বে করোনা শনাক্তর সংখ্যা ছয়

কোটি ৩৫ লাখ ছাড়িয়েছে

এদিকে, বিশ্বজুড়ে করোনা শনাক্ত হওয়া রোগীর সংখ্যা ছয় কোটি ৩৫ লাখ ছাড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা 'ওয়ার্ল্ডোমিটার'র তথ্য মতে, বৈশ্বিক এই মহামারিতে মঙ্গলবার পর্যন্ত বিশ্বের ২১৯টি দেশ ও অঞ্চল আক্রান্ত হয়েছে। এ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ছয় কোটি ৩৫ লাখ ৮৯ হাজার। এর মধ্যে ১৪ লাখ ৭৪ হাজারের বেশি মৃতু্য হয়েছে। পাশাপাশি সুস্থ হয়ে উঠেছে চার কোটি ৩৯ লাখ ৮৪ হাজার।

সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা এক কোটি ৩৯ লাখ ১৯ হাজার ৮৭০। আক্রান্তের হিসাবে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারত। দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৯৪ লাখ ৬৩ হাজার ২৫৪। আর ব্রাজিলে আক্রান্তের সংখ্যা ৬৩ লাখ ৩৬ হাজার ২৭৮।

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

উপরে