যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাচন :আর বাকি ৯ দিন

ট্রাম্প আমলে বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তি তলানিতে

বাইডেনের পুরো পরিবারই দুর্নীতিবাজ : ট্রাম্প নির্বাচিত হলে বিনামূল্যে ভ্যাকসিনের প্রতিশ্রম্নতি দিলেন বাইডেন

প্রকাশ | ২৫ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প শুধু তার দেশেরই নেতা নন, সম্ভবত তিনি বিশ্বেরও সবচেয়ে ক্ষমতাধর নেতা। যুক্তরাষ্ট্রকে তিনি বারবার 'বিশ্বের সেরা দেশ' হিসেবে দাবি করে এলেও সম্প্রতি ১৩টি দেশে পরিচালিত এক জরিপে উঠে এসেছে, বহির্বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের ইতিবাচক প্রতিচ্ছবি তৈরিতে খুব বেশি ভূমিকা রাখতে পারেননি ট্রাম্প। উল্টো তার আমলে ভাবমূর্তি তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। 'পিউ রিসার্চ সেন্টার'র করা ওই জরিপে দেখা গেছে, গত ২০ বছরের তুলনায় যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স ও জার্মানির মতো ইউরোপীয় দেশগুলোর নাগরিকরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আগের চেয়ে অনেক কম ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন। সংবাদসূত্র : বিবিসি করোনাভাইরাস মহামারি নিয়ন্ত্রণও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিচ্ছবিতে প্রভাব ফেলেছে। মাত্র ১৫ শতাংশ বিদেশি নাগরিক মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র ঠিকঠাকভাবে ভাইরাস মোকাবিলায় পদক্ষেপ নিয়েছে। এছাড়া ক্ষমতায় এসেই ট্রাম্প বৈশ্বিক উষ্ণতা কমানোর লক্ষ্যে স্বাক্ষরিত প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরিয়ে নিয়েছেন। যা জলবায়ু জরুরি অবস্থা মোকাবিলায় বিশ্বকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিষেকের এক সপ্তাহের মধ্যেই নতুন অভিবাসী নীতি গ্রহণ করেছিলেন ট্রাম্প। সাতটি মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দেন তিনি। বর্তমানে ১৩টি দেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের কঠোর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর রয়েছে। মেক্সিকো সীমান্তে এরই মধ্যে ৩৭১ মাইলের দেয়াল নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে। এর ফলে পাসপোর্টবিহীন অভিবাসীরা যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে পারবেন না। সহিংসতাপূর্ণ দেশগুলো থেকে শরণার্থী গ্রহণের সংখ্যাতেও লাগাম টেনেছেন ট্রাম্প। এমনকি যাদের পরিবার এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছেন, তাদের স্বজনদের যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী হওয়ার নিয়মও কঠিন করা হয়েছে। যা বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তি খুইয়েছে বলেই উঠে এসেছে জরিপে। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে সর্বপ্রথম 'ফেক নিউজ' শব্দটি টুইটে ব্যবহার করেন ট্রাম্প। এরপর থেকে তিনি প্রায় দুই হাজার বার শব্দটি ব্যবহার করেছেন। এখন গুগলে 'ফেক নিউজ' লিখে সার্চ দিলেই প্রতিদিন ১১০ কোটির বেশি ফল আসে। থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, সৌদি আরব ও বাহরাইনের মতো দেশগুলো সংখ্যালঘুদের নির্যাতন, সাংবাদিক ও বিরোধীদের দমনের বিষয়টি চাপা দিতে এই শব্দটিকে ব্যবহার করেছে। ট্রাম্প সিরিয়া থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, 'বিশ্বের সেরা দেশ কখনোই বিরতিহীন যুদ্ধে লিপ্ত হয় না।' কিন্তু তিনি তেলের খনির সুরক্ষায় সিরিয়ায় ৫০০ সেনা রেখে দেওয়ারও ঘোষণা দেন। আফগানিস্তান ও ইরাক থেকে সেনা সরিয়ে আনার ঘোষণা দিলেও এখনো মার্কিন সেনা এসব স্থানে রয়েছে, যেমনটি আগে ছিল। তবে তার প্রশাসনের পররাষ্ট্রনীতির অন্যতম কূটনৈতিক বিজয় ২০১৮ সালে জেরুজালেমকে ইসরাইলের রাজধানী হিসেবে মার্কিন স্বীকৃতির পর চলতি বছর আমিরাত ও বাহরাইনের ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেওয়া। বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরে ট্রাম্পের মূল উদ্দেশ্যই ছিল যুক্তরাষ্ট্রকে লাভবান করা। ট্রাম্প ওবামা প্রশাসনের ট্রান্স-প্যাসিফিক বাণিজ্য চুক্তি বাতিল করেছেন। কানাডা ও মেক্সিকোর সঙ্গে নাফটা চুক্তি পুনঃসমঝোতা করেছেন। ইউরোপ ও চীনের সঙ্গে বাণিজ্য যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছেন। কিন্তু এখনো বিশ্ব বাণিজ্যে রপ্তানির চেয়ে বেশি আমদানি করে যুক্তরাষ্ট্র। ট্রাম্পের আমলে ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ বেধে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। ইরানের অন্যতম ক্ষমতাশালী জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যা করে বিশ্বকে চমকে দিয়েছিলেন ট্রাম্প। প্রতিশোধ নিতে ইরাকের দুটি মার্কিন ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায় ইরান। ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত ইরান পরমাণু চুক্তি থেকে সরে যাওয়ার পর দেশটির ওপর পুনরায় অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা চাপান ট্রাম্প। যা ইরানের অর্থনীতিতে মারাত্মক প্রভাব ফেলেছে। বাইডেনের পুরো পরিবারই দুর্নীতিবাজ : ট্রাম্প এদিকে, চূড়ান্ত বিতর্কের একদিন পর আবারও নির্বাচনী প্রচারে ফিরেছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ডেমোক্রেট প্রার্থী জো বাইডেন। শুক্রবার ফ্লোরিডায় এক জনসভায় দেওয়া বক্তব্যে বাইডেনের পুরো পরিবারকে দুর্নীতিবাজ আখ্যা দেন ট্রাম্প। অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় অধিক মৃতু্যর জন্য আবারও ট্রাম্পকে দায়ী করেন বাইডেন। শুক্রবার ফ্লোরিডায় বিশাল নির্বাচনী জনসভায় অংশ নেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কয়েক হাজার মানুষের সামনে দেওয়া বক্তব্যে প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেনকে বরাবরের মতোই তুলাধোনা করেন তিনি। বাইডেনের ছেলে হান্টারকে আক্রমণ করে ট্রাম্প বলেন, তার পুরো পরিবারই দুর্নীতিবাজ। বিনামূল্যে করোনার ভ্যাকসিনের প্রতিশ্রম্নতি বাইডেনের অন্যদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হলে যুক্তরাষ্ট্রের সব নাগরিককে বিনামূল্যে করোনার ভ্যাকসিন দেওয়ার প্রতিশ্রম্নতি দিয়েছেন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন। আগামী ৩ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এবারের নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো অংশ নিচ্ছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি নিজেও বলেছেন, করোনার ভ্যাকসিন সবার জন্য বিনামূল্যে হওয়া উচিত। যদিও প্রথম থেকেই করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ায় সমালোচনার মুখে রয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। শুক্রবার এক ঘোষণায় বাইডেন বলেন, তিনি যদি প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত হন, তবে সব মার্কিনির জন্য কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন বিনামূল্যে দেবেন। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় জাতীয় কৌশলের অংশ হিসেবে এই ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। করোনা পরিস্থিতি নিয়ে তিনি ট্রাম্পকে আক্রমণ করতেও ছাড়েননি। তার মতে, রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প করোনাভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করা ছেড়ে দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে করোনা মহামারি শুরুর পর থেকেই এ বিষয়টিকে তেমন একটা গুরুত্ব দেয়নি ট্রাম্প প্রশাসন।