শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
সাধারণ অধিবেশন

যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাকযুদ্ধে উত্তপ্ত জাতিসংঘ

মহামারির জন্য জবাবদিহি চেয়েছেন ট্রাম্প, স্নায়ুযুদ্ধের ইচ্ছা নেই জিনপিংয়ের ২০৬০ সালের আগেই কার্বন নিরপেক্ষ হবে চীন :শি
যাযাদি ডেস্ক
  ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০
ডোনাল্ড ট্রাম্প শি জিনপিং

বিশ্বের দুই পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাকযুদ্ধে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে জাতিসংঘেও। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার জন্য চীনকে দায়ী করে বক্তব্য দেওয়ায় দেশ দুইটির মধ্যকার চলমান উত্তেজনা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনেও আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে। এই বৈশ্বিক মহামারির জন্য চীনের 'জবাবদিহি' চেয়েছেন ট্রাম্প। পক্ষান্তরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং তার ভাষণে বলেন, অন্য কোনো দেশের সঙ্গে 'স্নায়ুযুদ্ধে' যাওয়ার কোনো ইচ্ছা তার দেশের নেই। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, এএফপি, আল-জাজিরা

করোনাভাইরাসসহ বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে এই দুই বিশ্বশক্তির মধ্যে বিরোধ চলছে। মহামারির মধ্যে এ বছর নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন মূলত ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিশ্ব নেতারা আগে রেকর্ড করা বক্তব্য সরবরাহ করছেন। এর ফলে জাতিসংঘের বড় অধিবেশনগুলোয় ভূ-রাজনৈতিক যেসব চিত্র বা ঘটনা দেখা যায়, তা এবার অনুপস্থিত।

প্রতিটি সদস্য দেশের মাত্র একজন করে প্রতিনিধি অধিবেশনে তার দেশের প্রতিনিধিত্ব করায় কোনো একটি দেশের সঙ্গে অন্য একটি দেশের বাকযুদ্ধের সীমিত সুযোগ রয়েছে। তবে বরাবরের মতো অধিবেশনে ভাষণে ট্রাম্প নিজের অর্জনগুলো জোরের সঙ্গে তুলে ধরার পাশাপাশি প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছেন।

ট্রাম্প বলেন, 'অবশ্যই সেই জাতিকে জবাবদিহি করতে হবে, যারা বিশ্বে এই মহামারি ছড়িয়ে দিয়েছে। আর তারা হলো চীন।' চীনের বিরুদ্ধে এই অবস্থানের পক্ষে যুক্তি দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, 'ভাইরাসের শুরুর দিকের দিনগুলোতে চীন দেশের মধ্যে ভ্রমণ বন্ধ করে দিয়েছে, অপরদিকে চীন ত্যাগ এবং বিশ্বকে সংক্রমিত করতে ফ্লাইট চালু রেখেছে।'

করোনাভাইরাসে যুক্তরাষ্ট্রে মৃতের সংখ্যা এরই মধ্যে দুই লাখ ছাড়িয়েছে, যা বিশ্বে সর্বোচ্চ। এ ভাইরাস মোকাবিলা নিয়ে এমনিতেই চাপের মুখে রয়েছেন ট্রাম্প। এরই মধ্যে একাধিকবার তিনি বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে তথ্য গোপনের অভিযোগ তুলেছেন। ট্রাম্পের দাবি, চীন চাইলে ভাইরাসটির ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে পারত। যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্টের এমন বক্তব্য অস্বীকার করেছে বেইজিং।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের পরে বক্তব্য দিতে যাওয়া চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং 'সভ্যতার সংঘাতের' ঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক করেছেন। আলোচনা ও সমঝোতার ভিত্তিতে অন্যদের সঙ্গে মতভিন্নতা ও বিতর্কের অবসানের চেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার কথাও বলেছেন তিনি।

মঙ্গলবার প্রকাশিত হওয়া চীনা প্রেসিডেন্টের ভাষণের কিছু অংশ এরই মধ্যে বাইরে এসেছে, যাতে তাকে যুক্তরাষ্ট্রকে এক চোট নিতে দেখা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, 'কোনো দেশের অধিকার নেই বৈশ্বিক বিষয়াবলিকে প্রভাবিত করা, অন্যদের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ বা শুধু নিজের উন্নয়নের জন্য সুবিধা নেওয়ার।'

এদিকে, ইরানের কাছে সমরাস্ত্র বিক্রির ব্যাপারে চীন ও রাশিয়ার প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, এ দুই দেশের কোনো প্রতিষ্ঠান ইরানের কাছে অস্ত্র বিক্রি করলে তাদের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন এক্সামিনারের সঙ্গে আলাপকালে নিজ দেশের এমন অবস্থানের কথা জানান তিনি।

ইরানের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহালেরও দাবি জানান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। ইরানের পরমাণু সমঝোতার ব্যাপারে ইউরোপীয় দেশগুলোর নীতিরও সমালোচনা করেন পম্পেও। এ ইসু্যতে ওয়াশিংটনের পাশে না থাকায় দেশগুলোর সমালোচনা করেন তিনি।

নিরাপত্তা পরিষদের বেশিরভাগ সদস্য দেশের তীব্র বিরোধিতা সত্ত্বেও পম্পেও গত ১৯ সেপ্টেম্বর দাবি করেন, ইরানের বিরুদ্ধে জাতিসংঘের সব নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল হয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিব, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক প্রধান কর্মকর্তা, তিন ইউরোপীয় দেশ ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও জার্মানিসহ নিরাপত্তা পরিষদের প্রায় সব দেশ পম্পেওর ওই ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করেছে। তবে ট্রাম্প প্রশাসন ইরানের বিরুদ্ধে হোয়াইট হাউজের নেওয়া পদক্ষেপকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা না বলে জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা হিসেবে আখ্যায়িত করে আসছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের এমন নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ। তিনি বলেন, এটি আর নতুন কিছু নয়। যুক্তরাষ্ট্র তেহরানের ওপর সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগ করেছে। তারা চায় ইরানিরা তাদের কাছে নত হোক। তবে তাদের সে চেষ্টা সফল হয়নি।

২০৬০ সালের আগেই চীন কার্বন

নিরপেক্ষ হবে : শি জিনপিং

এদিকে, ২০৬০ সালের আগেই চীন কার্বন নিরপেক্ষ দেশ হওয়ার লক্ষ্য ঠিক করেছে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। ভিডিওলিংকের মাধ্যমে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে দেওয়া ভাষণে তিনি এ কথা জানান।

চীনা এই প্রেসিডেন্ট বলেন, তার দেশ ২০৩০ সালের আগেই কার্বন নিঃসরণের ক্ষেত্রে চূড়ায় পৌঁছানোর লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে; এরপর ২০৬০ সালের আগেই কার্বন নিরপেক্ষ দেশ হওয়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যাবে।

তার এ ঘোষণাকে জলবায়ু পরিবর্তনবিরোধী লড়াইয়ে উলেস্নখযোগ্য অগ্রগতি হিসেবে দেখা হচ্ছে বলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। চীন পৃথিবীর মধ্যে কার্বন ডাই অক্সাইডের সবচেয়ে বড় উৎস; দেশটি বিশ্বে কার্বন নিঃসরণের প্রায় ২৮ শতাংশের জন্যও দায়ী।

জলবায়ু পরিবর্তন রোধে কার্যকর উপায় বের করার আলোচনায় অচলাবস্থা এবং চলতি বছরের জলবায়ু সম্মেলন ২০২১ সালে চলে যাওয়ায় এবারের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রসঙ্গটি খুব একটা গুরুত্ব পাবে না বলে মনে করা হচ্ছিল।

কিন্তু চীনের প্রেসিডেন্টের আচমকা ঘোষণা সবাইকে বিস্মিত করেছে। জলবায়ু পরিবর্তন প্রসঙ্গে তার এ দৃঢ় বিবৃতি পরিবেশবাদী অনেক সংগঠনের প্রশংসাও কুড়িয়েছে। চীনা প্রেসিডেন্ট বলেন, 'আমরা ২০৩০ এর আগেই কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসরণের চূড়ায় যাওয়া এবং ২০৬০ সালের আগেই কার্বন নিরপেক্ষ দেশের স্বীকৃতি অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছি।'

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়
Error!: SQLSTATE[42000]: Syntax error or access violation: 1064 You have an error in your SQL syntax; check the manual that corresponds to your MariaDB server version for the right syntax to use near 'and id<113016 and publish = 1 order by id desc limit 3' at line 1