ক্ষমতা হস্তান্তর ইসু্য

দলের উল্টোসুরে তোপে ট্রাম্প

ট্রাম্পের বক্তব্য অগ্রহণযোগ্য মন্তব্য শীর্ষ নেতাদের এ ধরনের কথায় মোটেও অবাক হইনি : পেলোসি

প্রকাশ | ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
রিপাবলিকান নেতা মিচ ম্যাককনেল
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনে হেরে গেলে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের নিশ্চয়তা না দিলেও তার দল রিপাবলিকান পার্টির নেতারা প্রেসিডেন্টের 'উল্টোসুরে' কথা বলেছেন। আর এ ঘটনায় নিজ দলের ভেতরই তোপের মুখে পড়েছেন ট্রাম্প। তার এ ধরনের বক্তব্য অগ্রহণযোগ্য বলে মন্তব্য করে এর বিরোধিতা করেছেন বেশ কয়েকজন শীর্ষ রিপাবলিকান নেতা। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, আল-জাজিরা সিনেটে রিপাবলিকানদের নেতা মিচ ম্যাককনেল ট্রাম্পের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বলেন, নির্বাচনে তাদের দল হেরে গেলে নিয়মতান্ত্রিকভাবেই ক্ষমতা হস্তান্তর করবে। বৃহস্পতিবার এক টুইটে ম্যাককনেল আরও বলেন, '৩ নভেম্বরের নির্বাচনে বিজয়ী অভিষিক্ত হবেন ২০ জানুয়ারি। সে সময় নিয়মতান্ত্রিকভাবেই ক্ষমতা হস্তান্তর হবে, যেমনটা ১৯৭২ সাল থেকে প্রতি চার বছর পরপর হয়ে আসছে।' ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ আরেক সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহামও প্রায় একই কথা বলেছেন। টেলিভিশনে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, 'আমি নিশ্চিত করছি, এটি শান্তিপূর্ণভাবেই হবে। রিপাবলিকানরা হেরে গেলে আমরা ফল মেনে নেব। সুপ্রিম কোর্ট যদি জো বাইডেনের পক্ষে রায় দেয়, আমি তা মেনে নেব।' এদিকে, রিপাবলিকান সিনেটর মিট রমনি বেশ কড়া ভাষায় সমালোচনা করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্টের। গত বুধবার তিনি বলেন, 'একজন প্রেসিডেন্ট সাংবিধানিক নিশ্চয়তাকে সম্মান করছেন না, এমন যেকোনো বিষয়ই অভাবনীয় এবং অগ্রহণযোগ্য।' শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রশ্নে আগেও মার্কিন প্রেসিডেন্টের উত্তর ছিল, কেবল ফল দেখেই তিনি বলতে পারবেন ক্ষমতা ছাড়বেন কিনা। বুধবার হোয়াইট হাউসের সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক ট্রাম্পকে আবারও প্রশ্ন করেন, শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়টি নিশ্চিত করছেন কিনা? জবাবে ট্রাম্প বলেন, তার বিশ্বাস মহামারির সময় ডাকযোগে বর্ধিত ভোট না হলে ক্ষমতা হস্তান্তরেরই কোনো দরকার হবে না। যুক্তরাষ্ট্রে সাপ্তাহিক কর্মদিবসে নির্বাচন হয় বলে অনেক মানুষ সশরীরে ভোট দিতে পারেন না। এমন সব মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার নিশ্চিত করতে ডাকযোগে ব্যালট পাঠানোর বিধান রয়েছে দেশটিতে। চলতি বছর করোনা সংকটের কারণে অসংখ্য ভোটার সেই সুযোগ গ্রহণ করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ডেমোক্রেটরা ডাকযোগে বা 'মেইল-ইন' ভোটের পক্ষে হলেও ট্রাম্প শুরু থেকেই এর বিরোধিতা করছেন। এমনকি ভোট জালিয়াতি হতে পারে বলে ডেমোক্রেটদের দিকে আঙুলও তুলেছেন তিনি। ডাকযোগের ব্যালট সরিয়ে নিলেই সব শান্তিপূর্ণভাবে হবে বলে মত ট্রাম্পের। বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, সেক্ষেত্রে ক্ষমতা হস্তান্তরেরই প্রয়োজনই হবে না। অর্থাৎ, তার পরাজিত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। তার এমন অনিশ্চিত বক্তব্যের পর থেকেই শুরু হয়েছে ব্যাপক সমালোচনা। ডাকভোটের কারণে ফল চূড়ান্ত হতে বিলম্ব হলে এ নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঝামেলা পাকাতে পারেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞ এবং ভোট কর্মকর্তারা ট্রাম্পের অভিযোগ খারিজ করে দিয়ে বলছেন, এই প্রক্রিয়ায় জালিয়াতি কিংবা ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। ট্রাম্প নিজেও এই প্রক্রিয়া ব্যবহার করেছেন। ২০১৬ সালের নির্বাচনের আগেও ডেমোক্রেট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের কাছে হেরে গেলে ফল মেনে না নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন ট্রাম্প। অন্যদিকে, ওয়াশিংটনের তৃতীয় সর্বোচ্চ ক্ষমতাধর রাজনীতিক মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি ট্রাম্পের ক্ষমতা হস্তান্তর ইসু্যতে বলেন, 'তার মুখ থেকে এ ধরনের কথায় মোটেও অবাক হননি তিনি।' এই ডেমোক্রেট নেতা বলেন, সরকারে যারা নিজেদের অবস্থান চিরস্থায়ী করতে চায়, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাদের প্রশংসা করেন। যেমন রাশিয়ার ভস্নাদিমির পুতিন, উত্তর কোরিয়ার কিম জং-উন, তুরস্কের রিসেপ তাইয়ে্যপ এরদোয়ান। তিনি বলেন, 'আমি তাকে (ট্রাম্প) মনে করিয়ে দিচ্ছি, আপনি উত্তর কোরিয়ায় নেই, তুরস্কে নেই, রাশিয়ায়ও নেই। সুতরাং আপনি শপথগ্রহণের মুহূর্তটাকে কেন সম্মান করার চেষ্টা করছেন না?' এদিকে, আগামী নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জো বাইডেন ক্ষমতা হস্তান্তর প্রশ্নে মার্কিন প্রেসিডেন্টের বক্তব্যকে অযৌক্তিক বলে মন্তব্য করেছেন। বাকি ডেমোক্রেটদেরও দাবি, 'হোয়াইট হাউসে অনুপ্রবেশকারীকে' বের করে দেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে মার্কিন প্রশাসনের হাতে। সর্বশেষ জনমত জরিপে দেখা গেছে, জাতীয়ভাবে ডেমোক্রেট প্রার্থী জো বাইডেন এখনো বেশ সুবিধাজনক অবস্থায় এগিয়ে আছেন। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ অঙ্গরাজ্যগুলোতেও দুই প্রার্থীর অবস্থান খুব কাছাকাছি। এর ফলে এবারের নির্বাচনের ফল খুব প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে এবং ডাকযোগে ভোট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করা হচ্ছে।